মঙ্গলবার, মে ৭, ২০২৪
প্রচ্ছদঅর্থ ও বানিজ্য সময়ময়দা ব্যবসায়ীকে শতকোটি টাকা ঋণ দিয়ে বিপাকে ব্যাংক

ময়দা ব্যবসায়ীকে শতকোটি টাকা ঋণ দিয়ে বিপাকে ব্যাংক

ময়দা ব্যবসায়ীকে শতকোটি টাকা ঋণ দিয়ে বিপাকে ৩ ব্যাংকময়দা ব্যবসায়ীকে শতকোটি টাকা ঋণ দিয়ে বিপাকে ৩ ব্যাংক চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ভোগ্যপণ্য বেচাকেনার ব্রোকারি করতেন আবু সৈয়দ। ব্রোকারি থেকে শুরু করেন ব্যবসা। প্রথম দিকে চাল-ডালের ব্যবসা করলেও একসময় মনোনিবেশ করেন ময়দার ব্যবসায়। চাক্তাই এলাকার দরবার স্টোর থেকে গড়ে তোলেন দরবার ফ্লাওয়ার মিল। দীর্ঘদিন ধরে খাতুনগঞ্জের পরিচিত মুখ হওয়ায় একাধিক ব্যাংক থেকে পান শতকোটি টাকার ঋণ সুবিধা। পর্যাপ্ত জামানত না থাকায় এ ঋণ আদায় নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় ব্যাংকগুলো।

সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের তথ্যমতে, আবু সৈয়দের কাছে পূবালী ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখার দেয়া প্রায় ৩০ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। ২০১০-১৩ সালের মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠানের নামে এই ঋণসুবিধা গ্রহণ করেন আবু সৈয়দ। এর মধ্যে মেসার্স দরবার ফ্লাওয়ার মিলের নামে প্রায় ২০ কোটি টাকা, মেসার্স আবু সৈয়দের নামে ৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা ও জেসি ফুড প্রডাক্টসের নামে আড়াই কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও ঋণ পরিশোধ না করায় গত বছর প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করে ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট শাখা।

জানা গেছে, পূবালী ব্যাংকের ৩০ কোটি টাকার বিপরীতে সিডিএর অনন্যা আবাসিকের পাশে ৮০ শতক ও কল্পলোক আবাসিকের পাশে ৩০ শতক জমি বন্ধক রয়েছে আবু সৈয়দের। এই বন্ধকি সম্পত্তির বর্তমান বাজারদর সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ১৬ কোটি টাকা। বন্ধকি সম্পত্তির মূল্যের চেয়ে পাওনা টাকা বেশি হওয়ায় ঋণের টাকা পরিশোধ হওয়া নিয়ে চিন্তিত ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

পূবালী ব্যাংকের এজিএম ও খাতুনগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, বহু চেষ্টার পরও ঋণ পরিশোধ না করায় দরবার ফ্লাওয়ারের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। একসময় ভোগ্যপণ্যে লোকসান দিলেও আটা-ময়দার ব্যবসায় মুনাফা করছেন আবু সৈয়দ। কিন্তু এর পরও ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করছেন না তিনি।

পূবালী ব্যাংক ছাড়াও আবু সৈয়দের কাছে ব্যাংক এশিয়া খাতুনগঞ্জ শাখার ২৯ কোটি টাকা ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক চাক্তাই শাখার প্রায় ৩০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। দীর্ঘদিন পাওনা পরিশোধ না করায় এর মধ্যে আবু সৈয়দের প্রতিষ্ঠানের নামে চারটি চেক ডিজ-অনারের মামলা করেছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক।

ব্যাংক দুটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ছোট প্রতিষ্ঠান হলেও লেনদেন ভালো হওয়ায় আবু সৈয়দকে বেশি ঋণ দেয়া হয়। কিন্তু ২০১৩ সালের দিকে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায় লোকসান দেন এই ব্যবসায়ী। এরপর ব্যাংকের টাকা আটকে যায়। গত কয়েক বছর ঋণের কোনো টাকাই ফেরত দেননি তিনি। তবে সম্প্রতি কিছু টাকা পরিশোধের মাধ্যমে ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখার চেষ্টা করছেন। ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কৌশলে ঋণের টাকা আদায়সহ তাকে পর্যবেক্ষণ করছেন। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্ধারিত কিস্তি না দিলে আগামী বছরের শুরুতেই অর্থঋণ আদালতে মামলার প্রস্তুতি রয়েছে দুই ব্যাংকের।

এ বিষয়ে দরবার ফ্লাওয়ার মিলের স্বত্বাধিকারী আবু সৈয়দ বলেন, ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়, বিশেষ করে ২০১৩ সালে ছোলা আমদানিতে বড় লোকসান হয়। ওই সময় ব্যাংক ও বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে বড় অংকের দেনা হয়ে যায়। গত কয়েক বছরে ব্যবসায়ীদের পাওনা পরিশোধ করেছি। এখন চেষ্টা করছি ব্যাংকের টাকা শোধ করতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোগ্যপণ্য ও ফ্লাওয়ার মিল (আটা-ময়দার) ব্যবসার নামে ব্যাংকঋণ নিয়েছেন আবু সৈয়দ। কিন্তু ব্যবসার পরিবর্তে জমি কিনতেই এই ঋণের বেশির ভাগ টাকা বিনিয়োগ করেছেন তিনি। ফলে ভোগ্যপণ্য ব্যবসায় হঠাত্ লোকসান হওয়ায় পুঁজির সংকটে ব্যবসা থেকে ছিটকে পড়েন। পরবর্তীতে ফ্লাওয়ার মিল ও আটা-ময়দার ব্যবসায় ভালো করলেও গড়িমসি করছেন ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে। তবে চট্টগ্রামের স্থানীয় বাজারে দরবার ফ্লাওয়ার মিলের আটা-ময়দার বেচা-বিক্রি খারাপ নয় বলে জানিয়েছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। আবু সৈয়দের বাড়ি পটিয়া উপজেলার বাথুয়া গ্রামে। ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাইয়ে দরবার স্টোরে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা এবং আনোয়ারা উপজেলার চাতুরী এলাকায় রয়েছে দরবার ফ্লাওয়ার মিল।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ