সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়দেশে পৌঁছেছে অতিরিক্ত আইজিপি রৌশন আরার মরদেহ

দেশে পৌঁছেছে অতিরিক্ত আইজিপি রৌশন আরার মরদেহ

কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিহত বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) রৌশন আরা বেগমের মরদেহ ঢাকায় পৌঁছেছে। ০৯ মে ভোর ৫টা ৪১ মিনিটে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তার মরদেহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে। বিমানবন্দরে রৌশন আরার মরদেহ গ্রহণ করতে এসে কান্নায় ভেঙে পরেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। এসময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে সকাল সাড়ে ৬টায় বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেট দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে নিহতের মরদেহ রাজধানীর হাতিরঝিল মহানগর প্রজেক্ট আবাসিক এলাকার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।

নিহত রৌশন আরার স্বামী শফিকুল আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, নিহতের প্রথম জানাজা নয়াটোলা জামে মসজিদে সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় জানাজা সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে মগবাজার মরহুমার পৈতৃক বাড়ির মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। সেখানে বাদ জোহর তৃতীয় জানাজা শেষে তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে।

শফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, রৌশন আরার আজ এই ফ্লাইটে আসার কথা ছিলো না। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে কষ্ট পাওয়ার চেয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, সেজন্য মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। কর্মজীবনে কারো সঙ্গে খারাপ আচরণে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে মরহুমার পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে দোয়া চান তিনি।

০৫ মে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কঙ্গোর কিনসা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। রৌশন আরাকে বহনকারী গাড়ির সঙ্গে স্থানীয় একটি ট্রাকের সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এসময় গাড়িতে থাকা পুলিশ সুপার ফারজানা এবং গাড়িচালক গুরুতর আহত হন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাংলাদেশ পুলিশে তিনি প্রথম নারী পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে একটি জেলার দায়িত্ব পালন করেন এবং অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত দ্বিতীয় নারী।

বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করেন রৌশন আরা বেগম। মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ঢাকায় শিক্ষাণবিশ সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমি, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৪ সালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে কক্সবাজারে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর একই পদে টাঙ্গাইল, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন।

রৌশন আরা ১৯৯৮ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রথম নারী পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে মুন্সীগঞ্জে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর তিনি অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে পদোন্নতি পান। রৌশন আরা বেগম দ্বিতীয় নারী, যিনি এ পদে আসীন হয়েছেন। এর আগে প্রথম নারী হিসেবে এ পদে ছিলেন ফাতেমা বেগম। এই পুলিশ কর্মকর্তা দেশের বাইরে যুক্তরাজ্যের পুলিশ স্টাফ কলেজ, ব্রামশিল থেকে স্ট্রাটেজিক প্ল্যানিং কোর্স এবং লিডারশিপ কোর্স ফর ফিমেললিডার’স ইন ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি কোর্সে অংশগ্রহণ করেন।

পুলিশ বাহিনীতে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ দুইবার আইজিপি ব্যাচপ্রাপ্ত হন এবং বাংলাদেশ সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুলিশ পদক ‘পিপিএম’ লাভ করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার থাকাকালীন ‘অনন্যা শীর্ষ দশ-১৯৯৮’ পুরস্কার ও ২০১২ সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন পুলিশের স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০১২ লাভ করেন।

রৌশন আরা রাজধানী ঢাকার মগবাজারের সাবেক টিএন্ডটি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ভিকারুননিসা-নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসএস (অনার্স), এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ