মঙ্গলবার, মে ৭, ২০২৪
প্রচ্ছদইন্টারভিউজাতীয় পার্টি বিএনপির বিকল্প হতে চায়

জাতীয় পার্টি বিএনপির বিকল্প হতে চায়

ডেস্ক রিপোর্ট (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

গত ৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় পার্টি কার্যালয়ে জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশন আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে এরশাদ বলেছেন, ‘আমরা আর তৃতীয় শক্তি নই। এখন আমরা প্রথম শক্তি। ৯ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলাম। উই আর নট থার্ড পার্টি, উই আর ফার্স্ট পার্টি’।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরশাদের এই বক্তব্য ও বর্তমানে তার নানা কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে তিনি রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করে বিএনপির বিকল্প হিসেবে জাতীয় পার্টিকে দাঁড় করাতে চাইছে।
রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১০ সালের আগস্ট মাস থেকে। এর বিরুদ্ধে শুরু থেকেই তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি প্রতিবাদ করে এলেও বিএনপি এত দিন নীরব ছিল। এরশাদও কিছু বলেননি। জাতীয় কমিটির ঢাকা থেকে রামপাল পর্যন্ত লংমার্চ কর্মসূচি শেষ হওয়ার পরদিন প্রথম প্রতিক্রিয়া জানায় বিএনপি । এর এক ঘণ্টা না যেতেই যেতে একই প্রতিক্রিয়া জানান এরশাদও।
অবশ্য এরশাদের গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক সচিব সুনীল শুভ রায় দাবি করেন, খালেদা জিয়ার রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতার সঙ্গে এরশাদের বিবৃতির কোনো সম্পর্ক নেই।
জাপার রাজনীতির একাধিক পর্যবেক্ষক জানান, দেশের চলমান নানা রাজনৈতিক ঘটনা এবং বিভিন্ন জাতীয় বিষয়ে এরশাদ এ ধরনের কৌশল নিয়েছেন অনেক আগে থেকেই। এর শুরু হয় ভারতের টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিএনপির কঠোর অবস্থানের পর থেকে। ওই সময় এরশাদ ভারত সফর করে দেশে ফিরে টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে সিলেটের জকিগঞ্জ অভিমুখে লংমার্চ করেন। এরপর তিস্তা ও ফেনী নদী অভিমুখেও লংমার্চ করেন।
একইভাবে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগ করার বিরোধিতা, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি, পুঁজিবাজার ও হল-মার্ক কেলেঙ্কারির সমালোচনা এবং হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান বা প্রতিক্রিয়া প্রকাশের পর পর এরশাদও একই ভাষায়, ক্ষেত্রবিশেষে আরও কঠোর সমালোচনায় মুখর হয়েছেন।
জানতে চাইলে জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, জাপার নিজস্ব সত্ত্বা ও রাজনৈতিক ভিন্নতা আছে। কাউকে অনুসরণ করে নয়, কারো বিকল্পও নয়, দেশ ও জনগণের স্বার্থে যখন যা বলা উচিত, এরশাদ তা-ই বলেছেন। তিনি দাবি করেন, শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা ও হেফাজতে ইসলামকে সমর্থন এবং বিশ্বজিৎ হত্যার বিরুদ্ধে এরশাদই প্রথম কথা বলেছেন।
বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি দেশের জনপ্রিয় একটি দল। এই্ দলের বিকল্প কেউ হতে পারে না। কোনো দলই কোনো দলের বিকল্প নয়। ভিন্ন আদর্শ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কাজ করে।
অবশ্য জাপা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এরশাদের এই কৌশলের পেছনে নীতি-আদর্শের চেয়ে ‘রাজনৈতিক মতলব’ হাসিলই প্রধান। তিনি সরকার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এই বলে বুঝ দিচ্ছেন যে তাঁর মূল লক্ষ্য, উল্লিখিত বিষয়গুলোতে সরকারের বিরুদ্ধে সৃষ্ট জনমত যেন একচেটিয়া বিএনপির দিকে চলে না যায়। তাতে ভাগ বসানোর চেষ্টা করছেন তিনি। আর দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনে বিএনপি না গেলে তাতে ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক জাপা অংশ নেবে বলে রাজনৈতিক অঙ্গণে আলোচনা রয়েছে। এ জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ের সায় নিয়ে দুই বছর আগে থেকেই এরশাদ সরকারবিরোধী বক্তব্য দেওয়া শুরু করেছেন। যাতে ‘গৃহপালিত বিরোধী দলের’ তকমা গায়ে না পড়ে, সে জন্য আগেভাগে রাজনীতির মাঠে একটা অবস্থান তৈরি করতে চান।
অপর দিকে এরশাদ বিএনপির সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন বলে জানা গেছে। শেষ মুহূর্তে নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে কোনো সমঝোতা হলে কিংবা বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তাদের কাছ থেকেও সুবিধা গ্রহণের পথ খোলা রাখছেন তিনি। এ কারণে বিএনপিকে খুশি রাখতে একতরফা নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশ নেবে না বলে এরশাদ সভা-সমাবেশে বলে বেড়াচ্ছেন। তবে এরশাদ শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যাবেন, সেটা নিয়ে তাঁর দলের অন্য নেতারাও নিশ্চিত নন।
দায়িত্বশীল একাধিক নেতা মনে করেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী একটি দেশের প্রভাব এরশাদের ওপর খুব ক্রিয়াশীল। তবে আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে এরশাদের আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটেই থাকার সম্ভাবনা বেশি।
জাপার একাধিক সূত্র জানায়, প্রায় দুই বছর ধরে এরশাদ একাধারে সরকারের সমালোচনা, মহাজোট ছাড়ার হুমকি ও আগামী নির্বাচনে একা ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে এলেও মহাজোট ছাড়েননি। বরং এরই মধ্যে সরকারের কাছ থেকে ব্যাংক ও টেলিভিশনের লাইসেন্সসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক সুবিধা নিয়েছেন। জানতে চাইলে এটাকে এরশাদের রাজনৈতিক কৌশল বলে মন্তব্য করেছেন জাপার মহাসচিব।
গত ৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় পার্টি কার্যালয়ে জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশন আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে এরশাদ বেশ জোরের সঙ্গে উচ্চারণ করেছেন, দেশে এখন অশান্তি চলছে। ঘরে থাকলে খুন। বাইরে থাকলে গুম। দেশের মানুষ শান্তি চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামনের নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না।
সরকারি দলের আসন অনেক কমে যাবে। অতীত দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে বিএনপিকেও মানুষ আগের মতো ভোট দেবে না। সরকার গঠনের জন্য জাতীয় পার্টির সুযোগ এসেছে। এই সুযোগকে অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা নেই কিন্তু জাতীয় পার্টির মধ্যে তা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, কোনো দলই দেশের কথা ভাবে না। দুটি দলই কেবল ‘তালগাছ’ চায়। একটি দল ক্ষমতায় গেলে সবকিছু বঙ্গবন্ধুর নামে আর অন্য দলটি জিয়াউর রহমানের নামে করতে চায়।
আরও পড়ুন

সর্বশেষ