শনিবার, মে ৪, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়নির্বাচিত সরকারের শেষ দিন আজ

নির্বাচিত সরকারের শেষ দিন আজ

ষ্টাফরিপোর্টার  (বিডিসময়২৪ডটকম)

সংবিধান অনুযায়ী আজ ২৪ অক্টোবর নির্বাচিত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের শেষ দিন। দেশের পালে নির্বাচনী হাওয়া এ বছরের গোড়া থেকেই বইতে শুরু করলেও, শেষ কয়েক মাস যাবৎ এ হাওয়া গতি পেয়েছে বেশ।

আজ দিন পার হওয়া মাত্র শেষ হয়ে যাবে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের মেয়াদ। এদিকে নির্বাচন পূর্ব সরকার ব্যবস্থা কেমন হবে, কে হবেন সরকার প্রধান, তা নিয়ে বেশ কিছুদিন যাবৎ চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়েছে। তবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুসারে আরো দুই মেয়াদ পর্যন্ত নির্বাচন পরিচালনা করা যেতে পারত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। কিন্তু রায় হওয়া মাত্র সংসদে দুই তৃতীয়াংশের বেশি আসন পাওয়া মহাজোট সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে সংবিধান সংশোধন করেন। কিন্তু প্রধান বিরোধীদল বিএনপি এবং তার শরীক দলগুলো এ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়। ফলে রাজনীতিতে একধরনের টানাপোড়েন দেখা দেয়।

এরই ধারাবহিকতায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে দেশের শীর্ষ দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলোচনা ও সমঝতার জন্য আহ্বান করা হয়। জাতিসংঘ মহাসচিব থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ দুই নেত্রীর সাথে আনুষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত যোগাযোগ করে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানান। কিন্তু সরকারদল যেমন নিজ সিদ্ধান্তে অটল থেকে যায়, একইভাবে বিরোধীদল থেকে যায় নিজ অবস্থানে অনড়।

এভাবেই দেশে নির্বাচনী তরী কোনদিকে যাবে, তা নিয়ে যখন সবই কুয়াশাচ্ছন্ন, ঠিক এমন মুহূর্তে গত ১৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষন প্রদান করেন। তাঁর ভাষনে তিনি নিজ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। একই সাথে সর্বদলীয় সরকার ব্যবস্থার প্রস্তাব করে তিনি বিরোধীদলকে নাম প্রস্তাব এবং আলোচনায় বসার আহ্বান জানান, যা তাৎক্ষণিকভাবে বিএনপি ও তার শরীকদলগুলো প্রত্যাখ্যান করে।

এরপর গত ২০ অক্টোবর বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া একটি সংবাদ সম্মেলন করেন, যেখানে তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতা তুলে ধরার পাশাপাশি নিজ শাসনামলের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। এরপরই তিনি আলোচনার আহ্বান জানিয়ে একটি নির্বাচনপূর্ব সরকার ব্যবস্থার প্রস্তাব করেন, যেখানে ১৯৯৬ এবং ২০০১ এর নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টাদের মধ্য হতে ১০ জনকে উপদেষ্টা নিয়োগ পূর্বক একজন বিশিষ্ট নাগরিককে সরকারপ্রধান করার পরামর্শ দেন।

বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাবের পরপরই আলোচনায় চলে আসেন সেসময়ের উপদেষ্টারা। গণমাধ্যমের খোঁজে জানা যায়, সে সময়ের উপদেষ্টাদের মধ্যে কেউ কেউ বেঁচে নেই, কেউবা বয়স ও শারীরিক কারণে দায়িত্ব নিতে অপারগ আবার কারোর আগ্রহ নেই। শেষ পর্যন্ত প্রস্তাব অনুযায়ী ১০ জনকে পাওয়া না যাওয়ায় বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রস্তাবও বায়বীয় হয়ে ওঠে।

এদিকে খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রস্তাব সম্বলিত একখানা চিঠি এবং একটি ফোন কল রাজনীতির পালে উল্টো হাওয়া লাগায় এবং প্রচন্ড উৎকণ্ঠার মধ্যে কিছুটা আশার আলো জাগিয়ে তোলে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চিঠিখানা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফকে প্রেরণ করেন। সৈয়দ আশরাফ মিন্টো রোডস্থ নিজ বাসায় চিঠিখানা গ্রহণ করেন ২২ অক্টোবর সকাল সোয়া ১১টায়। অপরদিকে একইদিন সাড়ে ১১টায় মির্জা ফখরুল সংবাদ সম্মেলনে বসেন। সংবাদ সম্মেলন চলা অবস্থায় মির্জা ফখরুলকে সৈয়দ আশরাফ ফোন করলে রাজনৈতিক গুমোট আবহাওয়া বেশ লঘু হয়ে আসে।

দেশের জনগন যখন একটি পরিচ্ছন্ন নির্বাচনের আশায় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই গত ২৩ অক্টোবর সংসদে খালেদা জিয়ার নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থার প্রস্তাব উত্থাপন করার পর আলোচনার এক পর্যায়ে ওয়াক আউট করে বিএনপি। রাজনৈতিক পরিবেশ আবার গুমোট হয়ে ওঠে। সরকারদল যেমন নিজ অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে শক্ত অবস্থানে ফিরে যায়, বিরোধীদল ঠিক একইভাবে ফিরে যায় তার পূর্ব অবস্থানে।

অপরদিকে আগামী ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সংসদ অধিবেশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অন্যদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ২৫ অক্টোবর সমাবেশ করার পূর্ব সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে ১৮ দল। বিএনপি অভিযোগ করছে, সরকার অন্যায়ভাবে তার নেতাকর্মীদের ধরপাকড় করছে, হয়রানী করছে। সরকার বলছে, কোনো অন্যায় হচ্ছে না।

সরকারের শেষ দিন আজ। সংঘর্ষ এড়াতে রাজধানীসহ সারা দেশে নেওয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ও মোড়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি নজরে পড়ার মত। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও নেয়া হয়েছে বিশেষ সতর্কতা ব্যবস্থা। বন্দর নগরী চট্টগ্রামে আজ থেকে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে পুলিশ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ