শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়মানুষের জন্য কোন দু:খ নাই, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য তারা কাঁদছে

মানুষের জন্য কোন দু:খ নাই, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য তারা কাঁদছে

রামপাল কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রে সুন্দরবনের কোন ক্ষতি হবে না উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের একহাত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  আন্দোলনকারীদের রামপাল থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত পদযাত্রা করে দূরত্ব দেখে আসার পরামর্শও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ২৮ জানুয়ারি চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের প্রসঙ্গে বলেন, মানুষের জন্য কোন দু:খ নাই, মানুষের জন্য কোন কান্না নাই, মানুষের ভালমন্দ দেখার দরকার নাই, সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য তারা কাঁদছে। শেখ হাসিনা বলেন, রামপাল নিয়ে যারা আন্দোলন করছে তাদের আরেকটা অনুরোধ করব, তারা যেন সুন্দরবনে যান, রয়েল বেঙ্গলের সাথে দেখা করে তাদের জিজ্ঞেস করেন তাদের কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা। এটুকু যদি তারা করেন, যদি গিয়ে দেখে আসেন, একটা রিপোর্ট দেন, আমরা তাহলে বিবেচনা করতে পারি।

‘তাদের সঙ্গে একটু কথা বলে আসুক।  রয়েল বেঙ্গল অভুক্ত থাকলে তো আর উপায় নেই…।  ’ হাসির ছলে বলেন প্রধানমন্ত্রী।  ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) ৫৭ তম কনভেনশন উপলক্ষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের নিয়ে আরও বলেন, আন্দোলন তারা ঢাকায় বসে করেন, তারা কিন্তু জীবনেও কখনও রামপাল যাননি।  তারা যদি সেখানে একটু ঘুরে আসেন, যে কতদূর ওখান থেকে সুন্দরবন। আমি তো বলব, রামপালে যেয়ে ওখান থেকে যদি তারা পদযাত্রা শুরু করেন সুন্দরবন পর্যন্ত, তাহলে জানতে পারবে যে সুন্দরবন কতদূর। রামপাল স্থানটা দেখে ওখান থেকে পদযাত্রা করুক সুন্দরবন পর্যন্ত। এটা করার পর না হয় তারা আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাক।’ বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, রামপালে যখন আমরা কাজ শুরু করি তখন রাস্তাঘাট কিছুই ছিল না। একমাত্র নৌপথে যাওয়া যেত। এখন আস্তে আস্তে রাস্তাঘাট হচ্ছে।  একসময় তাদের হেলিকপ্টারে রামপাল দেখানো হয়েছে।  হেলিকপ্টারে দেখালে তো বুঝবে না।  এজন্য রামপাল স্থানটা দেখে ওখান থেকে পদযাত্রা করুক সুন্দরবন পর্যন্ত।

রামপাশে কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করে আন্দোলন করছে তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। সুন্দরবন রক্ষায় রামপাল প্রকল্প বন্ধের দাবিতে বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ২৬ জানুয়ারি অর্ধদিবস হরতালও পালন করেছে সংগঠনটি। বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রসঙ্গটি টানেন।  তিনি বলেন, দু‍ঃখের কথা না বলে পারি না।  রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সারা বিশ্বব্যাপী প্রচার করে বেড়াচ্ছে যে সুন্দরবন ধ্বংস হবে।  রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র রামপালে হচ্ছে, এটা কিন্তু সুন্দরবনে হচ্ছে না।  আর সুন্দরবন সেখান থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে পশুর নদীর তীরে। তিনি বলেন, সুন্দরবনের যে অংশ ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে সেখান থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে।  কাজেই সেখানে কোন ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নেই।

‘দ্বিতীয়ত আমরা যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটা করছি এটা হচ্ছে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্ল্যান্ট। পৃথিবীর সবথেকে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র আমরা তৈরি করছি।  সেখানে আমরা ৫ লাখ বৃক্ষরোপণ করার পরিকল্পনা নিয়েছি।  ইতোমধ্যে দেড় লক্ষ বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে।  সর্বোচ্চ উচ্চতায় চিমনি করা হচ্ছে।  কয়লার যে ছাইটা হবে, এদেশে যত সিমেন্ট কারখানা আছে, অনেকে ইতোমধ্যেই কন্ট্রাক্ট করে ফেলেছে যে তারা ছাইটা কিনে নিবে। কয়লা আনা হবে কভার্ড কার্গোতে করে যাতে নদী দূষিত না হয়।  ইতোমধ্যে সেখানে একটি খাল, ঘাসিয়া খাল নামে পরিচিত যেটা জাতির পিতা চালু করে দিয়ে গেছেন ১৯৭৪ সালে, পরবর্তীতে আর এটা তেমন ড্রেজিং কিংবা সংরক্ষণ হয়নি।  আমরা ঘাসিয়াখাল ড্রেজিং করেছি।  আরও ৮০টা খাল ড্রেজিং করার জন্য প্রকল্প পাস করেছি।  …সুতরাং সুন্দরবনের ক্ষতি হবার কোন সম্ভাবনা নাই।’ বলেন শেখ হাসিনা।

আন্দোলনকারীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মাত্র কিছুদিন আগে প্রায় এক হাজার মেট্রিকটন কয়লাবাহী একটি জাহাজ সুন্দরবনের কাছে ডুবে গেছে।  যারা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে এত দুশ্চিন্তায় ভুগছেন এবং আন্দোলন করছেন আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করব, এই যে এক হাজার মেট্রিকটন কয়লা যে পানিতে ডুবে গেল, তাতে ওই এলাকায় কতটুকু ক্ষতি হয়েছে পরিবেশের।  সেই ব্যাপারে তারা সেখানে গেছেন কিনা, দেখেছেন কিনা বা ওটা নিয়ে কোন যাচাই করেছেন কিনা। তাদের তো যাওয়া উচিৎ, কিন্তু তারা সেখানে যাননি। বক্তব্যে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে কয়লা উত্তোলন করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রসঙ্গটিও আনেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে কয়লা দিয়ে আমরা দিনাজপুরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র শুরু করলাম। ২০০০ সালে সেখানে প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু করেছি।  দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হয়েছে।  তৃতীয় পর্যায়ে আরও একটি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে।  এটা কিন্তু সাধারণ মানের একটা বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটা আলট্রা ক্রিটিক্যাল সুপার বিদ্যুৎকেন্দ্র না।  কয়লা যাচ্ছে ট্রলিতে করে এবং সেখানে ডাম্প করে রাখা হচ্ছে।

‘ওই এলাকায় কতটুকু পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে ? কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে ধানগাছ রোপণ করা হয়েছে।  সেখানে আমবাগান, আমবাগানে আমও যে হচ্ছে, সেটাও কিন্তু দেখেছি। সেখানে প্রচুর পরিমাণে ফসল হচ্ছে।  ওখানকার মানুষের কোন অভিযোগ নেই।  পরিবেশ নষ্ট হয়েছে, মানুষের স্বাস্থ্য নষ্ট হয়েছে, ক্ষতি হয়েছে এমন কোন অভিযোগ নেই। দিনাজপুর এত ঘনবসতি, এরকম একটি জায়গায় একটা সাধারণ মানের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যদি চালু থাকে, যেখানে আজ পর্যন্ত কোন অভিযোগ উঠেনি যে পরিবেশের কোন ক্ষতি হচ্ছে, জমির কোন উর্বরতাও নষ্ট হয়নি।

এই বক্তব্যের পরই প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে তাদের জন্য অর্থাৎ মানুষের জন্য কোন দুঃখ নাই, মানুষের জন্য কোন কান্না নাই, মানুষের ভালমন্দ দেখার দরকার নাই, সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য তারা কাঁদছে। আইইবি’র সভাপতি কবির আহমদ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে কনভেশনে সম্পাদক আব্দুস সবুরও বক্তব্য রাখেন।  এছাড়া আইইবি, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সভাপতি এবং ৫৭ তম কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান সাদেক মোহাম্মদ চৌধুরী ও সম্মানী সম্পাদক প্রবীর কুমার সেন বক্তব্য রাখেন। কনভেনশনে রাষ্ট্র এবং সংগঠনের নানামুখী অবদানের জন্য ঢাকা ওয়াসার চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড.এম হাবিবুর রহমান এবং পদ্মা সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তা মেজর জেনারেল আবু সা‌ঈদ মোহাম্মদ মাসুদকে আইইবি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ