শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
প্রচ্ছদআরো খবর......প্রসঙ্গ: তারাভির প্রতি চার রাকাত পর মুনাজাতের পূর্বে দুরূদ শরিফ পাঠ

প্রসঙ্গ: তারাভির প্রতি চার রাকাত পর মুনাজাতের পূর্বে দুরূদ শরিফ পাঠ

তারাভির নামাজে প্রতি চার রাকাত পর বিশ্রাম নেয়া মুস্তাহাব। চার রাকাত পড়তে যতক্ষণ সময় লাগে,ততক্ষণ অপেক্ষা করা মুস্তাহাব। এ সময়ে তাসবিহ, দুরূদ শরিফ পাঠ, কুরআন তিলাওয়াত, কালিমা পাঠ ও নফল নামাজ পড়া যায়। এগুলো না পড়ে চুপ করে অপেক্ষা করাও যায়।(ইবন আবেদিন,ফাতাওয়ায়ে শামি,দারুল ফিকর,বৈরুত,২য় সংস্করণ, ১৪১২ হি.খ.২, পৃ.৪৬;আল্লামা আইনি,আল-বিনাইয়া শরহুল হিয়াইয়া,দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, ১ম সংস্করণ,১৪২০হি.খ.২,পৃ.৫৫৫;মুফতি আমজাদ আলি, বাহারে শরিয়ত, মাকতাবাতুল মদিনা, করাচি,খ.১,১ম ভাগ,পৃ.৬৯০) আমাদের দেশে তারাভি নামাজের প্রতি চার রাকাত পরপর একটি সুন্দর সানা পড়ার পর মুনাজাত করার প্রচলন রয়েছে। এটি খুবই ভালো আমল।তবে এখানে সানার পর দুরূদ শরিফের অনুপস্থিতি লক্ষণীয়। একবার হলেও দুরূদ শরিফ পাঠ করা হলে,আরো ভালো হয়। কারণ দোয়া কবুলের জন্য দুরূদ শরিফ পাঠ করা অত্যন্ত সহায়ক। নামাজের পর আল্লাহর প্রশংসা করা,তারপর দুরূদ শরিফ পাঠ করে মুনাজাত করার বিষয়টি হাদিস শরিফ দ্বারাও প্রমাণিত। যেমন হাদিস শরিফে রয়েছে-
عَنْ فَضَالَةَ بْنِ عُبَيْدٍ، قَالَ: بَيْنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَاعِدٌ إِذْ دَخَلَ رَجُلٌ فَصَلَّى فَقَالَ: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: عَجِلْتَ أَيُّهَا الْمُصَلِّي، إِذَا صَلَّيْتَ فَقَعَدْتَ فَاحْمَدِ اللَّهَ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ، وَصَلِّ عَلَيَّ ثُمَّ ادْعُهُ. قَالَ: ثُمَّ صَلَّى رَجُلٌ آخَرُ بَعْدَ ذَلِكَ فَحَمِدَ اللَّهَ وَصَلَّى عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيُّهَا الْمُصَلِّي ادْعُ تُجَبْ
“হযরত ফাদালা বিন উবাইদ রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় জনৈক ব্যক্তি এসে নামাজ আদায় করেন। তারপর দোয়া করেন,‘হে আল্লাহ,আপনি আমাকে ক্ষমা এবং দয়া করুন।’ তাঁকে উদ্দেশ্য করে রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, হে নামাজি,তুমি একটু তাড়াহুড়ো করে ফেলেছ। যখন তুমি নামাজ পড়ে বসবে,তখন আল্লাহর প্রশংসা করবে, যেভাবে তিনি প্রশংসার যোগ্য। তারপর আমার ওপর দুরূদ শরিফ পাঠ করবে। এরপরে দোয়া করবে। এরপর আরেকজন ব্যক্তি এসে নামাজ আদায় করার পর আল্লাহর প্রশংসা করেন এবং রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র প্রতি দুরূদ শরিফ পাঠ করেন। তখন রাসূলে করিম তাঁকে বললেন,হে নামাজি,তুমি দোয়া কর,দোয়া কবুল হবে।”(ইমাম তিরমিযি, সুনানুত্ তিরমিযি,দার“ল গারবিল ইসলামি,বৈর“ত,১৯৯৮ খৃ,খ.৫,পৃ.৩৯৩,হা.নং-৩৪৭৬;ইমাম বাগাভি,শরহুস সুন্নাহ,আল-মাকতাবুল ইসলামি,বৈর“ত,২য় সংস্করণ,১৪০৩হি.খ.৩,পৃ.১৮৭,হা.নং-৬৭৯;)
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম তীবী বলেন,
(” فَقَعَدْتَ “) إِمَّا عَطَفَ عَلَى مُقَدَّرٍ، أَيْ: إِذَا صَلَّيْتَ وَفَرَغْتَ فَقَعَدْتَ لِلدُّعَاءِ فَاحْمَدِ اللَّهَ، وَإِمَّا عَطْفٌ عَلَى الْمَذْكُورِ، أَيْ: إِذَا كُنْتَ مُصَلِّيًا فَقَعَدْتَ لِلتَّشَهُّدِ فَاحْمَدِ اللَّهَ، أَيْ: أَثْنِ عَلَيْهِ بِقَوْلِكَ التَّحِيَّاتُ اهـ.

“ (” فَقَعَدْتَ “)
শব্দটি হয়ত উহ্য ইবারতের ওপর আতপ হয়েছে। তখন অর্থ হবে- যখন তুমি নামায শেষ করবে, তখন দোয়ার জন্য বসে আল্লাহর প্রশংসা কর। অথবা (” فَقَعَدْتَ “) শব্দটি উল্লিখিত ইবারতের ওপর আতপ হয়েছে। তখন অর্থ হবে- যখন তুমি নামায পড়বে, তখন তাশাহহুদের জন্য বসে আল্লাহর প্রশংসা কর তথা ‘আত্-তাহিয়্যাহু’ মাসূরার মাধ্যমে আল্লাহর প্রশংসা কর।” এ বিষয়ে মোল্লা আলী কারী বলেন-وَيُؤَيِّدُ الْأَوَّلَ إِطْلَاقُ قَوْلِهِ: (” فَاحْمَدِ اللَّهَ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ “) “ রাসূলে করীমের বাণী ” فَاحْمَدِ اللَّهَ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ ” এর ব্যাপকতা (ইমাম তীবীর) প্রথম অভিমতকে জোরদার করছে।” মোল্লা আলী কারী, মিরকাত, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১ম সংস্করণ,১৪২২হি. খ.২, পৃ.৭৪৭) মোটকথা ইমাম তীবীর প্রথম অভিমত তথা নামায শেষ করার পর প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা, তারপর রাসূলে করীমের ওপর দুরূদ শরীফ পাঠ পূর্বক দোয়া করার বিষয়টি মোল্লা আলী কারী আলাইহির রাহমাহ সমর্থন
করেন। আর নামাযের বাইরে হোক বা ভেতরে হোক সেটা ভিন্ন ব্যাপার;বর্ণিত হাদীস শরীফের মাধ্যমে দোয়া কবুল হওয়ার গ্রহণযোগ্য নিয়মটি সাব্যস্ত হল।
হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন-
إِنَّ الدُّعَاءَ مَوْقُوفٌ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ لَا يَصْعَدُ مِنْهُ شَيْءٌ، حَتَّى تُصَلِّيَ عَلَى نَبِيِّكَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
“তুমি তোমার নবীর ওপর দর“দ শরিফ পাঠ না করা পর্যন্ত তোমার কোন দোয়াই ওপরে উঠবে না; বরং আসমান ও জমিনের মাঝখানে অবশ্যই ঝুলন্ত থাকবে।”(ইমাম তিরমিযি,প্রাগুক্ত,খ.১,পৃ.৬১৪,হা.নং-৪৮৬)
উপরিউক্ত পর্যালোচনা থেকে প্রমাণিত হল যে,নামাজের পর আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করার পর দুরূদ শরিফ পাঠ করা দোয়া কবুলের গ্রহণযোগ্য ওসিলা। তাছাড়া দুরূদ শরিফ এমন একটি আমল,যার ফযিলতের কথা কারো অজানা নয় এবং অন্যকোন আমল আল্লাহর দরবারে কবুল না হলেও দুরূদ শরিফ কিন্তু কবুল হয় এবং দুরূদ শরিফ পাঠ করে দোয়া করলে,দোয়া কবুল হয়। এ কারণে তারাভির প্রতি চার রাকাত পরপর “সুবহানা যিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি…” সানা পাঠ করার পর একবার হলেও দুরূদ শরিফ পাঠ করার যথেষ্ট সময় ও সুযোগ রয়েছে। তাই আমরা এ ব্যাপারে সম্মানিত উলামায়ে কিরাম , খতিব ও মুসল্লি ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কোন ধরণের ফেতনা- ফ্যাসাদ ছাড়া এ নেক আমলটি প্রচলন করতে পারলে আপনারা সদকায়ে জারিয়া হিসেবে সওয়াব পেতে থাকবেন। এটি সম্মিলিতভাবে প্রচলন করতে না পারলেও ব্যক্তিগতভাবে আমলটি করা যেতে পারে। আল্লাহ তায়ালা সকলকে এ বিষয়টি বোঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুক। আমিন বিহুরমাতি সাইয়িদিল মুরসালিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
উল্লেখ্য,প্রত্যেক নামায ও দোয়ার ক্ষেত্রে এ নিয়মটি প্রযোজ্য।

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَبَارِكْ وَ سَلِّمْ

লেখকঃ রবিউল আলম,
প্রভাষক, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ