বুধবার, মে ২২, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনখাতুনগঞ্জের ব্যবসা থেকে শিল্পপতি

খাতুনগঞ্জের ব্যবসা থেকে শিল্পপতি

১৯৮৬ সালে পড়ালেখাশেষে তরুণ আবুল বশর চৌধুরী খাতুনগঞ্জে ব্যবসা শুরু করেন। পাঁচ বস্তা জিরা, পাঁচ বান্ডেল দারুচিনি ও এক কার্টন এলাচি দিয়ে শুরু তাঁর ব্যবসা। মসলার কেনাবেচা করতে করে তিনি আজ বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি। বর্তমানে বছরে তাঁর প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপ (সাবেক মাসুদ অ্যান্ড ব্রাদার্স) লেনদেন হয় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

আরেক তরুণ সাইফুল আলম মাসুদ ছোট্ট দোকান নিয়ে শুরু করলেন ঢেউটিন কেনাবেচা। মেধা ও বুদ্ধি খাটিয়ে এবং অক্লান্ত পরিশ্রম করে আজ তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ঢেউটিন তৈরির কারখানা। কর্ণফুলী নদীর তীরে পশ্চিম পটিয়ায় রয়েছে তাঁর সিমেন্ট, ভোজ্য তেল, চিনি, ব্যাগ, সিআর কয়েলের কারখানা। বেসরকারি ৭টি ব্যাংকের অধিকাংশ মালিকানা তাঁর। রয়েছে পরিবহন ব্যবসা। দেশের অন্যতম ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকও। এখন সাইফুল আলম মাসুদের প্রতিষ্ঠান বছরে লেনদেন করে পাঁচ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

শুধু এই দুই ব্যবসায়ী নয়, স্বাধীনতার আগে-পরে খাতুনগঞ্জে ব্যবসা করে করেছেন আরো অনেকে। এদের মধ্যে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার মরহুম আবুল খায়েরের মালিকানাধীন আবুল খায়ের গ্রুপ, একই জেলার আবুল হাশেমের মালিকানাধীন পারটেক্স গ্রুপ, ঢাকার কেরানীগঞ্জের সুফী মিজানুর রহমানের পিএইচপি গ্রুপ, চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার খলিলুর রহমানের কেডিএস গ্রুপ, একই থানার আবু তৈয়ব ও আবুল কালাম ভ্রাতৃদ্বয়ের মালিকানাধীন টিকে গ্রুপ, চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার মরহুম মোহাম্মদ ইলিয়াছের ইলিয়াছ ব্রাদার্স, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার মরহুম মোস্তাফিজুর রহমানের মালিকানাধীন মোস্তফা গ্রুপ, চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার নুরুল ইসলাম বিএসসির মালিকানাধীন সানোয়ারা গ্রুপ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ননী গোপাল সাহার মালিকানাধীন এনজিএস গ্রুপ।

সেরা এই ১০ গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে বছরে লেনদেন হয় দেড় হাজার কোটি টাকা থেকে শুরু করে সাত হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত। এঁদের প্রত্যেকের ব্যবসার গড় বয়স ৩০ বছরের বেশি হবে না। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের কাছে এঁরা একেকজন কিংবদন্তি।

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ বলেন, খাতুনগঞ্জের অফিসে না এলে আমার ভালো লাগে না। আমাদের কাছে খাতুনগঞ্জ সৌভাগ্যের কেন্দ্রস্থল। টিকে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম জানান, বর্তমানে তাদের গ্রুপের বার্ষিক লেনদেন দুই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা।

এসব সৌভাগ্যবান ব্যবসায়ীদের উত্থান পর্ব ছিল খুবই সাধারণ। আন্তরিকতা, সততা, শ্রম, নিষ্ঠা ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এঁরা নিজেদের তিলে তিলে গড়া ছোট্ট প্রতিষ্ঠানকে কালক্রমে বিশাল শিল্প প্রতিষ্ঠানে রূপ দিয়েছেন। শুরুর দিকে এঁদের কেউ কেউ পণ্য কেনাবেচার ছোটখাটো দালালি পর্যন্ত করেছেন। এঁদের কেউ ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে খাতুনগঞ্জে এসেছেন প্রতিষ্ঠা লাভের আশায়। আবার কেউ এসেছেন কাস্টমসের চাকরি ছেড়ে। শেষ পর্যন্ত খাতুনগঞ্জ তাঁদের কাউকেই খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়নি।

পারটেক্স গ্রুপের প্রধান আবুল হাশেম জানান, স্বাধীনতার পর তিনি খাতুনগঞ্জে এসে খাদ্যসামগ্রী ও সিআই শিট আমদানির ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে তাঁর গ্রুপের বার্ষিক লেনদেন সম্পর্কে তিনি কোনো তথ্য জানাতে পারেননি। খাতুনগঞ্জে তাঁর একটি ব্যবসায়িক অফিস রয়েছে। কিন্তু মূল ব্যবসা পরিচালনা করেন ঢাকা থেকে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ