বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়আপিল বিভাগে কাদের মোল্লার মৃত্যৃদণ্ড

আপিল বিভাগে কাদের মোল্লার মৃত্যৃদণ্ড

আদালত প্রতিনিধিঃ (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া যাবজ্জীবন সাজা পরিবর্তন করেছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে আদালত কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।

প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতির বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণা করেন।
বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
আপিল বিভাগের মঙ্গলবারের কার্য তালিকায় কাদের মোল্লা বনাম রাষ্ট্র মামলাটি ১ নাম্বারে ছিল। সকাল ৯ টা ২৫ মিনিটে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে অন্য বিচারপতিরা আপিল বিভাগে আসন গ্রহণ করেন। এর পরই মাত্র কয়েক মিনিটে রায় ঘোষণা করা হয়।
গত ২২ জুলাই শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন আপিল বিভাগ।
২২ জুলাই শুনানির ৪০তম কার্যদিবসে সাত এমিকাস কিউরির বক্তব্য শেষে ডিফেন্সের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক সমাপনী বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
সাত এমিকাস কিউরির মধ্যে ৫ জনই আপিলে দু’পক্ষের সমানাধিকারের সুযোগ রেখে আনীত সংশোধনী আবদুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে মতামত  দেন। অন্য দুই এমিকাস কিউরি মনে করেন, এটি তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। এমিকাস কিউরিরা ৬ কার্যদিবস মতামত দিয়েছেন। এমিকাস কিউরিদের মধ্যে যে ৫ জন সংশোধিত আইন আবদুল কাদের মোল্লার মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে মত দিয়েছেন তারা হচ্ছেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার আজমালুল  হোসেন কিউসি ও ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। অন্য দুই এমিকাস কিউরি টিএইচ খান ও এএফ হাসান আরিফ মনে করেন, এটি প্রযোজ্য হবে না।
অন্যদিকে কাস্টমারি ইন্টারন্যাশনাল ল’র (প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন) আওতায় এ মামলা পড়বে বলেন তিনজন, পড়বে না বলেন দু’জন এবং অন্য দু’জন ভিন্ন মত দেন।
এর আগে গত ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয় আপিল শুনানি। ২০ জুন পর্যন্ত ৩২ কার্যদিবসে আপিলের শুনানি চলে। প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষ ও পরে আসামি পক্ষের করা আপিলের শুনানি হয়।
এর মধ্যে ১ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত এবং ৬ জুন  থেকে ২০ জুন পর্যন্ত মোট ১৪ কার্যদিবস রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের সমন্বয়ক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান।
অন্যদিকে ২৯ এপ্রিল থেকে ৬ জুন পর্যন্ত ১৮ কার্যদিবসে আসামি পক্ষে শুনানি করেন আসামি পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।
উল্লেখ্য, গত ৫ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
৬টি অভিযোগের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল তাকে ৫টি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে দুটিতে যাবজ্জীবন ও তিনটিতে ১৫ বছর করে কারাদন্ডাদেশ দেন। একটি অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেনি উল্লেখ করে ওই অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়।
সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দন্ডাদেশ না দেওয়ায় এবং একটি অপরাধের অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়ায় সাজা বাড়ানোর লক্ষ্যে এ রায়ের বিরুদ্ধে গত ৩ মার্চ আপিল করে প্রসিকিউশন। আপিলে ওই ৫টি অভিযোগে দেওয়া সাজা অপর্যাপ্ত দাবি করে এবং খালাসের আদেশ বাতিল  চেয়ে সর্বোচ্চ দণ্ড ফাঁসির আরজি জানানো হয়।
আর সব অভিযোগ থেকে খালাসের আবেদন জানিয়ে ৪ মার্চ আপিল করেন আবদুল কাদের মোল্লা।
প্রসঙ্গত, কাদের  মোল্লার বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়ে রায় ঘোষণার পর তার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে আন্দোলন শুরু করে গণজাগরণ মঞ্চ। এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সামনে রেখে গত ১৭  ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস সংশোধন) বিল-২০১৩ জাতীয় সংসদে পাস হয়।
সংশোধিত আইনে রায়ের বিরুদ্ধে উভয়পক্ষের আপিল করার বিধান রাখা হয়। যা আগে শুধু আসামিপক্ষের সুযোগ ছিল।
আরও পড়ুন

সর্বশেষ