আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে কঠোর বার্তা দিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শুক্রবার রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী গণসংযোগ কর্মসূচিতে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রার্থী হতে চাওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু প্রার্থী হতে গিয়ে ঘরের মধ্যে ঘর করবেন না। মশারির মধ্যে মশারি লাগাবেন না। যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তিনি বাকি প্রার্থীদের শত্রু ভাববেন না। যারা মনোনয়ন চাইবে তাদের মনোনয়নের মার্কা হবে নৌকা। তিনি বলেন, এবার বিদ্রোহ করলে খবর আছে।
বিদ্রোহ করলে সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কার। কাজেই অপকর্ম করবেন না। কারো ব্যাপারে গিবত করবেন না। আওয়ামী লীগ যদি আওয়ামী লীগের শত্রু হয়, বাইরের শত্রুর প্রয়োজন হবে না। গণসংযোগ কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হক। তাঁর সঙ্গে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ও যুব মহিলা লীগের নেত্রী সাবিনা আক্তার তুহিনের তীব্র বিরোধ রয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় মানুষের ভোগান্তির দিকে খেয়াল রাখতে নেতাকর্মীদের পরামর্শ দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘আজ শুক্রবার। আজান ও নামাজের সময় সমাবেশ করলে মানুষ বিরক্ত হয়। ভোট বাড়াতে গিয়ে ভোট কমে যাবে। রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করবেন না। প্রচারপত্র বিলি করতে গিয়ে নেতাকর্মীদের বাড়াবাড়িতে ফুটপাতের ছোটখাটো দোকান নষ্ট হলে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে। জনগণকে খুশি রাখতে হবে। আর নিজের দলের লোককে নিয়ে সমালোচনা করার বদ-অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পাঠাতে পারলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন বিল সংসদের আগামী অধিবেশনে পাস হবে। শেষ অধিবেশনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আসবে। ওই অধিবেশন এক সপ্তাহের মতো হতে পারে।
আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ইভিএম সীমিত পরিসরে ব্যবহার হোক, এটা আওয়ামী লীগ চায়। নির্বাচন কমিশনের কাছে সে দাবি জানানো হয়েছে। নির্বাচনে যেন জালিয়াতি না হয়, কেউ যেন ব্যালটে সিল দিয়ে বাক্স ভর্তি করতে না পারে, জাল ভোট যেন কেউ না দিতে পারে সে জন্যই ইভিএম।
বিএনপির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখন লোকে বলে ধানের শীষ পেটের বিষ। এই বিষ বাংলার মানুষ আর পান করবে না।’ নির্বাচন সামনে রেখে সহিংসতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা ২০১৪ নয়, ২০১৮ সাল। বিএনপি নির্বাচন বানচালের লক্ষ্যে নাশকতা করলে সমুচিত জবাব দেবে জনগণ। বিএনপি সোজা পথে ক্ষমতায় যেতে চায়, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। কারণ তারা বুঝে ফেলেছে যে জনগণ তাদের চায় না।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তাঁর চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় উপযুক্ত জায়গা। আদালতও সেটি বলেছেন। তাহলে সরকারের ভুল কোথায়? খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে সরকার রাজনীতি করেনি। রাজনীতি করছে বিএনপি।
গণসংযোগকালে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ। আওয়ামী লীগের সাত দিনের নির্বাচনী গণসংযোগ কর্মসূচির পঞ্চম দিনে গতকাল গাবতলী ছাড়াও খিলগাঁও থানা আওয়ামী লীগের গণসংযোগ কর্মসূচিতে অংশ নেন ওবায়দুল কাদের। বিকেল ৪টায় খিলগাঁও রেলগেট এলাকায় এই গণসংযোগ কর্মসূচি পালিত হয়।