রবিবার, মে ৫, ২০২৪
প্রচ্ছদইন্টারভিউমৃত্যুদণ্ডের ভয়ে আমি ভীত নই : কাদের মোল্লা

মৃত্যুদণ্ডের ভয়ে আমি ভীত নই : কাদের মোল্লা

ডেস্ক রিপোর্ট (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

সর্বোচ্চ আদালতের মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায়ে হতবাক হননি বলে দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা। তিনি বলেছেন, ‘মৃত্যুদণ্ডের ভয়ে আমি ভীত নই। কারণ, আমি ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের কারণেই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। আর সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো অভিযোগে দুনিয়ার আদালত আমাকে শাস্তি প্রদান করে পরকালের আদালতে আমার ন্যায়বিচার প্রাপ্তির সার্টিফিকেট দিয়েছে।’ শনিবার গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে কাদের মোল্লার সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাৎ করতে গেলে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ সেপ্টেম্বর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রথম চূড়ান্ত রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বিচারিক আদালতের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশের সাজা বাড়িয়ে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিতে কাদের মোল্লার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

 সাক্ষাৎকালে পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে কাদের মোল্লা বলেন, ‘আমি ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের জন্য টার্গেটে পরিণত হয়েছি। আমার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে কোনো প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষী প্রসিকিউশন হাজির করতে পারেনি। সম্পূর্ণ শুনা স্বাক্ষীর উপর ভিত্তি করে মাননীয় ট্রাইব্যুনাল আমাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল।’

 তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলায় ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক রায় ঘোষণার পর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ গড়ে উঠে। তাদের দাবিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আইন সংশোধন করে আমার শাস্তি বর্ধিত করার জন্য সরকার পক্ষ আপিল দায়ের করে। সম্পূর্ণ শুনা স্বাক্ষীর উপর ভিত্তি করে সর্বোচ্চ দণ্ড প্রদান দুনিয়ার বিচার বিভাগের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা। আর নিম্ন আদালত মিথ্যা মামলায় আমাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করলেও মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট সে দণ্ড বৃদ্ধি করে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন, যা বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা।

 কাদের মোল্লা বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতের এই রায় বিস্ময়কর হলেও এতে আমি হতবাক হইনি। কারণ, আমি ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের কারণেই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। দুনিয়ায় যারা ইসলামী আন্দোলন করেছেন তাদের সবাইকে দুনিয়া থেকে উৎখাত করার নানামুখি ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এমনকি নবী-রাসূলদের উপরও চালানো হয়েছিল জুলুম এবং নির্যাতন। কেননা, ইসলামী আন্দোলনের পথ হচ্ছে রক্তপিচ্ছিল কন্টকাকীর্ণ।’

 তিনি আরো বলেন, ‘মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নবুওয়াতের দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন কিন্তু শাহাদতের দরজা খোলা রেখেছেন। যতদিন ইসলামী আন্দোলনের পথে শাহাদতের ঘটনা ঘটবে ততদিন ইসলামী আন্দোলন বেগবান হবে। আর আল্লাহ যাদেরকে চান, তাদেরকেই শহীদ হিসেবে কবুল করেন। আমি যদি মহান আল্লাহর দরবারে শহীদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হই, সেটাই আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ পাওনা। সুতরাং মৃত্যুদণ্ডের ভয়ে আমি ভীত নই। সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো অভিযোগে দুনিয়ার আদালত আমাকে শাস্তি প্রদান করে পরকালের আদালতে আমার ন্যয়বিচার প্রাপ্তির সার্টিফিকেট দিয়েছে।’

 জামায়াতের এ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘মহান আল্লাহ-তায়ালা সকল অন্যায় ও বিভ্রান্তিকর বিচার থেকে মুক্তি দিয়ে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য ‘শেষ বিচারের দিনের’ কথা পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং আসল ফায়সালা হবে আখেরাতের আদালতে। আজকের বিচার সেদিন আমার মুক্তির কারণ হবে। মহান আল্লাহর কাছে আমি অবশ্যই সেদিন ন্যায় বিচার পাবো। আমি কোনো অপরাধ করিনি। মহান আল্লাহ গোপন, প্রকাশ্য সকল খবর রাখেন। কোনো ব্যক্তিই আল্লাহর চোখে ফাঁকি দিতে পারবে না। যারা আমাকে মিথ্যা অভিযোগে হত্যা করতে চায়, আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের ময়দানে তাদের বিচার করবেন। আমার জন্য আল্লাহর সাক্ষ্যই যথেষ্ট।’

 তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, ‘আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও এদেশের মানুষ একদিন মুক্তি পাবে। আল্লাহর দ্বীন এখানে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সকল জুলুমের অবসান ঘটবে। আমি মহান আল্লাহর কাছে আল্লাহর দ্বীনের বিজয় কামনা করি।’

 আব্দুল কাদের মোল্লা বলেন, ‘আমি দেশবাসীর নিকট আমার সালাম জানাচ্ছি এবং তাদের নিকট দোয়া কামনা করছি। এছাড়া দেশ ও জাতির এই কঠিন মুহূর্তে ধৈর্য, সহনশীলতা ও সংযত আচরণের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আমার প্রিয় দেশবাসীর নিকট আহ্বান জানাই। আর দুনিয়ায় না হলেও আখেরাতে আমার প্রিয় দেশবাসী, সহকর্মী ও আপনজনের সাথে সাক্ষাৎ হবে, ইনশাআল্লাহ।’

শনিবার রাতে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের মো. ইব্রাহিম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ