আদালতের আদেশ সত্ত্বেও বাসচাপায় পা হারানো প্রাইভেটকারচালক রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণ না দেয়ায় গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। বুধবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আদালত বলেন, গ্রিনলাইনের আচরণ ভালো লাগছে না। আমাদের নমনীয়তাকে দুর্বলতা ভাববেন না। আমরা কঠোর হতে চাই না। কিন্তু আমাদের কঠোর হতে বাধ্য করবেন না।আমরা আমাদের ব্যবস্থা নেব। যেটা করা দরকার সেটাই করব। আদালতে গ্রিনলাইনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. ওজিউল্লাহ। পা হারানো রাসেল সরকারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শামসুল হক রেজা।
তখন আদালত বলেন, আমরা অনেক নমনীয়ভাবে কথা বলেছি। গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষ কখনও বলেনি যে, আমাদের এই সমস্যা, আমরা এত টাকা দিতে পারবো না। আবার রাসেলের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করে বিষয়টা মীমাংসা করারও চেষ্টা করেনি। যারা ব্যবসা করে তাদের মানবিক মূল্যবোধ থাকা উচিত। কিন্তু এক্ষেত্রে গ্রিনলাইন কর্তৃপক্ষের আচরণ আমাদের কাছে ভালো লাগেনি। আমাদের নমনীয়তাকে দুর্বলতা ভাববেন না। আমরা কঠোর হতে চাই না। আমাদের কঠোর হতে বাধ্য করবেন না। তারপরও তাদের (গ্রিনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ) অনুপস্থিতিতে আমরা আজ আদেশ দিতে চাই না। প্রয়োজনে রুল শুনানির পর যা করার দরকার, তাই করব।
আদালত গ্রিনলাইনের আইনজীবী মো. ওজিউল্লাকে বলেন, আপনি যেহেতু এখন পর্যন্ত তাদের আইনজীবী আছেন, আপনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। এরপর আদালত মামলার পরবর্তী আদেশের জন্য ২৫ জুন দিন নির্ধারণ করেন এবং এই সময়ের মধ্যে বাকি ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেন।
গত বছরের ২৮ এপ্রিল মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের যাত্রাবাড়ী দোলাইরপাড় প্রান্তে গ্রিনলাইন পরিবহনের একটি বাসের চাপায় পা হারান এপিআর এনার্জি লিমিটেডের মাইক্রোবাসচালক রাসেল। বাসচালক কবির বেপরোয়া গতিতে পেছন দিক থেকে মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দেয়। বাসের সামনে গিয়ে কবিরের কাছে ধাক্কা দেয়ার কারণ জানতে চান রাসেল। এর জের ধরে দুজনের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে কবির ইচ্ছা করেই রাসেলের শরীরের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেন। দ্রুত সরার চেষ্টা করলেও এক পা বাঁচাতে পারেননি রাসেল। ঘটনাস্থল থেকে রাসেলকে দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে তাকে অ্যাপোলো হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ ঘটনায় গ্রিনলাইন বাসের চালক কবির মিয়াকে একমাত্র আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন রাসেলের ভাই আরিফ সরকার।
পা হারানো রাসেল সরকারের বাবার নাম শফিকুল ইসলাম। গাইবান্ধার পলাশবাড়ী এলাকার বাসিন্দা রাসেল রাজধানীর আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিংয়ে বসবাস করতেন এবং স্থানীয় একটি ‘রেন্ট-এ-কার’ প্রতিষ্ঠানের প্রাইভেটকার চালাতেন।