বিশ্ববাসী এমন রুপ কখনো দেখেনি। পৃথিবীর সকল যুদ্ধকে হার মানিয়েছে এ যুদ্ধ। এ যেন এক অন্যরকম যুদ্ধ। অস্ত্র আর বুলেট ছাড়াও যে যুদ্ধ করতে হয় তা আজ দেখছে বিশ্ববাসী। এই যুদ্ধ কোন প্রতিপক্ষের সাথে নয়, নয় ক্ষমতার জন্য। এযুদ্ধ কেবলই একটি ভাইরাস থেকে বাঁচার যুদ্ধ।
সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত ক্লান্তিহীনভাবে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে চলতে চলতে কখন যে দুপুর গড়িয়ে রাত হয়ে আঁধার নেমে আসে তা বুঝতেই পারেনা। ভুলে যায় সঠিক সময়ে খাবারের কথা। অনেক সময়তো অভিযান চলাকালে পথ চলতে চলতে গাড়িতেই সেরে নিতে হয় দুপুর কিংবা রাতের খাবার। এভাবেই কাটছে প্রতিটি মুহুর্ত। সবশেষে বাসায় গিয়ে সারাদিনের ক্লান্তি শেষে একটু বিশ্রাম নেয়া। এরমাঝেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও খেয়াল রাখছে সারাক্ষণ। আর এই মহীয়সী নারীটি হলেন পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা জাহান উপমা।
জানা গেছে, নমুনা দিয়ে ১৭ দিনে রিপোর্ট না পাওয়ায় কাজে যোগ দেন নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা জাহান উপমা। তবে এর মধ্যে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন শেষ করেছেন তিনি। বাধ্য হয়ে যোগ দিয়েছেন কর্মস্থলে।
সুস্থ হয়ে ওঠার পর গত ২২ জুন নিজ কার্যালয়ে কাজে যোগ দেন তিনি । পরে ঐ দিন সন্ধ্যায় পটিয়া পোস্ট অফিস মোড়, আদালত রোড, সবুর রোড, ক্লাব রোড, স্টেশন রোড, ডাকবাংলো মোড়, মুন্সেফ বাজার এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। নানা অনিয়ম পেয়ে বিভিন্ন দোনানীকে করেছেন জরিমানা। স্বাস্হ্যবিধি মেনে চলতে মানুষকে করেছেন সতর্ক।
এলাকাবাসীরা জানান, প্রতিদিন পটিয়া পৌরসভা ও উপজেলার প্রত্যক অলি গলি চায়ের দোকান থেকে শুরু করে হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট সর্বক্ষণ পাহারাদারের মতো করে ঘুরে ঘুরে পটিয়াবাসীর নিরাপত্তায় নিজেদের জীবনের শ্রেষ্ঠ মূহুর্তগুলি অতিবাহিত করছেন।
ইউএনওর এমন তৎপর কর্মকান্ডে খুশি পটিয়ার জনসাধারণ। সর্বত্র প্রশংসিত হচ্ছেন সকলের কাছে। ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুকে বিভিন্ন ব্যক্তি প্রশংসা করে পোষ্ট দিয়েছেন। তারা তাদের পোষ্টের মাধ্যমে বিরামহীন পথচলার এই নারীকে তার কর্মের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
ইউএনও ফারহানা জাহান উপমা বলেন, ‘নমুনা দিয়েছি ১৭ দিন আগে, রিপোর্ট আসেনি। বাসায় বসে থেকে কী করব? শারীরিকভাবে বেশ সুস্থ বোধ করছি। ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন ছিলাম। রিপোর্ট না আসায় গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে কাজে নেমেছি।
তিনি আরো বলেন, মানুষ যে হারে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে হাট-বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অভিযান না করলে পরিণাম ভয়াবহ হবে। তাই কখন রিপোর্ট আসবে এটা ভাবার সময় নেই। মানুষের জন্য কাজ করি, কাজ করা আমার কর্তব্য।
ইউএনও আরোও বলেন, ‘আমার শরীরে কোনো উপসর্গ নেই। পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আমাকে।
উল্লেখ্য গত ৭ জুন ইউএনও’র গাড়িচালক দেলোয়ার হোসেন ও বাসার মালি করোনায় আক্রান্ত হন। পরদিন ৮ জুন ইউএনও ফারহানা জাহান উপমাসহ তার পরিবার ও কার্যালয়ের ১০ জন নমুনা দেন। তারা কেউ এখনো করোনা পরীক্ষার ফলাফল জানতে পারেননি। শুধু ইউএনও নয়, গত ৭ ও ৮ জুন পটিয়া থেকে সংগ্রহ করা ৫৫ জনের করোনার ফলাফল এখনো জানায়নি।
পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ জাবেদ জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে জট লেগে যাওয়ায় নমুনাগুলো পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এখনো ফলাফল আসেনি।