বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর পরিস্থতি নিয়ে জনমনে উৎকন্ঠার মধ্যে রাস্তায় যানবাহনও কমে এসেছে। নগরীর বিভিন্ন সড়কে গণপরিবহন কিছুটা কম দেখা গেছে। মহাসড়কে যানবাহন চলাচলও অনেক কম। এদিকে রায়ের পর যে কোন ধরনের নাশকতা মোকাবেলায় নগরী ও জেলায় ৫২০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ১২ প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে রাখা হয়েছে। নগরী ও জেলার ৪৪টি পয়েন্টে র্যাবের টহল টিমও সক্রিয় আছে। সড়ক-মহাসড়কে গাড়ি থামিয়ে চলছে তল্লাশি। জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় বিএনপি-জামায়াতের ১৪৮ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নগরীতে গ্রেফতার করা হয়েছে ২৫ জনকে।
জঙ্গি হামলা মোকাবেলায় যে ধরনের প্রস্তুতি থাকে সেই ধরনের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে পুলিশ মাঠে আছে বলে জানিয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) পলাশ কান্তি নাথ। খালেদার বিরুদ্ধে জিয়া এতিমখানা দুর্নীতির মামলায় বৃহস্পতিবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার জজ আদালতে রায় ঘোষণা হবে। এই রায়কে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে নিরাপত্তার বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি পর্যাবেক্ষণে আছেন চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) নূরে আলম মিনা। তিনি জানান, ভোর ৪টা থেকে আড়াই হাজার ফোর্স জেলার শতাধিক স্পটে অবস্থান নিয়েছে। জেলার অধীন ১৭৩ কিলোমিটার মহাসড়কের উপর সর্বোচ্চ নজরদারির কথা জানিয়েছেন এসপি।
‘হাটহাজারী-বাঁশখালীসহ কয়েকটি উপজেলা সদরে পুলিশের সঙ্গে ৮ প্লাটুন বিজিবিও রাখা হয়েছে। নির্দেশ পেলেই বিজিবি মুভ করবে। রায়ের পর প্রতিক্রিয়া কি আসে, সেটা দেখব। তারপর আরও প্রস্তুতি আমাদের আছে। মহাসড়কের বর্তমান পরিস্থতি নিয়ে এসপি বলেন, যাত্রীবাহী গাড়ি কম চলছে। পণ্যবাহী গাড়ি আছে। তবে অন্যান্য দিনের চেয়ে যানবাহন অনেক কম দেখা যাচ্ছে।
এডিসি পলাশ কান্তি নাথ জানান, ২ হাজার ৭০০ ফোর্স নগরীতে মোতায়েন আছে। এর বাইরে থানার পুলিশ আছে। চার প্লাটুন বিজিবি সার্কিজ হাউজে রাখা হয়েছে। বোম্ব ডিজপোজাল ইউনিট এবং কুইক রেসপন্স টিমের সদস্যরাও মাঠে আছেন। নগর পুলিশের সিদ্ধান্তে নগরীর সিমেন্ট ক্রসিং থেকে বিমানবন্দর সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। বিমান যাত্রীদের বিকল্প পথ ব্যবহার করতে হচ্ছে। ওই সড়কে রাষ্ট্রায়ত্ত তিনটি তেলস্থাপনাসহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান আছে।
এদিকে ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যেও বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে মিছিল হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১২৮ জন বিএনপি নেতাকর্মী এবং ২০ জন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা সবাই আগের নাশকতা মামলার আসামি বলে জানিয়েছেন তিনি।
জেলায় গ্রেফতার হওয়া ১৪৮ জনের মধ্যে সীতাকুণ্ডে ১৫, সন্দ্বীপে ৪, ফটিকছড়িতে ৯, হাটহাজারীতে ৪২, রাউজানে ৮জন, রাঙ্গুনিয়ায় ৪, বোয়ালখালীতে ৭ জন, পটিয়ায় ৭, আনোয়ারায় ৩ জন, চন্দনাইশে ৫, সাতকানিয়ায় ৬, লোহাগাড়ায় ৫, বাঁশখালীতে ১৫, ভুজপুর থানায় ১০ জন এবং জোরারগঞ্জ থানায় ৮ জন আছেন।
নগর পুলিশের এডিসি পলাশ কান্তি নাথ জানিয়েছেন, নগরীতে গত ২৪ ঘণ্টায় অভিযান চালিয়ে বিএনপির ২০ জন এবং জামায়াত-শিবিরের ৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।