শনিবার, মে ৪, ২০২৪
প্রচ্ছদটপবিএনপিকে নিয়ে ড.কামালের নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

বিএনপিকে নিয়ে ড.কামালের নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

বিকল্প ধারার এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বাদ দিয়ে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নতুন জোটের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিএনপি, ঐক্য প্রক্রিয়া, নাগরিক ঐক্য ও জেএসডিকে নিয়ে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের’ আত্মপ্রকাশ হয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে জোট গঠনের প্রক্রিয়া এবং তা নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের ঘোষণা আসে। সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার কামাল হোসেন, বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডির আ স ম রব, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না ছিলেন। এছাড়া এই ঐক্য ফ্রন্টে যুক্ত রয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল ইসলাম ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর, মোস্তফা মহসীন মন্টু, আ ব ম মোস্তফা আমিন, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, আব্দুল মালেক রতন, অ্যাডভোকেট আলতাফ হোসেন, অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার, আ ও ম শফিক উল্লাহ, মোস্তাক আহমদসহ ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা। যুক্তফ্রন্ট ও বিকল্পধারা সভাপতি বি চৌধুরী ছিলেন না এই সংবাদ সম্মেলনে। তার আগে কামাল হোসেনের বাড়ি থেকে ফিরে গিয়ে আলাদা সংবাদ সম্মেলন ডাকার ঘোষণা দেন বি চৌধুরী। এর আগে মতিঝিলে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে দিনভর বৈঠক করে ড. কামাল ও সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতারা। ওই বৈঠকে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের রূপরেখা তুলে ধরার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন বলেন, জাতির প্রয়োজনেই এ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ। ড. কামালের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর এই জোটের নামকরণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না। সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি ও ১১টি লক্ষ্য পাঠ করেন তিনি।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি :
১) অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করতে হবে।
২) গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
৩) বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সকল রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
৪) কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যম স্বাধীন মত প্রকাশের অভিযোগে ছাত্র-ছাত্রী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল কালো আইন বাতিল করতে হবে।
৫) নির্বাচনের ১০ দিন আগে থেকে নির্বাচনের পর সরকার গঠন পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত করতে হবে।
৬) নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে ভোট কেন্দ্র, পোলিং বুথ, ভোট গণনা স্থল ও কন্ট্রোল রুমে তাদের প্রবেশের উপর কোন প্রকার বিধি-নিষেধ আরোপ না করা। নির্বাচনকালীন সময়ে গণমাধ্যমকর্মীদের উপর যে কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে।
৭) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও কোনো ধরনের নতুন মামলা না দেয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।

প্রসঙ্গত: একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নিজেরা একসঙ্গে কয়েকটি কর্মসূচি পালনের পর বিএনপিকেও সঙ্গে নিয়ে সরকারবিরোধী ‘ঐক্য প্রক্রিয়া’র রূপরেখা চূড়ান্ত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন কামাল হোসেন ও এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। কিন্তু শনিবার সেই রূপরেখা চূড়ান্তের আগেই তাতে ফাটল ধরেছে, নির্ধারিত সেই বৈঠক না হওয়ার পর দুজনের পক্ষ থেকে সন্ধ্যায় আলাদা সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে। দুই পক্ষ আলাদা সংবাদ সম্মেলন ডাকলেও বিভাজনের বিষয়ে কোনো পক্ষের স্পষ্ট কোনো ঘোষণা আসেনি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ