সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
প্রচ্ছদইন্টারভিউশাহ আমানত বিমানবন্দর : স্বর্ণ চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য

শাহ আমানত বিমানবন্দর : স্বর্ণ চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য

চট্টগ্রাম অফিস (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

স্বর্ণ চোরাচালানের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। গত দু’মাসে এ বিমান বন্দর দিয়ে পাচারের সময় ২৭ কেজি ওজনের প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের স্বর্ণের ৫ টি চালান জব্দ করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে ।

শুল্ক গোয়েন্দা ও কাস্টমস কর্মকর্তারা স্বর্ণ চোরাচালান রোধে সক্রিয় হলেও নানা কৌশলে আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্র স্বর্ণ নিয়ে আসছেই। কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না তাদের।

অভিযোগ রয়েছে, যে পরিমাণ স্বর্ণ আটক হচ্ছে, তার চেয়ে আরো অনেকগুন বেশি স্বর্ণ বিমান বন্দরের নিরাপত্তার ফাঁক গলে পাচার করছে চোরাচালানীরা। অবৈধ স্বর্ণের বেশিরভাগ চালানই আসছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে।

গত ১ অক্টোবর চট্টগ্রাম শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে দুবাই থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট থেকে ১৪টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করেকাস্টমস কর্তৃপক্ষ। একটি যাত্রী আসনের নিচ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় এসব বার উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। আটক স্বর্ণের ওজন ১৪০ তোলা।

এ ঘটনার এক সপ্তাহ আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর আটটি সোনার বারসহ আটক করা হয় বিশুবর্ধন (৪০) নামে এক যাত্রীকে। প্রতিটি বারের ওজন ১০ তোলা হিসেবে তার কাছে থাকা স্বর্ণের পরিমাণ ৮০ তোলা। শারজাহ থেকে আসা এয়ার এরাবিয়া-৫২৩ নামক ফ্লাইটযোগে বিমান বন্দরে নামার পর তল্লাশি চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।

এর আগে ১ সেপ্টেম্বর সকালে ৬০ লাখ টাকার সোনার বার ও চেইনসহ আবদুল মতিন (৪৭) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

মতিন এয়ার এরাবিয়ার একটি ফ্লাইটযোগে শারজাহ থেকে চট্টগ্রাম এলে বিমান বন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তারা সন্দেহবশত তার দেহ তল্লাশি চালায়। তার অন্তর্বাসের ভিতর প্রতিটি ১০ তোলা ওজনের চারটি সোনার বার ও হাটুর  সাথে কাপড়ে মোড়ানো তিন ধরনের ৬৯টি স্বর্ণের চেইন পাওয়া যায়। যার ওজন প্রায় ১২০ তোলা।

গত ৪ আগস্ট চট্টগ্রাম বিমান বন্দর থেকে আড়াই কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ৭ কেজি ওজনের স্বর্ণের বারসহ ইকবাল ও রাশেদুল নামক মধ্যপ্রাচ্য ফেরত দুই যাত্রীকে আটক করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা স্বর্ণের মধ্যে ছিলো ৫৩টি বার যার প্রতিটির ওজন ১০ তোলা।

অপরদিকে গত ২৩ জুলাই ৭ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ১৮ কেজি ওজনের স্বর্ণের বারসহ মীর মো. শাহনেওয়াজ মুর্শেদ নামের মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা অপর এক যাত্রীকে আটক করে বিমান বন্দর কাস্টমস। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তিনি চট্টগ্রাম আসেন।

বিমান বন্দরে কর্মরত শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের তথ্য অনুযায়ি, নানা কৌশলে চোরাচালানীরা অবৈধভাবে স্বর্ণ নিয়ে আসছে। কেউ ব্রিফকেসে করে, কেউ শরীরের সাথে বিশেষ কায়দায় টেপ দিয়ে মুড়িয়ে স্বর্ণ আনছে। আবার কেউ স্ক্যানার মেশিনকে ফাঁকি দিতে কার্বন পেপার দিয়ে স্বর্ণ প্যাকেট করে নেয়।

মধ্যপ্রাচ্য থেকে চট্টগ্রাম হয়ে যেসব ফ্লাইট ঢাকায় যায় সাধারণত ওইসব ফ্লাইটে করেই স্বর্ণ চোরাচালান হচ্ছে। এসব ফ্লাইটের সুবিধা হচ্ছে চট্টগ্রাম বিমান বন্দর থেকে যেসব লোকাল যাত্রী উঠে, তাদের কাছে চোরাচালানীরা ফ্লাইটের ভেতরেই স্বর্ণ হাতবদল করে দেয়। অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীদের তেমন গুরুত্ব দিয়ে চেক করা হয় না। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীরা স্বর্ণের চালান নিয়ে অনেকটা নিরাপদেই নেমে যায়।

বিমান বন্দর কাস্টমসের সহকারি কমিশনার সুশান্ত পাল জানান, ঘোষণা দিয়ে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ তৈরি গয়না যাত্রীরা নিয়ে আসতে পারেন। কিন্তু কোন অবস্থাতেই বিস্কুট বা বার আকারে স্বর্ণ আনার নিয়ম নেই। এভাবে স্বর্ণ আনা সম্পূর্ণ বেআইনী।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মধ্যপ্রচ্যের স্বর্ণের কদর বিশ্বব্যাপী। উন্নত মানের এসব স্বর্ণের দামও বেশি। মধ্যপ্রাচ্যের বাজারের সাথে বাংলাদেশের বাজারে প্রতি ভরি স্বর্ণের দামে দু’চার হাজার টাকা কম বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া নিখাদ এসব স্বর্ণে খাদ মিশিয়েও লাভের অংক বাড়ানো যায়। আর এভাবে কোটি কোটি টাকার মুনাফার আশায় সংঘবদ্ধ চক্রটি দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে স্বর্ণ চোরাচালান করছে। দু’চারটি চালান ধরা পড়লেও পরবর্তী চালানে তারা তা পুষিয়ে নিচ্ছে।

বিমান বন্দরের নিরাপত্তা ডিঙ্গিয়ে প্রায়ই স্বর্ণের চালান বের করে নিচ্ছে চোরচালানীরা। চট্টগ্রাম বিমান বন্দর দিয়ে খালাস হওয়া এধরনের একটি চালান নিয়ে চট্টগ্রাম পুলিশে তোলপাড় চলছে।

১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যের ২৪০ ভরি স্বর্ণের বিস্কুট পাচারের সময় গত ১২ সেপ্টেম্বর নগরীর ওয়াসা মোড় এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে ছিনতাই করে কয়েকজন দুর্বৃত্ত। এ নিয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের ও একজনকে গ্রেফতার করেছে। তবে ছিনতাই হওয়া স্বর্ণ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ