মঙ্গলবার, মে ৭, ২০২৪
প্রচ্ছদটপকক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নতুন স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না: আপিল বিভাগ

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নতুন স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না: আপিল বিভাগ

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কক্সবাজার সমুদ্র সৌকতে নতুন স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। আপিল বিভাগের এ রায় দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্ব ৭ সদস্যের আপিল বেঞ্চ রিভিউ খারিজ করে এ রায় দেন। এর আগে আপিল বিভাগ ও হাইকোর্টও একই রায় দেন। এ রায়কে স্বাগত জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছেন, সৈকত রক্ষায় এটি ঐতিহাসিক রায়। নকশা বহির্ভূত হোটেল মোটেল ভাঙ্গার বিষয়ে সরকার পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবে।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকায়  ঝিলংজা মৌজার আর.এস ৮০০১ নম্বর দাগের মোট ১২৪.৩৫ একর রক্ষিত বন ও ঘোষিত প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হতে ৫১ একর বনভূমিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য স্থানীয় জেলা প্রশাসন আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার জন্য বরাদ্দ দেয়। ওই বরাদ্দ বাতিল, পাহাড় ও বনজ সম্পদ ধ্বংসের বিরূদ্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) পাহাড় কাটা বন্ধে ২০০৬ সালে হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করে।

মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০১১ সালের ৮ জুন বরাদ্দ বাতিল, পাহাড়ের কোনো অংশ না কাটা, রক্ষিত বন এলাকায় সকল ধরনের স্থাপনা উচ্ছেদ করা এবং বন ধ্বংস না করতে আদেশ দিয়ে রায় প্রদান করে।

কিন্তু আদালতের রায় যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় ১২ জন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা মামলা দায়ের করে ‘বেলা’। পরবর্তীতে আদালত কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে ব্যক্তিগতভাবে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিলে ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির হয়ে আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য সময় প্রার্থনা করলে আদালত সময় মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে তিন মাসের মধ্যে সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে অঙ্গিকার করেন কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন। তারপরও বর্তমানে ওই এলাকাতে পাহাড় ও গাছ কেটে স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আইনজীবি কবির সায়ীদ বলেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দেয়ার ফলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন প্রকল্পটি অবৈধ হয়ে গেছে।

পর্যটন এলাকা হিসেবে দিন দিন কক্সবাজারের গুরুত্ব বাড়তে শুরু করলে সাগর তীরের জমির গুরুত্বও হঠাৎ বেড়ে যায়। এ জমিগুলোর দিকে নজর পড়ে প্রভাবশালীদের। তারই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকায় সাগরতীরে বনভূমি দখল করে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে পাহাড় ও বনজ সম্পদ ধ্বংসের মহাযজ্ঞ শুরু করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। কেটে ফেলে অসংখ্য গাছ।

অথচ কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলাধীন ঝিলংজা মৌজার আর.এস ৮০০১নং দাগের ১২৪.৩৫ একর ভূমিকে ১৯৩৫ সালে রক্ষিত বন এবং ১৯৯৯ সালে প্ররিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। রক্ষিত বন এবং প্ররিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত এলাকাটির পাহাড়ি বনভূমির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট করা এবং পাহাড় বা বনভূমির ক্ষতিসাধন করা আইনানুযায়ী সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

এসব নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জেলা প্রশাসনের সরকাররি কর্মচারীরা কাজ শুরু করলে বন বিভাগ তাদের প্রতিরোধের চেষ্টা করে। এমনকি আদালতে জেলা কালেক্টরেট কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করে। কিন্তু আদালত মামলার বাদী মন্ত্রণালয় না হয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বাদী হওয়ায় মামলাটি খারিজ করেছেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ