সরকারের কাছ থেকে ‘বেশ কয়েকটি সমস্যার সমাধানের’ আশ্বাস পেয়ে চালের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলাবার সচিবালয়ে সরকারের তিনজন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিশেনের সাধারণ সম্পাদক কে এম লায়েক আলী বলেন, “কাল থেকে চালের দাম কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা করে কমে যাবে।”
চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে চালকল মালিক, আমদানিকারক, আড়তদার, পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এই সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এবং সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন। সাংবদিকদের উপস্থিতেতে সোয়া দুই ঘণ্টা আলোচনার পর চাল ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তোফায়েল বলেন, “বাধা দূর করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে সঙ্গে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। চাল আমদানি, উৎপাদন ও সরবারহে আগামী তিন মাস চটের বস্তার পরিবর্তে প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “যে যেভাবে আনতে পারেন চাল আনবেন, প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার দুই তিন মাসের জন্য রিল্যাক্স করে দিয়েছি। যেভাবে চাল আনতে পারেন আনেন, কেউ বাধা দেবে না। এছাড়া ভারত থেকে ট্রেনে করে রোহনপুর দিয়ে চাল আনার জন্যও পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তোফায়েল।
দুই দফা বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতির পাশাপাশি চালের মজুদ তলানিতে নেমে আসার প্রেক্ষাপটে সরকার গত অর্থবছরের শেষ দিকে চাল আমদানির উদ্যোগ নেয়। সেইসঙ্গে বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি উৎসাহিত করতে ২৬ শতাংশ থেকে শুল্ক নামিয়ে আনা হয় দুই শতাংশে।
সরকারি-বেসরকারি পর্যায় মিলিয়ে গত আড়াই মাসে রেকর্ড পরিমাণ চাল আমদানি হলেও বাজারে চালের দাম বাড়ছে, যার পেছনে মিল মালিকদের কারসাজিকে দায়ী করে আসছে সরকার। সরকারি হিসেবেই মোটা চালের দাম গত এক মাসে বেড়েছে ১৮ শতাংশ, এক বছরে বেড়েছে ৫০ শতাংশ। এখন বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোনো মোটা চাল নেই।
ধারাবাহিকভাবে চালের দাম বৃদ্ধির মধ্যে মজুদদারি বন্ধে প্রশাসন গত সপ্তাহে বিভিন্ন রাইস মিলে অভিযান শুরু করে। কুষ্টিয়ার খাজানগরে বাংলাদেশ চালকল মলিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদের চালকলে অভিযান চালিয়ে জরিমানাও করা হয়। কিন্তু রশিদকে জরিমানা করার পর এই কদিনে মিনিকেট চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চারশ টাকার মতো বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অন্যান্য চালের দাম। চালকলগুলোতে অভিযান চালাতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়ার প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বলেন, “এখন যেহেতু আপনাদের সাথে বৈঠক হল, তাই আমি সংশ্লিষ্টদের বলছি, এখন যাতে কোনো ব্যবসায়ী হয়রানীর শিকার না হয়।
পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে চাল পরিবহনে বিভিন্ন সমস্যা দূর করতেও সরকার পদক্ষেপ নেবে বলে আশ্বাস দেন বাণিজ্য মন্ত্রী। তার এই বক্তব্যের পর সভাকক্ষে উপস্থিত বেশ কয়েকজন চাল ব্যবসায়ী বলেন, দুই এক দিনের মধ্যেই চালের দাম কমতে শুরু করবে। বৈঠকের পর বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিশেনের সভাপতি আব্দুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, “ভালো একটি বৈঠক হয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যেই চালের দাম কমতে শুরু করবে।