শুক্রবার, মে ২৪, ২০২৪
প্রচ্ছদইন্টারভিউবিদ্রোহী কবি নজরুলের ৩৭তম প্রয়াণ দিবস

বিদ্রোহী কবি নজরুলের ৩৭তম প্রয়াণ দিবস

ডেস্ক রিপোর্ট (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

গাহি সাম্যের গান/যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা ব্যবধান/যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-খ্রীস্টান/গাহি সাম্যের গান-এভাবেই কবিতার চরণে চরণে সাম্প্রদায়িকতাকে আঘাত করে সাম্যের গান গেয়েছেন নজরুল।

আবার আরেক কবিতায় বলেছেন, আমি মৃন্ময়, আমি চিন্ময়,/আমি অজর অমর অক্ষয়, আমি অব্যয়।/আমি মানব দানব দেবতার ভয়,/বিশ্বের আমি চির-দুর্জয়…

নিজেকে এভাবেই তুলে ধরেছেন এ বিদ্রোহী কবি। সাম্যবাদের কবি নজরুলের ৩৭তম প্রয়াণ বার্ষিকী আজ ১২ ভাদ্র মঙ্গলবার।

১৩৮৩ সালের এই দিনে চির অভিমানী কবির মহাকাব্যিক জীবনের অবসান ঘটে। দীর্ঘদিন চেতনাহীন নির্বাক থাকার পর ৭৭ বছর বয়সে ঢাকায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলাদেশের জাতীয় কবি।

৭৭ বছরে প্রাণের স্পন্দন থেমে গেলেও সৃষ্টির আলোয় আজো অমর হয়ে আছেন এই কবি। ক্ষুরধার লেখনির আঁচড়ে স্থান করে নিয়েছেন বাংলা সাহিত্য তথা পুরো বিশ্বসাহিত্যে। গল্প, কবিতা, উপন্যাস কিংবা সঙ্গীত-সাহিত্য ও শিল্পের সব শাখায় তাঁর আগমন ছিল ধূমকেতুর মতো।

আপন সৃষ্টির আলোয় নতুন দিনের আগমনী বার্তা দিয়ে এঁকে দিয়েছিলেন নবদিগন্তের উজ্জ্বল রেখা। তাই তো বাংলা সাহিত্যে তাঁর আগমন প্রসঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক গ্রন্থের উৎস্বর্গপত্রে লিখেছিলেন- ‘কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু, আয় চলে আয়রে ধূমকেতু/আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।’

সাহিত্য জীবনে তাঁর বিপুল সৃষ্টিকর্ম বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। তাঁর ছড়ানো দ্রোহী চেতনা কাঁপিয়ে দেয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ভিত। খ্যাতি পেয়েছেন বিদ্রোহী কবির। অভিষিক্ত হয়েছেন বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদায়। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসন-শোষণ থেকে উপমহাদেশের মুক্তির আন্দোলন এবং একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নজরুলের কবিতা ও গান ছিল অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। সংকট ও সম্ভাবনায় নজরুলের সৃষ্টিকর্ম বাঙালির জীবনে জুগিয়ে চলেছে নিরন্তর প্রেরণা।

নজরুলের কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ও বাংলা সাহিত্যকে দিয়েছে বিপুল সমৃদ্ধি। বৈচিত্র্যময় বাংলা গানের বিপুল বিশাল ভাণ্ডারটি তিনি গড়ে দিয়ে গেছেন। বাঙালীর চিন্তা-মনন ও অনুভূতির জগতকে নাড়া দিয়েছেন ভীষণভাবে।

কবির প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে নানা আয়োজনে পালিত হবে দিবসটি। সকালের সূর্যোদয়ের পর থেকে অগণন মানুষের শ্রদ্ধা-ভালবাসায় স্মরিত হবেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। একেবারে ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবির সমাধিসৌধে জানানো হবে ফুলেল শ্রদ্ধা।

এছাড়া প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে কবিকে নিবেদন করে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। রকমারি আয়োজনে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল এবং বেতার কেন্দ্রগুলোতে স্মরণ করা হবে বিদ্রোহী কবিকে। অনলাইন ও কাগজের দৈনিকগুলোতেও গুরুত্বসহকারে ছাপা হবে জাতীয় কবিকে নিবেদিত সংবাদ।

জাতীয় কবির প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার থেকে তিনদিনের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে নজরুল ইনস্টিটিউট। মঙ্গলবার জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে বসবে সমাপনী আয়োজন। এদিন থাকছে আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রথম অধিবেশন শুরু হবে বেলা ১১টায়। বিকেল ৪টায় শুরু হবে দ্বিতীয় অধিবেশন।

এতে একক কণ্ঠে নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করবেন খালিদ হোসেন, শাহীন সামাদ, খায়রুল আনাম শাকিল, ফেরদৌস আরা, সালাউদ্দিন আহমেদ, ইয়াকুব আলী খান, ইসয়ামীন মুশতারী ও খিলখিল কাজী। কবিতা আবৃত্তি মাহিদুল ইসলাম ও ঝর্ণা সরকার। দলীয় সঙ্গীত ও দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করবে ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষণার্থী শিল্পীবৃন্দ।

আর কবির মৃত্যুবার্ষিকীর একদিন আগেই সোমবার ‘নজরুল ইসলামকে কোন্ পরিচয়ে জানব’ শীর্ষক একক বক্তৃতার আয়োজন করে বাংলা একাডেমী। এতে একক বক্তৃতা করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমীর সভাপতি এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। কবির প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘আমারে দেবোনা ভুলিতে’ শীর্ষক শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠান ও কবি সম্মেলনের আয়োজন করেছে রাইটার্স ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ