বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪
প্রচ্ছদদেশজুড়েচট্টগ্রাম বিভাগহোটেল শৈবাল লিজ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে ১ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে অর্ধদিবস হরতাল

হোটেল শৈবাল লিজ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে ১ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে অর্ধদিবস হরতাল

কক্সবাজারে পর্যটন করপোরেশনের হোটেল শৈবালসহ ১৩৫ একর জমি লিজ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে ১ ফেব্রুয়ারি অর্ধদিবস হরতাল ঘোষণা করেছে কক্সবাজার সম্পদ রক্ষা আন্দোলন ও কক্সবাজার নাগরিক সমাজসহ স্থানীয় ২২টি সংগঠন। ২৩ জানুয়ারী বিকালে কক্সবাজার সম্পদ রক্ষা আন্দোলনের নেতা ও সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আলী এই ঘোষণা দেন। আর আগে শৈবাল হোটেল নিয়ে চলা সভায় হট্টগোল হয়েছে। দুপুর ১টার দিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভা চলার মাঝেই এই হট্টগোল হয়। ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল। আলোচনা সভার শেষ মুহূর্তে ১টার দিকে সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর ও কামাল উদ্দীন রহমান পেয়ারুসহ ১০/১৫ জনের একদল লোক হঠাৎ স্লোগান দিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে উঠে। এসময় তারা শৈবাল রক্ষা ও ওরিয়ন গ্রুপের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেয়। এক পর্যায়ে তারা সভা চলা অবস্থায় জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে ঢুকে পড়েন। তারা ভিতরে গিয়ে পর্যটনমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেন। এরপর তারা শৈবাল রক্ষা ও ওরিয়ন গ্রুপ নিয়ে মন্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে তারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এতে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এসময় মন্ত্রী তাদের শান্ত হতে বলেন এবং তাদের দাবি প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন বলে আশ^স্ত করেন। পরে উপস্থিত নেতাকর্মীরা শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং সেখান থেকে বের হয়ে আসেন।  কক্সবাজার সম্পদ রক্ষা আন্দোলনের নেতা ও সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আলী বলেন, কক্সবাজার অনেক সম্পদ সংকুচিত হয়েছে। সর্বশেষ শৈবালের মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটিও বেহাত হতে চলেছে। এটা কক্সবাজারবাসীর অমূল্য সম্পদ। পর্যটন করপোরেশন বিতর্কিত ওরিয়ন গ্রুপের সাথে চুক্তি করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তা কখনো বাস্তবায়ন হতে দেবো না আমরা। এই জন্য আমরা কক্সবাজারবাসীকে সাথে আন্দোলন করবো। কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক এইচএম নজরুল ইসলাম জানান, গোপনে ১৩৫ একর জমিসহ ঐহিত্যবাহী শৈবাল লিজের প্রক্রিয়া শুরু হয়। দীর্ঘদিন পর তা প্রকাশ হলো। কিন্তু কক্সবাজারবাসী ও পর্যটনের স্বার্থে এই লিজ প্রক্রিয়া অত্যন্ত ক্ষতি করবে। এই লিজ প্রক্রিয়া বাতিল করার দাবিতে হরতাল ঘোষণা করা হয়েছে। হরতালের দু’দিন আগে জনসমর্থন সৃষ্টির লক্ষ্যে কক্সবাজারে পথসভা অনুষ্ঠিত হবে।

২৩ জানুয়ারী (মঙ্গলবার) দুপুরে আলোচিত পর্যটন হোটেল শৈবাল ইস্যুতে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী একেএম শাহাজাহান কামাল বলেছেন, কক্সবাজারের হোটেল শৈবালের ইস্যুতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ইস্যু নিয়ে কক্সবাজারবাসীর প্রতিক্রিয়া জানার জন্যই শুধু কক্সবাজার এসেছি। আপনাদের প্রতিক্রিয়া আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করবো।

এসময় মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকার উন্নয়নবান্ধব সরকার। প্রধানমন্ত্রী ধ্যান-জ্ঞান জুড়েই দেশের উন্নয়ন। আর এই উন্নয়ন হলো জনগণের জন্য। তাই প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত দেবেন। এই জন্য আমি কক্সবাজারবাসীর প্রতিক্রিয়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবো।’
মন্ত্রী শাহাজাহান কামাল আরো বলেন, ‘কক্সবাজার হচ্ছে বাংলাদেশের আলো। তাই কক্সবাজারকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনেক স্বপ্ন। আপনারা দেখছেন উন্নয়নের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী সেই স্বপ্নের প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন। আমি আশা রাখবো, প্রধানমন্ত্রীর এই উন্নয়নে কক্সবাজারবাসী সহযোগিতা করবেন।

সভায় জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, শৈবাল রক্ষা এখন কক্সবাজারবাসীর প্রাণের দাবি। আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্য, দেশের জন্য। শৈবালের জমি কক্সবাজারে বাণিজ্যমেলা, ইজতেমা ও গাড়ি পার্কিংসহ উন্নয়নমূলক আরো অনেক উপকারে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে জনগণের ক্ষতি করে সেখানে বড় হোটেল হওয়ার প্রয়োজন নেই। এটা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান বলেছেন, হোটেলে ভরে গেছে কক্সবাজার শহর। এই শহর এখন ইট-কংক্রিটের শহরে পরিণত হয়েছে। কক্সবাজারের সবকিছু এখন এই শহরকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। এই কারণে যানজটে চলাফেরাই করা যাচ্ছে না। তাই আমরা আর কোনো বড় হোটেল এই শহরে চাই না। আর কোনো বড় হোটেল শহরে হতে দেয়া যাবে না।

জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব এসএম গোলাম ফারুক, পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামান কবির, সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. নাঈম হাসান, ওরিয়ন গ্রুপের পরিচালক লে. জেনারেল শাব্বির আহমদ, জেলা জাসদের সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল ও কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের।
এছাড়াও কক্সাজারের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত কক্সবাজারের শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা শৈবাল ইস্যু নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন। সবাই তীব্র বিরোধিতা করে কক্সবাজারের এই অমূল্য সম্পদকে বিতর্কিত ওরিয়ন গ্রুপের হাতে তুলে না দিতে আহ্বান জানান। আলোচনা সভার পরে মন্ত্রীসহ প্রতিনিধিদল শৈবাল হোটেলসহ পুরো এলাকা পরিদর্শন করেন।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) এর আওতায় শৈবালের ১৩৫ একর জমিতে অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ‘ডেভেলপমেন্ট অব ট্যুরিজম রিসোর্ট এন্ড এন্টারটেইনমেন্ট ভিলেজ এট পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের মাধ্যমে পর্যটন শৈবালের স্থাপনাসহ ১৩৫ একর জমি দীর্ঘমেয়াদী লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে ওরিয়ন গ্রুপ। সম্প্রতি শৈবালের জমিতে ওরিয়ন গ্রুপ তাদের সাইনবোর্ডও তোলে। এরপর থেকে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষের মধ্যে। নাগরিক সমাজের ব্যানারে কক্সবাজারের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মানববন্ধন, স্মারকলিপিসহ নানা আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। এর ফলে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে প্রকল্পটি পর্যালোচনার জন্য পুনরায় পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ইতোমধ্যে হোটেল শৈবালের ইস্যু নিয়ে পত্রিকায় দু’টি তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ