সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনচট্টগ্রামে গ্যাস উৎপাদনে দেখা দিয়েছে বিপর্যয়

চট্টগ্রামে গ্যাস উৎপাদনে দেখা দিয়েছে বিপর্যয়

চট্টগ্রাম অফিস (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

চট্টগ্রামে গ্যাস উৎপাদনে দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। এ অঞ্চলের প্রধান গ্যাস ক্ষেত্র সাঙ্গুর  উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ এবং অপর গ্যাস ক্ষেত্র সেমুতাংয়ের উৎপাদন প্রত্যাশার চাইতে কম হওয়ায় চট্টগ্রামের গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি জাতীয় গ্রিডের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা গ্যাস সংকট হয়ে উঠেছে আরো প্রকট ।  গ্যাসের মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ায় গত ১ অক্টোবর থেকে সাঙ্গুর উৎপাদন আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

১৯৯৭ সালে উৎপাদন শুরুর পর সর্বোচ্চ দৈনিক ১৭০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাসের যোগান দিয়েছে সাগর বক্ষের গ্যাস ক্ষেত্র সাঙ্গু। ২০০৭ সাল থেকে এর উৎপাদন কমতে শুরু করলে সাঙ্গুর ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠা এ অঞ্চলের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বিপাকে পড়ে। এগুলোতে কমতে থাকে গ্যাস সরবরাহ।

এর মধ্যে উৎপাদন বাড়াতে ২০১১ সালে কোয়ার্ন এনার্জি থেকে সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্র কিনে বঙ্গোপসাগরে তিনটি নতুন কুপ খনন করে অষ্ট্রেলিয়ান কোম্পানি স্যান্তোস। কিন্তু একটি কূপ থেকে মাত্র ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস তুলতে সক্ষম হয় তারা। এটির মজুদও পুরোপুরি শেষ হয়ে যাওয়ায় ১ অক্টোবর থেকে গ্যাসক্ষেত্রটি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

খাগড়াছড়ির সেমুতাং গ্যাস গ্যাস ক্ষেত্র থেকে ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে বলে আশা করা হলেও এখন পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৭ মিলিয়ন ঘনফুট। চট্টগ্রামের স্থানীয় উৎপাদন বলতে এই ৭ মিলিয়ন গ্যাসই এখন মিলছে সাকুল্যে।

এ অবস্থায় জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া গ্যাসে কোনরকম জোড়াতালি দিয়ে সরবরাহ চালিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তবে গ্রিড থেকে গ্যাসের সরবরাহ আরো কমে গেলে তাদের পড়তে হবে বেকায়দায়।

গ্যাসের অভাবে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রামের সিএনজি স্টেশন,  ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট ও স্টিল রি-রোলিং মিলসহ ২০০ শিল্প প্রতিষ্ঠানে চলছে ৬ থেকে ১২ ঘন্টার হলিডে স্ট্যাগারিং। এছাড়া বন্ধ রয়েছে একটি সার কারখানা ও দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এ অবস্থায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিল্প উৎপাদন। মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন নতুন বিনিয়োগকারীরা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে গ্যাস না থাকায় বাসাবাড়িতে চুলাও জ্বলছেনা ঠিকমতো।

কেজিডিসিএল সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট, যার প্রায় পুরোটাই আসছে জাতীয় গ্রিড থেকে।

কেজিডিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামিল আহমেদ আলিম বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চল মূলত সাঙ্গুর উপর নির্ভরশীল ছিল। সাঙ্গুর উৎপাদন শূন্য হয়ে পড়ায় আমরা জাতীয় গ্রিডের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি।

তবে সেমুতাং-এ আরো একটি কূপ খনন এবং আশুগঞ্জের কমপ্রেসারটি চালু হলে  ডিসেম্বরের মধ্যে গ্যাস সংকট কিছুটা কাটবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স-এর সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘শিল্প কারখানাগুলোতে গ্যাস নেই অনেকদিন ধরে, ইদার্নিং বাসা- বাড়িতেও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম যেহেতু শিল্পাঞ্চল তাই এখানে গ্যাস দেয়াটা খুবই জরুরি। কিন্তু ঘটছে এর উল্টোটি। গত কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ ক্রমে কমিয়ে দেয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে গত কয়েকবছরে অনেকবারই সরকারের ওপর মহলে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। যখন চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা ছিলো ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট তখন যে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা হতো, এখন চাহিদা বাড়ার পর তার চাইতে সরবরাহ আরো কমিয়ে দেয়া হয়েছে।’

ভয়াবহ গ্যাস সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিলো চট্টগ্রামের দুটি বৃহৎ সার  কারখানা কাফকো ও সিইউএফল। কিছুদিন আগে কাফকোতে গ্যাস সরবরাহ শুরু করা হলেও এখনো গ্যাসের অভাবে বন্ধ রয়েছে সিইউএফএল।

সার উৎপাদন ছাড়াও গ্যাসের অভাবে বিদ্যুত উৎপাদনে দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। চট্টগ্রামের গ্যাস চালিত তিনটি বিদ্যুত কেন্দ্রের মধ্যে গ্যাস সংকটে বন্ধ রয়েছে রাউজান তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র ও শিকলবাহা পিকিং প্লান্ট। রাউজানের উৎপাদন ক্ষমতা ৩৬০ আর পিকিং প্লান্টের ১৫০ মেগাওয়াট। ফলে প্রতিদিন এ দুটি কেন্দ্র থেকে ৫১০ মেগাওয়াট বিদ্যুত বঞ্চিত হচ্ছে চট্টগ্রাম যে কারনে বিদ্যুত সংকটও প্রকট হয়ে উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে গৃহস্থালী গ্যাস সংযোগের জন্য প্রায় ১৫ হাজার আবেদন জমা পড়ে আছে। আর শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য আবেদন জমা রয়েছে ১২৬ টি।  গ্যাসের অপ্রতুলতার কারনে এসব সংযোগ দেয়া যাচ্ছে না। শিল্প কারখানাগুলো আবেদন করার পরও গ্যাস না পেয়ে হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও এগুলো উৎপাদনে যেতে পারছেনা শুধুমাত্র গ্যসের  অভাবে। তাই দিনের পর দিন গুনতে হচ্ছে লোকসান।

অপরদিকে যেসব শিল্প কারখানায় গ্যাস সংযোগ রয়েছে সেগুলোও পাচ্ছে না পর্যাপ্ত গ্যাস। ২০০ বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস দেয়া হচ্ছে রেশনিংয়ের মাধ্যমে। তাই এগুলো কাঙ্খিত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ