রবিবার, মে ৫, ২০২৪
প্রচ্ছদঅর্থ ও বানিজ্য সময়অখ্যাত দেশি কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে ইউনিলিভারের পণ্য

অখ্যাত দেশি কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে ইউনিলিভারের পণ্য

বহুজাতিক কোম্পানির তকমা সাঁটানো ইউনিলিভারের অধিকাংশ পণ্য উৎপাদন ও মোড়কজাত করছে বিভিন্ন অখ্যাত দেশি প্রতিষ্ঠান। এতে কোম্পানিটির লাভের পাল্লা ভারী হলেও প্রতারিত হচ্ছেন গ্রাহকরা। ভুক্তভোগী অনেকেই ইউনিলিভারের এই কাণ্ডকে কর্পোরেট প্রতারণা বলে অভিহিত করছেন। এই প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে বেশি বিক্রিত পণ্য এখন হুইল পাউডার। এক সময় জেট কাপড় কাচার পাউডার বাংলাদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ বাজার দখলে রাখলেও নব্বইয়ের দশকে ইউনিলিভারের হুইল পাউডার দেশের বাজারে নতুন ক্রেজ তৈরি করে। তারা কম দামে হুইল পাউডার বাজারজাত শুরু করে প্রতিযোগী দেশি ব্র্যান্ডগুলোর বাজার দখল করে নেয়। হুইলের পর সার্ফ এক্সেল, রিন ব্র্যান্ড বাজারে এনে দেশের ডিটারজেন্টের বাজারের একক আধিপত্য তৈরি করে ইউনিলিভার।

কিন্তু শুরুতে ভালো মানের এসব ডিটারজেন্ট এর দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও বছর বছর দাম বাড়াতে থাকে তারা। পাশাপাশি অধিক মুনাফা লুটতে এসব ডিটারজেন্ট উৎপাদনে কাজে লাগায় বিভিন্ন দেশি কোম্পানিকে।

অনুসন্ধানে ‍জানা গেছে, গাজীপুরের মেসার্স এআরসি এন্টারপ্রাইজ এখন ইউনিলিভারের হুইল পাউডার উৎপাদন করছে, এআরসি সারফেক্ট্যান্টস লিমিটেড তৈরি করছে হুইল পাওয়ার হোয়াইট, রিন, সার্ফ এক্সেল। চট্টগ্রামের টিকে গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান মেসার্স সামুদা কন্টেইনার্স লিমিটেড তৈরি করছে ভিমবার, কালুরঘাট এলাকার ডাইভার্স শ্রিঙ্ক রেপ লিমিটেড তৈরি করছে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলীর মোড়ক,  একসেস লিমিটেড তৈরি করছে পেপসোডেন্ট পাউডার।

দীর্ঘদিন ধরে তাজা চা পাতার মোড়কজাতকারী প্রতিষ্ঠান ছিল চট্টগ্রামের ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ।  ইউনিলিভারের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড লাইফবয় টোটাল সাবানের প্রস্তুতকারক গাজীপুরের লিলি কসমেটিকস্ লিমিটেড। একসময় সিনথেটিক ডিটারজেন-৫০০ তৈরি হতো সামুদা কনটেইনার্সের কারখানায়। গাজীপুরের এসমা লিমিটেড পন্ডস পাউডার ও লাইফবয় টোটাল সোপ আগে গাজীপুরের লিলি কসমেটিকস লিমিটেড প্রস্তুত করলেও বর্তমানে ইউনিলিভারের কারখানায় প্রস্তুত করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে। আন্তর্জাতিক শ্রম আইন অনুযায়ী, বেতন ভাতা পরিশোধের বাধ্যবাধকতা থাকে। কিন্তু কিছু বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এদেশের সস্তা শ্রমকে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ নিয়েও সাবকন্ট্রাকে পণ্য উৎপাদন করে। যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য কাম্য নয়। সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে একটি কোম্পানির সিংহভাগ পণ্য সাবকন্ট্রাকে প্রস্তুত করার মাধ্যমে পণ্যের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ে বলে মনে করেন তারা।
দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় প্রসাধনী পণ্য প্রস্তুতকারক উদ্যোক্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেন, আমরা বিপুল বিনিয়োগ করেও ইউনিলিভারের প্রতারণার কাছে মার খাচ্ছি। এতে আমাদের দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, চাকরি হারাতে হচ্ছে অনেককে। ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক জোবায়ের আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ