শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়দেশের সমুদ্রসীমাকে নিরাপদ রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

দেশের সমুদ্রসীমাকে নিরাপদ রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

দেশের সমুদ্রসীমাকে নিরাপদ রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কোনো দেশের একার চেষ্টায় সমুদ্রপথের অপরাধ দমন করা সম্ভব নয়। এশিয়ার দেশগুলোর উপকূলরক্ষী বাহিনীর প্রধানদের চতুর্দশ বৈঠকের উদ্বোধনে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ঢাকার হোটেল র‌্যাডিসন ওয়াটার গার্ডেনে বুধবার সকালে হেড অব এশিয়ান কোস্টগার্ড এজেন্সিস মিটিং বা এইচএসিজিএএমের এ বৈঠকে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল এএমএমএম আওরঙ্গজেব চৌধুরীসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মেরিটাইম এজেন্সির প্রধানরা অংশ নেন।

সমুদ্রপথে অপরাধ দমনে প্রতিবেশী দেশগুলোর সহযোগিতার ওপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্রপথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও ব্যবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি জাহাজের নিরাপদ চলাচল অপরিহার্য। বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ সমুদ্রপথেই হয়। তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের এ সামুদ্রিক এলাকায় মাদকদ্রব্য পাচার, অবৈধ অস্ত্র পাচার, মানবপাচার, অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য আহরণ, জলদুস্যতা, সশস্ত্র ডাকাতিসহ আরও বিভিন্ন ধরনের অবৈধ কার্যকলাপ প্রায়শই সংঘটিত হয়ে থাকে। এসব অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে শুধু দেশীয় নয়, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর অপরাধীরা জড়িত থাকে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপরাধীরা অনেক সময় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে থাকে। কাজেই কোনো একক দেশের পক্ষে এদের দমন করা সম্ভব নয়। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলেই এসব কর্মকাণ্ড দমন করা সম্ভব এবং এটি অপরিহার্য। তিনি বলেন, এইচএসিজিএএমের মতো একটি সংগঠনই পারে আমাদের সবার অভিজ্ঞতা ও তথ্য-উপাত্ত কাজে লাগিয়ে দলগতভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে এসব সামুদ্রিক অপতৎপরতা রোধ করে একটি নিরাপদ সমুদ্রসীমা উপহার দিতে।

‘বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ কোস্টগার্ড অপেক্ষাকৃত নতুন বাহিনী হওয়ার পরও দেশের মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষমতা দেখিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড এশীয় অঞ্চলের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করে আমাদের সমুদ্রকে নিরাপদ রাখবে- এটিই আমাদের প্রত্যাশা। এ জন্য আমরা সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করব।

শেখ হাসিনা জানান, পৃথিবীর ৭০ শতাংশ মানুষ সমুদ্র উপকূলের ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাস করেন। মানবসভ্যতায় সমুদ্রের গুরুত্ব এ থেকেই অনুধাবন করা যায়। আমরা সৌভাগ্যবান এ জন্য যে, আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ নামক বদ্বীপটি বঙ্গোপসাগরের মাধ্যমে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত। বাংলাদেশের রয়েছে প্রায় ৭১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল। তিনটি বিভাগের ১২ জেলার অবস্থান সমুদ্রতীরে। তিনি বলেন, এসব জেলার জনগণের জীবন-জীবিকা অনেকটা সমুদ্রনির্ভর। এ কারণেই সমুদ্রে নিরাপত্তা বিধান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উপকূলবর্তী দেশ হিসেবে বঙ্গোপসাগরে এ দেশের মানুষের নানাবিধ স্বার্থ জড়িত। বঙ্গোপসাগরের অপর দুই অংশীদার ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সীমানা নির্ধারিত না থাকায় বিগত চার দশকে আমরা সমুদ্র তলদেশের সম্পদ আহরণে বাধাগ্রস্ত হয়েছি। জেলে সম্প্রদায় মৎস্য আহরণে বাধার সম্মুখীন হয়েছে। আমাদের মৎস্যসম্পদ অন্য দেশের জেলেরা অবাধে শিকার করেছে। কিন্তু আমরা প্রতিকার করতে পারিনি। খনিজ ও অন্যান্য সম্পদে আমাদের অধিকার ছিল না।

২০১২ ও ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইনবিষয়ক ট্রাইব্যুনালে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তি হয়, যার মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের মহীসোপানে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দুটি বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেও এটা করতে সক্ষম হয়েছি। এ বিশাল জলরাশির তলদেশে খনিজসম্পদের প্রাচুর্যতা রয়েছে। এ সম্পদ আমরা উত্তোলন করতে সক্ষম হলে আগামী কয়েক প্রজন্ম লাভবান হবে। সম্মেলনের সফলতা কামনা করে তিনি বলেন, কোস্টগার্ডের সদস্যরা সমুদ্র এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দুরূহ কাজে নিয়োজিত থাকেন। এ সভার মাধ্যমে সদস্য দেশগুলো তাদের সমুদ্রসীমা আরও নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ