সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
প্রচ্ছদঅর্থ ও বানিজ্য সময়অধিকাংশ ব্যাংকের ব্যাকআপ সার্ভার দুর্বল

অধিকাংশ ব্যাংকের ব্যাকআপ সার্ভার দুর্বল

দ্রুত লেনদেন ও তথ্য-উপাত্ত সহজেই সংরক্ষণ করা যায় বলে ব্যাংক খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার হামলার মতো ঝুঁকিও। দেশের ব্যাংকগুলোর প্রযুক্তি খাতে বিশেষজ্ঞ জনবল নেই ৬২ শতাংশ ব্যাংকে। এছাড়া অধিকাংশ ব্যাংকের ডেটা রিকভারি সেন্টার (ডিআরসি) তথা ব্যাকআপ সার্ভার দুর্বল। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর আইটি খাতের ওপর সমীক্ষাটি পরিচালনা করেছে বিআইবিএম। ৪৫টি ব্যাংকের কাছ থেকে এ বিষয়ে তথ্য নেওয়া হয়। সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী দেশের ব্যাংকগুলোতে আইটি খাতের জনবলের মধ্যে ৬২ শতাংশ ব্যাংকে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নেই। ভেন্ডর বা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এই সেবা নিয়ে থাকে ব্যাংকগুলো।
আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এভাবে সেবা নেওয়ার বিষয়টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ। এতে ব্যাংকের তথ্য তাদের কাছে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সাইবার হামলার বিষয়ে আন্তর্জাতিক এক গবেষণার বরাত দিয়ে সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের ব্যাংকগুলোতে মোট সাইবার হামলার পেছনে ভেন্ডরদের হাত রয়েছে ২৭ শতাংশ।
এছাড়া ব্যাংকগুলো বর্তমানে কোর ব্যাংকিং সিস্টেম ব্যবহার করছে। দেশের অধিকাংশ ব্যাংকই এই ব্যবস্থা চালু করেছে। কিন্তু দেশের ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলো বেশিরাভাগই সু-উচ্চ ভবন। অগ্নি বা ভূমিকম্প বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে এসব ভবনে থাকা ডেটা সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এজন্য প্রতিটি ব্যাংকই ডিআরসি বা ব্যাকআপ সার্ভার ব্যবস্থা চালু করেছে। এর উদ্দেশ্য হলো, ব্যাংকের ডেটা সেন্টার বন্ধ হলে যেন তাৎক্ষণিক বিকল্পভাবে ডিআরসির মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা চালু রাখা সম্ভব হয়।
যদিও গবেষণায় উঠে এসেছে, অধিকাংশ ব্যাংকের ডিআরসি তথা ব্যাকআপ সার্ভার সব সময় চালু রাখা হয় না। মাঝে মাঝে সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে বা বৃহস্পতিবার ৪টার পরে এটি চালু করে দেখা হয়। পরীক্ষামূলকভাবে হলেও ব্যাংকিং লেনদেন সময়ে তা করা হয় না। ৪৫ শতাংশ ব্যাংক ভয় পায় ডেটা সেন্টার বন্ধ করে ডিআরসি পরীক্ষা করতে। কারণ হিসেবে বলা হয়, ডিআরসির পুরোপুরি সক্ষমতা নেই। এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বর্তমানে ৫৪ শতাংশ ব্যাংকের ডেটা সেন্টার ও ১৮ শতাংশ ব্যাংকের ডিআরসি সু-উচ্চ ভবনে অবস্থিত। এতে কোনো কারণে প্রধান কার্যালয়ে থাকা ডেটা সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হলে ব্যাংকগুলো বড় ধরনের সমস্যায় পড়বে।
এ বিষয়ে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জ্যেষ্ঠ ব্যাংকারদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, অনেক ব্যাংকের কোর ব্যাংকিং সিস্টেম (সিবিএস) নেই। যদিও এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি গাইড লাইন রয়েছে। আবার অনেক ব্যাংকের ডিআরসি ব্যবস্থা দুর্বল। যেহেতু এটি জরুরি মুহূর্তে প্রয়োজন হয়, সেজন্য কোনো কোনো ব্যাংক সব ডেটা ডিআরসিতে রাখেনি। যাদের আছে তারা পুরোটাই রেখেছে। আবার কোনো কোনো ব্যাংক কিছু রেখেছে।’
তিনি আরও বলেন, সময়ের আলোকে এখন ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে চলে যাওয়াটা ভালো হবে। এটি অধিকতার নিরাপদ ও সাশ্রয়ী। বিশ্বের নামকরা সব প্রতিষ্ঠান এ খাতে ব্যয় করছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, হ্যাকাররা নিত্যনতুন পন্থায় সাইবার হামলা করে। এজন্য এ খাতকে প্রতিনিয়ত হালনাগাদ করা প্রয়োজন। এটি বিশেষজ্ঞ ছাড়া কেউ বুঝতে পারবে না। এজন্য ব্যাংকের আইটি খাতের জনবলে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন। বর্তমানে দেশের ব্যাংকগুলোর ৯০ শতাংশ আইটিপ্রধানরা মনে করেন, সাইবার হামলার বিষয়ে জানতে একটি আন্তঃব্যাংক প্ল্যাটফর্ম থাকা দরকার। এতে আইটি বিশেষজ্ঞরা নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারবেন। কোনো ব্যাংকে হামলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য ব্যাংকও জানতে পারবে। এতে দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে বাকি ব্যাংকগুলো।
গবেষণায় উঠে এসেছে, অধিকাংশ ব্যাংকের আইটি অডিটর নেই বা অডিট টিমে আইটি বিশেষজ্ঞ নেই। আবার আইটি অডিটে থাকা ব্যাংকের জনবলের ৪৫ শতাংশের এ বিষয়ে কোনো সনদ নেই। এছাড়া ব্যাংকিং কাজে ব্যবহার করা কম্পিউটারগুলোতে প্রবেশ ও বের হওয়ার লগ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হয় না। এটি করার জন্য কোনো টিম বা জনবল নেই। ৪৮ শতাংশ ব্যাংক এটি চালু করেছে। ২৫ শতাংশ ব্যাংক জানেই না তাদের সিস্টেমে কতবার হামলা করা হয়েছে, বা হচ্ছে কি না।
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে ব্যাংকের অতি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর হচ্ছে প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো। এ খাতে আউটসোর্সিং না করে নিজেদের জনবলকে প্রশিক্ষিত করতে হবে। তাহলে একসময় দেশের পাশাপাশি বিদেশি প্রতিষ্ঠানে সেবা দেওয়ার মতো জনবল তৈরি হবে। এজন্য ব্যাংকগুলোকে এ খাতে বিনিয়োগ ও প্রশিক্ষণে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বর্তমানে এ খাতে প্রশিক্ষণে আইটিতে মোট বরাদ্দের মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন শতাংশ খরচ করা হয়, যা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য। বিষয়টিতে বাংলাদেশ ব্যাংক গুরুত্ব দিলে উপকৃত হবে দেশের ব্যাংক খাত।

 

আরও পড়ুন

সর্বশেষ