রবিবার, মে ৫, ২০২৪
প্রচ্ছদইন্টারভিউনির্বাচন সামনে রেখে ঘর গোছাতে মনোযোগী আওয়ামী লীগ

নির্বাচন সামনে রেখে ঘর গোছাতে মনোযোগী আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিনিধিঃ (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জোট সম্প্রসারণের চেয়ে নিজেদের ঘর গোছাতেই বেশি মনোযোগী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, সবার আগে প্রয়োজন দলকে শক্তিশালী করা। কারণ ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিই এখনো মূল ফ্যাক্টর। এরই অংশ হিসেবে শাসক দলের নেতারা আপাতত তৃণমূল পর্যায়ে নিজ সংগঠনকে চাঙ্গা করতেই ব্যস্ত। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে অসাম্প্রদায়িক বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনকে দিয়ে ধারবাহিক কিছু কর্মসূচি করানোর পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, অসাম্প্রদায়িক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল মহাজোটে সব সময়ই স্বাগতম। তবে এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ দলকে গোছাতেই তৎপর জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় নিজের শক্তিতে বিশ্বাসী। অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের শক্তিতে আওয়ামী লীগ বলিয়ান হতে চায় না।

এ বিষয়ে ১৪ দলের মুখপাত্র এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম অবশ্য বলেছেন, ১০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের বৈঠক রয়েছে। এই বৈঠকে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ১৪ দলের করণীয় এবং জোটগতভাবে নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করা হবে। এর আগে পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সারাদেশে দলীয় সাংগঠনিক সফরে বের হয়েছেন। গত রবিবার পর্যন্ত অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতারাই ঢাকার বাইরে নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকাতেই রয়েছেন। ওই সফর থেকে ফিরে তারা ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে বসবেন।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের অন্যতম শরিক জোট ১৪ দলের নেতারা অবশ্য আওয়ামী লীগের এই মনোভাবকে ভালো চোখে দেখছেন না। ১৪ দলের নেতাদের দাবি, আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগে নিজেরাই সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক সফর শুরু করে দিয়েছে। এমনকি তারা গণভবনে বৈঠক করে বিভিন্ন আসনে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়াও শুরু করে দিয়েছে। এসব কাজের কোথাও শরীক দলগুলোকে ডাকা হচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুর রহমান সেলিম বলেন, আওয়ামী লীগ দলগতভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ভালো কথা। কিন্তু শরীক দলগুলোকে ডেকে তাদের মতামত নেয়ার প্রয়োজনীয় সময় এখন এসেছে।

জোট সম্প্রসারণের যে তৎপরতা ১৪ দল শুরু করেছিল তার অগ্রগতি কত দূর জানতে চাইলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি আপাতত নেই। পুরো প্রক্রিয়াটা থমকে আছে। তিনি বলেন, শুধু নির্বাচনে জেতার জন্য নয়, মতাদর্শিকভাবেও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে গেলে আমাদের অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক, সামাজিক এবং পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে হবে। এ বিষয়ে নুরুর রহমান সেলিম বলেন, ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, পংকজ ভট্টাচার্যের গণঐক্য, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টির মতো অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ১৪ দল সম্প্রসারণ করা যেতে পারে।

উল্লেখ্য, এর আগে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, ওবায়দুল কাদের, রাশেদ খান মেননসহ কয়েকজনকে জোট সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে বলা হয় মহাজোটের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে। তবে এই উদ্যোগ তেমন একটা ফলপ্রসূ হয়নি। জোট সূত্রে জানা যায়, জোটের প্রভাবশালী নেতাদের পক্ষ থেকে একাধিকবার জোটভুক্ত হওয়ার জন্য বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। প্রতিবারই এই দুই বড় দলের নেতারা ১৪ দলের নেতাদের জোটে আসতে অসম্মতি জানিয়েছেন। তবে জোটে না আসলেও সিপিবি এবং বাসদ অসাম্প্রদায়িক শক্তির মিত্র হিসেবে ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে ‘সুসর্ম্পক’ বজায় রেখে চলতে চায়। তবে জাকের পার্টি, তরিকত ফেডারেশনসহ বেশ কয়েকটি ছোট দল নির্বাচনের আগে মহাজোটে অর্ন্তভুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন জোটের নেতা।

এদিকে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চ, ইমাম-ওলামা সমন্বয় পরিষদ, বিভিন্ন পেশাজীবী নারী সংগঠন ও ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে ইতোমধ্যে মতবিনিময় সম্পন্ন করেছে ১৪ দল। এসব মতবিনিময় সভায় জোটের নেতারা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে এ সকল পেশাজীবী, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক শক্তিকে তাদের পাশে চেয়েছেন। ১৪ দলের এই চাওয়ার প্রেক্ষিতে এ সব সংগঠনের নেতারাও ১৪ দলের সঙ্গে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, জামায়াত শিবিরের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিকল্পে অসাম্প্রদায়িক শক্তির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক এবং পেশাজীবী সংগঠন ১৪ দলের সঙ্গে ছিল এবং থাকবে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার ২৫টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সাম্প্রদায়িকতা এবং জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চের দ্বিতীয় কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয় । এই কনভেনশনের একটা বড় অংশ জুড়েই ছিল ১৪ দলের শরীকদের উপস্থিতি। নির্বাচনের আগে এ ধরনের বিভিন্ন সম্পূরক শক্তিতে সক্রিয় করার চিন্তা ভাবনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। এই শক্তিগুলো উত্থানের ফলে মূলত লাভ হবে আওয়ামী লীগেরই। কারণ এসব অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী এসব সংগঠনের মূল ভাবনা-‘জামায়াত-হেফাজত-শিবির-জঙ্গি বিরোধী চেতনা’ এবং আওয়ামী লীগের ভাবনা একই ধরনের। হুসেইন মোহম্মদ এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে মহাজোটে থাকবে কি থাকবে না এ বিষয়ে রাজনৈতিক কৌশল অনুযায়ী এগুবে আওয়ামী লীগ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ