শনিবার, মে ১৮, ২০২৪
প্রচ্ছদইন্টারভিউপ্রধানমন্ত্রীর কাঁধে চট্টগ্রামের উন্নয়ন : চলছে পাওয়া না পাওয়ার হিসাব

প্রধানমন্ত্রীর কাঁধে চট্টগ্রামের উন্নয়ন : চলছে পাওয়া না পাওয়ার হিসাব

চট্টগ্রাম অফিস (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

চলতি বছরেই শেষ হচ্ছে বর্তমান সরকারের মেয়াদ। গত সংসদ নির্বাচনের আগে ঐতিহাসিক লালদীঘির মাঠের শেষ জনসভায় চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজ কাঁধে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন মহাজোট নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে সরকার গঠনের এক বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম সফরও করেছিলেন তিনি। আর কিছুদিন পর শেষ হচ্ছে এই সরকারের মেয়াদ। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয় নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই সরকারের আমলে চট্টগ্রাম কী পেল, এখন সেই হিসাব মেলাবার পালা। আজ ১২টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হলেও এই সরকারের শেষ মুহূর্তে আরও একবার প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘটবে চট্টগ্রামে। তখনও বেশ কিছু প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। তাই পাওয়া ও না পাওয়ার হিসাব মেলাতে ততদিন অপেক্ষা করতে হবে চট্টগ্রামবাসীকে।
সরকার গঠনের পর ২০১০ সালের ২ জানুয়ারি বহদ্দারহাট মোড়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অধীনে ফ্লাইওভারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে-সময় বহদ্দারহাট ছাড়াও মুরাদপুর, ষোলশহর দুই নম্বর গেইট, জিইসি মোড় ও কদমতলী ফ্লাইওভারের ভিত্তিপ্রস্তর ফলক উন্মোচন করা হয়েছিল। আগামী অক্টোবরে এসব প্রকল্পের মধ্যে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করা হতে পারে। এছাড়া যুক্ত হয়েছে দেওয়ানহাট মোড়ের ওভারপাসের উদ্বোধন। এসব প্রকল্প ছাড়াও শুধু সিডিএ’র মাধ্যমে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। নগরের অসংখ্য সড়কের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ হয়েছে এবং নেওয়া হয়েছে আরও অনেক প্রকল্প। শুধু সিডিএ’র ১৫ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে, শেষ হওয়ার পথে ১৩ প্রকল্প এবং প্রক্রিয়াধীন আরও ৮ প্রকল্প।
সিডিএ’র চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, ‘এ সরকারের সময়ে চট্টগ্রামের যে উন্নয়ন হয়েছে অতীতে কখনও তা হয়নি এবং হবে কি না সন্দেহ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজে নেওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তা রেখেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামের স্বার্থে আরও কিছু প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছে, যা এই সরকারের মেয়াদের শেষের দিকে সম্পন্ন হবে এবং লাভবান হবে চট্টগ্রামবাসী।’
কর্ণফুলী সেতু
সিডিএ’র উন্নয়ন প্রকল্প ছাড়াও এই সরকারের আমলে দৃশ্যমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামবাসীর অন্যতম প্রাণের দাবি কর্ণফুলী সেতুর উদ্বোধন। এর মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা কক্সবাজারের সাথে চট্টগ্রামের যাতায়াত অনেক সহজ হয়েছে। ঝুলন্ত না ক্যাবল-স্টেইড ব্রিজ হবে তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলতে থাকা এই ব্রিজের উদ্বোধন হওয়ায় উন্নয়নের গতি পায় বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল।
কর্ণফুলী গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেড
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমসের বদলে চট্টগ্রামের জন্য পৃথক গ্যাস সিস্টেমস চালুর দাবি জানিয়ে আসছিল। আর ব্যবসায়ীদের এই দাবি পূরণ হয়েছে এই সরকারের আমলে। বাখরাবাদ থেকে পৃথক করে চট্টগ্রামের জন্য কর্ণফুলী গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেড নামে নতুন একটি সংস্থা উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।
হালিশহর সিএসডি খাদ্য গুদাম
ইপিজেড-এ দেশের সর্বোচ্চ খাদ্য গুদামে রূপ নিয়েছে হালিশহর সিএসডি গোডাউন। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে মাত্র এক টাকার বিনিময়ে ৫৭ একর আয়তনের বিশাল এই খাদ্য গুদামটি ইপিজেডে স্থাপনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকাকে (বেপজা)। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরপরই দেশের দুর্যোগকালীন খাদ্য মজুদের জন্য ইপিজেডের বরাদ্দ ও স্থাপনা ভেঙে আবারও তা গুদামে রূপান্তরের প্রকল্প নেন। ২১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এর ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে দেড়লাখ টনে উন্নীত করতে নতুন করে আরও ৯১টি গুদাম নির্মাণ করা হয়। আজ এই প্রকল্পের উদ্বোধন করছেন শেখ হাসিনা।
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন
এশীয় অঞ্চলের পিছিয়ে থাকা নারীদের জন্য চট্টগ্রাম মহানগরের বায়েজীদ থানাধীন আরেফীন নগরের পাহাড়ি এলাকায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন শেখ হাসিনা, ২০১১ সালের ১ এপ্রিলে।
উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হওয়া অন্যান্য উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলো হলো মনসুরাবাদ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন উদ্বোধন, ষোলশহরে এলজিইডি ভবন উদ্বোধন, বিদ্যুৎ সমস্যা নিরসনে দোহাজারি, শিকলবাহা ও হাটহাজারী পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, চট্টগ্রাম আদালত ভবনের নতুন ভবন উদ্বোধন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল থেকে পোর্ট এক্সেস রোড পর্যন্ত ফ্লাইওভার উদ্বোধন, মিরসরাই মহামায়া প্রকল্প উদ্বোধন, চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, ডিটি-বায়েজীদ সংযোগ সড়কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, আবাসন সমস্যা নিরসনে সিডিএ স্কয়ার-এর ফ্ল্যাট প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন সম্প্রসারণ প্রকল্প, কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং প্রকল্প প্রভৃতি।
পাওয়ার প্রত্যাশা
গত সংসদ নির্বাচনের আগে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণের ঘোষণা ছিল নির্বাচনী ইশতেহারে। সে অনুযায়ী সেতু বিভাগের অধীনে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল এবং তিনটি স্থানকে নির্ধারণও করা হয়েছিল। পরবর্তীতে নেভাল একাডেমি পয়েন্ট দিয়ে টানেল নির্মাণের জন্য স্থান চূড়ান্ত হলেও প্রায় ৬০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা এখনও হয়নি। আগামীতে হয়তো এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হতে পারে। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা থাকলেও এখনও তা হয়নি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ