রবিবার, মে ৫, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে না ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে না ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

বোরকা ছাড়লেই ক্যাম্পাসে ফেরত আসতে পারবেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত ছাত্রী হাফসা ইসলাম। কিন্তু তার পরিবার এতে সম্মত নয়। তাদের বক্তব্য হচ্ছে লিখিতভাবে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে, লিখিতভাবেই তাকে ফেরত আনতে হবে। এ নিয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে দুইপক্ষই। প্রয়োজনে আইনি লড়াই চালাবেন তারা। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় গত ১২ সেপ্টেম্বর ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী হাফসাকে বহিষ্কার করে। লিখিত ওই আদেশে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রেসকোড না মানার অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

এনজিও বাণিজ্য থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসায় নেমে পড়া দেশের এ প্রতিষ্ঠানটি নিয়তই হিজাব পরা ছাত্রীদের হয়রানি করছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন।

ড্রেসকোডের নামে তাদের এ হয়রানি কোনোভাবেই আইনসঙ্গত নয় বলে উল্লেখ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, এ ড্রেসকোড রাষ্ট্রের নির্ধারিত নয়। একটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজের নীতি চাপিয়ে দেয়ার জন্য কাউকে বহিষ্কারের অধিকার রাখে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভর্তির সময় কোনো ধরনের ড্রেসকোড সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানায়নি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কোনো বিজ্ঞাপনেও তারা উল্লেখ করেনি কিন্ডারগার্ন্টেন বা স্কুলের মতো একটা একরঙা ড্রেসকোর্ড থাকবে। হঠাৎ করে হিজাব পরা ছাত্রীদের দিকে তাদের নজর পড়ল এবং চলতি বছর তারা এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করল।

এর আগে রাজধানীর রাজউক কলেজে সুমাইয়া নামে একটি ছাত্রীকে হিজাব পরার অপরাধে বের করে দেয়া হলেও পরে জনমতের কাছ হার মানে কলেজ কর্তৃপক্ষ!

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, ইংরেজি বিভাগের অনার্স সপ্তম সেমিস্টারের ছাত্রী হাফসা ইসলামকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত আপাতত প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। কর্তৃপ বলছে, আমরা ড্রেসকোড সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছি। ওই শিার্থী ড্রেসকোড মানলেই কেবল তাকে কাস করার অনুমোদন দেয়া হবে। হাফসা ইসলামের বিষয়ে গতকাল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধানদের একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে সেটি শেষ পর্যন্ত হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ইসফাক ইলাহী চৌধুরীর স্বাক্ষরে হাফসাকে বহিষ্কারের চিঠিটি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, হাফসার পরিবারকে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। হাফসার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে শিথিলও করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা বৈঠকে উপস্থিত হননি। তারা এখন বলছেন ড্রেসকোড পরিবর্তন করতে হবে। এটা বোর্ড অব ট্রাস্টির সিদ্ধান্ত। আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অনড়। বিষয়টা এখন আইনিভাবেই মোকাবেলা করা হবে।

হাফসার বড় ভাই আবদুল্লাহ মোহাম্মদ ইসা বলেন, হাফসাকে যে চিঠি দেয়া হয়েছে সেখানে বোর্ড অব ট্রাস্টির সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে। এখন তারা মৌখিকভাবে কিছু শর্ত শিথিলের কথা বলছেন। আমাদের কথা হচ্ছে, ওই ড্রেসকোডই পরিবর্তন করতে হবে। আর যেহেতু লিখিতভাবে হাফসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাই লিখিতভাবেই তা প্রত্যাহার করতে হবে। আর সেটা বোর্ড অব ট্রাস্টির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হতে হবে। কেননা মৌখিকভাবে করা হলে কয়েক দিন পর আবার যে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না তার নিশ্চয়তা কোথায় ?

তিনি বলেন, বিষয়টা সমাধান না হলে আমরা তা আইনিভাবে মোকাবেলা করব। হাফসা ইসলাম বলেন, বোরকার সাথে নেকাব পরায় গত দুই সেমিস্টার ধরে আমাকে নানাভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। এভাবে আরো কয়েকজন ছাত্রীকে বোরকা ও নেকাব ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।

গত জানুয়ারিতে নোটিশ জারির পরই এ ধরনের কড়াকড়ি শুরু হয় বলে জানান হাফসা ইসলাম। তার আইডি নম্বর ১১৩০৩০০১। ২২ জানুয়ারি একটি নোটিশ জারি করে ড্রেসকোড ও নিরাপত্তার অজুহাতে ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের বোরকা, নেকাব ও হিজাব পরা নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ। এর পরও যেসব ছাত্রী বোরকা, হিজাব ও নেকাব পরিধান করতেন তাদের ২৮ মে শোকজ করা হয়। হাফসাকেও একই দিনে শোকজ করা হয়। ৩ জুনের মধ্যে হাফসার কাছ থেকে জবাব চাওয়া হয়। হাফসা জবাব দিলেও তা বিশ্ববিদ্যালয়ের পছন্দ হয়নি। শেষ পর্যন্ত তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ