ক্যারিয়ারের প্রথম নায়িকা সোনম কাপুর থেকে দীপিকা পাড়ুকোন, ক্যাটরিনা কাইফ, নার্গিস ফাকরি—প্রত্যেকেই রণবীর কাপুরের প্রেমের বাণে বিদ্ধ হয়েছেন! অন্তত ট্যাবলয়েড পত্রিকাগুলো তা-ই বলে। কিন্তু রণবীরকে প্রশ্ন করুন, তিনি নবাবি কায়দায় জবাব দেবেন, ‘এঁরা সবাই আমার বন্ধু; সমবণ্টনে যাঁদের ভালোবাসি।’ যদি তা-ই হয়, পৃথিবীতে কি এমন কোনো রাজকন্যা নেই, যাঁর জন্য রাজকাপুরের নাতি বলিউড রাজত্বও ছেড়ে দিতে পারেন? বিলম্ব না করে রণবীর ‘হ্যাঁ’ সূচক মাথা নাড়ান। বুকে খামচি দিয়ে বলেন, ‘একজন সম্রাজ্ঞীর জন্যই বুকটা “ধাক ধাক” করে। “এক দো তিন” করে বয়সের ঘড়ি যতই এগিয়েছে, তাঁকে ঘিরে আমার স্বপ্নের বিস্তারও চক্রবৃদ্ধি আকারে বেড়েছে। ইয়ারানা, সায়লাব, প্রেমগ্রন্থ ছবিগুলোতে বাবা (ঋষি কাপুর) তাঁর নায়ক ছিলেন। স্বপ্নকন্যার “দিদি তেরা দেভার দিওয়ানা” গান দেখে বাবাকে বলেছিলাম, বাবা, তোমার ছেলে দিওয়ানা হয়ে গেছে। আমার জীবনের এখন একটাই চাওয়া। নায়ক হতে হবে আর সেই মর্ত্যের অপ্সরীর সঙ্গে নাচতে হবে। বাবা কিছুদিন পর মাথায় হাত দিয়ে বললেন, “বেটা, তোর হূদয়ের রানি, স্বপ্নের মল্লিকা মাধুরী দীক্ষিত আজ তোর মতো লাখো কোটি যুবকের হূদয় খান খান করে ডাক্তার শ্রীরাম নেনের গলায় মালা পরিয়েছে।” বিশ্বাস করুন, খবরটা শুনে মুহূর্তেই মনটা ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল। সে এক “মার ডালা” অভিজ্ঞতা!’
অয়ন মুখার্জি পরিচালিত ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি ছবির ‘ঘাগড়া’ গানটি রেকর্ড হওয়ার পর প্রযোজক করণ জোহরকে রণবীরই পরামর্শ দেন এ গানের ‘মোহিনী’ চরিত্রে ছবির মূল নায়িকা দীপিকা পাড়ুকোন নয়, একজন মোহনীয় সুন্দরী অভিনেত্রী প্রয়োজন। মাধুরী দীক্ষিতের আগমন তার পরপরই। ছয় বছর ধরে বলিউডের পর্দায় মাধুরীর দেখা নেই। এ গানের মাধ্যমেই মাধুরী বলিউডে প্রত্যাবর্তন করতে রাজি হবেন, ভাবতে পারেননি কেউ। প্রীতমের সংগীত পরিচালনায়, ফারাহ খানের নৃত্য পরিচালনায় এই গানের শুটিং হয় সাড়ে চার দিন ধরে। মনীশ মালহোত্রার নকশা করা তিনটি ঘাগড়া পরেন মাধুরী। শোনা যায়, গানের একপর্যায়ে মাধুরীর গালে চুমু দেওয়ার জন্য রণবীর রীতিমতো অস্থির হয়ে ওঠেন। ফারাহ-অয়ন দুজনই রণবীরের প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দেন। দমে যাওয়ার পাত্র নন রাজকাপুরের নাতি। রীতিমতো ‘ঘুষ’ দিয়ে হাত করেন তাঁদের। তিন সেকেন্ডের একটি দৃশ্য, অথচ এই দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য চারবার শট দিতে হয় মাধুরী-রণবীরকে। স্বঘোষিত ‘অপরাধী’ রণবীর বলেন, ‘খোদা জানে, ভবিষ্যতে আর কখনো ম্যাডাম দীক্ষিতের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাব কি না। তাই ইচ্ছে করেই চারবার ভুল করে এক শট দিয়েছি।’ এক দো তিন, চানে কে খেত মে, হামকো আজ কাল হ্যায়, দিদি তেরা দেভার দিওয়ানা, চোলি কে পিছে, মেরা পিয়া ঘর আয়া, কে সারা সারা, মার ডালা-মাধুরীর জনপ্রিয় নাচের সংখ্যা অগণিত। এমন মানুষ রণবীরকে কাছে পেয়ে কোনো জ্ঞান দেননি? রণবীর বলেন, ‘মাধুরী এমন কোনো তারকা নন, যিনি নিজের কাজ ছেড়ে টিপস বিলিয়ে বেড়াবেন। শুটিংয়ের প্রতিটি দিন আমি আসার আগে তিনি সেটে উপস্থিত থাকতেন। শেষ দুই দিন লজ্জায় পড়ে আমি নির্দিষ্ট সময়ে সেটে আসি। কিন্তু তাতেও ম্যাডাম দীক্ষিতকে টেক্কা দিতে পারিনি। তিনি নাকি সব সময় শুটিং শুরু হওয়ার ১৫-২০ মিনিট আগে হাজির হন—এই তথ্য আমার জানা ছিল না।’
‘ঘাগড়া’ গানটিকে আইটেম গান মানতে নারাজ মাধুরী-রণবীর দুজনই। মাধুরী বলেন, ‘এটাকে স্পেশাল গান বলা যেতে পারে। কারণ, রণবীর শুধু একজন ভালো অভিনেতাই নন, সুপার হিরো, সুপার হিউম্যান বিং। তাঁর সঙ্গে কাজের সুযোগ পেয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমি গর্ববোধ করছি।’ এই মন্তব্য শুনে বিগলিত রণবীর বলেন, ‘মোহনীয় হাসি, জাদুকরি নাচকে পাশ কাটিয়ে মাধুরী সবার প্রিয় হয়ে ওঠেন তাঁর ক্যারিশমাটিক ব্যক্তিত্বের কারণে। তিনি যখন প্রডাকশনের কোনো ছেলেকে মিষ্টি হেসে বলেন, “এক কাপ চা দে না”, সঙ্গে সঙ্গে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে মাধুরীর সেবায় নিয়োজিত হতে। অনেকে হয়তো ভাবছেন, ৩১ মে ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি মুক্তি পাবে, এ কারণে আমি মাধুরী-বন্দনায় ব্যস্ত। এ রকম অভিযোগকারীদের বলব, আমার অতীতের সাক্ষাৎকারগুলো ঘেঁটে দেখুন। মাধুরী আমার প্রথম ভালোবাসা। আমার দেখা সবচেয়ে মোহনীয় নারী। ডাক্তার শ্রীরাম নেনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আমি জীবনভর মাধুরীকে ভালোবেসে যাব। প্রয়োজনে আমি এবং আমার হবু স্ত্রী মাধুরীর বাড়ির পাশে বসতি গড়ব। হলাম না-হয় পাগল, মাধুরীর জন্য “প্রেম প্রেম পাগলামি” করলে খুব বেশি কি অপরাধ হয়ে যাবে?’