চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে ব্যক্তি স্বার্থ রুখে দাঁড়াবার প্রতিজ্ঞা করেছেন ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি। দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ–সভাপতি এস.এম. আবুল কালামের সংবর্ধনা সভায় তিনি এ প্রতিজ্ঞার কথা জানান। গতকাল শুক্রবার চেরাগী পাহাড়স্থ কদম মোবারক ইসলামাবাদী হলে এস.এম. আবুল কালাম কুয়েতে রাষ্ট্রদূত নির্বাচিত হওয়ায় তাঁকে এ সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি হাসিনা মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ভূমি প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি বলেন, এস.এম. আবুল কালাম রাজনীতিতে নতুন মুখ নয়। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে কাজ করেছেন বলে আজ তাঁর মূল্যায়ন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে স্বার্থছাড়া অনেক নেতাই কাজ করে গেছেন। রাজনীতিতে উদার হতে হয়, মানুষ রাজনীতি করে সম্মান পাওয়ার জন্য। কিন্তু সম্প্রতি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নিয়ে অনেক কথা। বিশেষ করে পদ ও মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে অনেক অন্যায় হয়েছে ২য় পৃষ্ঠার ৬ষ্ঠ কলাম
যা আমাদের রাজনীতির জন্য দুঃখজনক। যে ব্যক্তি আমার বাবা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর সাথে দীর্ঘ ৩০ বছর রাজনীতি করেছেন, ঊনি তাঁর কাছ থেকে কী শিক্ষা গ্রহণ করেছেন? আমার পিতার মধ্যে সবসময় উদারতা মহানুভবতা এবং দলের নেতাকর্মীদের প্রতি যে আন্তরিকতা অন্তর্নিহিত ছিল তার বিন্দু মাত্রও মোছলেম উদ্দিনের কাছে দেখতে পাইনি।’
এস.এম. আবুল কালামকে রাষ্ট্রদূত করায় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে সাইফুজ্জামান জাবেদ বলেন, এসএম আবুল কালাম ত্যাগের রাজনীতি করেছেন বলেই আজ মূল্যায়িত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে আমি দেখিছি। তিনি বলেন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমানে যারা বিভিন্ন পদে দায়িত্বে রয়েছেন তাদের সকলের মুখে একটি বাক্য, একটি সুর, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অন্যায় কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করছি অনেক সময় পাওয়ার জন্য এবং অনেক সময় দেওয়ার জন্য করছি। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি যখন হয়েছিল তখন আমরা আশান্বিত ছিলাম আমার পিতার ধারাবাহিকতা রক্ষা হবে, মানুষের কল্যাণে কাজ হবে। কিন্তু আমি এমপি, মন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে আমার এলাকায় দায়িত্বসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে সময় দিতে পারিনি। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা আমাকে বারবার অনুরোধ করার পর আমি পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম বিগত দেড় বছরেও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ত্যাগীদের কোন মূল্যায়ন হচ্ছে না। উপরন্তু মনোনয়ন ও পদ বাণিজ্যসহ ব্যক্তি স্বার্থে বিভিন্ন অন্যায় কার্যক্রমে সংগঠন পরিচালিত হচ্ছে। ত্যাগী নেতাদের অনুরোধে এবং তাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ থেকে আমি নিজেই এ সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার প্রতিজ্ঞা করেছি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, ড. আবু রেজা নদভী এমপি, সংবর্ধিত অতিথি কুয়েতের রাষ্ট্রদূত ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ–সভাপতি এস.এম. আবুল কালাম। প্রধান বক্তা ছিলেন মহিলা আওয়ামী লীগ দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি চেমন আরা তৈয়ব। বিশেষ অতিথি ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ–সভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী, রূপালী ব্যাংকের পরিচালক আবু সুফিয়ান, চিটাগাং চেম্বারের সহ–সভাপতি সৈয়দ জামাল আহমদ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এড. মুজিবুল হক, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক এড. আব্দুর রশিদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নুরুল আবসার, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আব্দুল কাদের সুজন, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক এ.কে.এম. আব্দুল মতিন চৌধুরী, পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রাশেদ মনোয়ার, আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দুল মোস্তফা রাজু, মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরী, পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, স্বাচিপ নেতা ডা. আ.ম.ম. মিনহাজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এড. জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক ছাত্রনেতা এ.কে.এম.নাজিম উদ্দিন, মাস্টার সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আব্দুল কালাম আজাদ, এড. আব্দুল হান্নান, সাবেক চেয়ারম্যান সালামত উল্লাহ মোল্লা, দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মুহাম্মদ গালিব। আবৃত্তি শিল্পী এড. মিলি চৌধুরীর পরিচালনায় এতে বক্তব্য রাখেন মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তপতী সেন গুপ্তা, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সহ–সভাপতি কল্পনা লালা, যুগ্ম সম্পাদক স্বপ্না দত্ত, কাউন্সিলর আনজুুমান আরা, খালেদা আক্তার চৌধুরী, উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ–সভাপতি সৈয়দা রিফাত আক্তার নিশু, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী রেহেনা ফেরদৌস, সুলতানা আক্তার, রাজমীন আকতার, নিলুফার জাহান, লতিফা চৌধুরী, হাসিনা আক্তার, রেহেনা কাজেমী, জান্নাত বেগম, সাজেয়া বেগম, ফেরদৌস আক্তার, জেরিন, মর্জিনা আক্তার লুচি, নিপু তালুকদার, এড. সুচিত্রা লালা, পারভিন আক্তার, কামরুন্নাহার, কৃষ্ণা দাশ, কোহিনুর আক্তার, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ফয়েজ আহমদ লিটন, পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আশীষ তালুকদার, নুরুল আবসার, জয়নাল আবেদীন, সবুজ বড়ুয়া, কামাল উদ্দিন চৌধুরী, অনিমেষ বড়ুয়া, বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ সেলিম, দক্ষিণ জেলা বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার এস.এম.মোর্শেদ, মহানগর ওলামা লীগের সভাপতি মোঃ আবুল কালাম, দক্ষিণ জেলা কৃষক লীগ নেতা মোঃ আলমগীর খান, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা জায়েদ বিন কাশেম, সাবেক দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ নেতা আরিফুজ্জামান আরিফ, খুরশিদ উল আলম খোকন, ছাত্রলীগ নেতা এস.এম. জাবেদ সরওয়ার, মোঃ আরিফ, শাকিল মাহমুদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে নৃত্য ও গান পরিবেশন করেন প্রযুক্তা বৈদ্য ও মুধুলিতা।
সংবর্ধিত অতিথি এস.এম. আবুল কালাম বলেন, ‘দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ, তারা আজকে আমাকে যে সম্মান দিয়েছে তা চিরদিন মনে রাখব। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ থেকে আমি প্রাপ্য সম্মান পাইনি, কারণ বর্তমানে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে সওদাগরী মনোনয়ন ও পদ বাণিজ্য শুরু হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অপকর্মের বিরুদ্ধে এতদিন প্রতিবাদ করার কেউ ছিল না। এখন আমরা প্রতিবাদের জন্য নেতা পেয়েছি। ভূমি প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে অবস্থান নিতে হবে।
নজরুল ইসলাম এমপি বলেন, আখতারুজ্জামান বাবু ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে ছাতার মত। যে কোন দুর্যোগ এবং দলের দুঃসময়ে বাবু ভাই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে হাল ধরেছেন। আজ তাঁরই সুযোগ্য সন্তানকে দলের অন্যায় কার্যক্রমের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে যে অন্যায় এবং অসাংগঠনিক কার্যক্রম বর্তমান কমিটি করে যাচ্ছে তার বিরুদ্ধে আমাদেরকে সোচ্চার হতে হবে।
ড. আবু রেজা নদভী এমপি বলেন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি অসুস্থ এবং অন্যায় কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছে। এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগকে সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে পরিচালনা করার কাজে ত্যাগী নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
রূপালী ব্যাংকের পরিচালক সাংবাদিক আবু সুফিয়ান বলেন, রাষ্ট্রদূত এস.এম. আবুল কালামকে সম্মান করার দায়িত্ব ছিল চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের। কিন্তু তারা সেই দায়িত্ব পালন করেনি। দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সে দায়িত্ব পালন করে রাজনীতির মর্যাদা রক্ষার চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ বর্তমানে ব্যক্তি স্বার্থ এবং বিভিন্ন অসাংগঠনিক কার্যক্রমে লিপ্ত। বর্তমান কমিটি সংগঠনের সাবেক ছাত্রনেতা ও ত্যাগীদের কোন রকম মূল্যায়ন করছে না। এর জন্য ভবিষ্যতে সংগঠনে নেতৃত্বশূন্যতা সৃষ্টি হবে।
