রবিবার, মে ১৯, ২০২৪
প্রচ্ছদটপনিজামীর দাফন সম্পন্ন

নিজামীর দাফন সম্পন্ন

জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ১১ এপ্রিল সকাল সোয়া সাতটার দিকে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার মনমথপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে সকাল ৭টার দিকে কবরস্থানের পাশে নিজামীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন তার ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন। জানাজায় নিজামীর আরেক ছেলে ডা. নাকিবুর রহমান, জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য আব্দুল হালিম, অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন, শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতি সৈয়দ শাহরিয়ার, পাবনা জেলা শিবির সভাপতি সাইদুল ইসলাম, পাবনা শহর শাখার সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম, সাঁথিয়া উপজেলা জামায়াতের আমির আব্দুল কুদ্দুস, জামায়াত নেতা আবু সালেহ মো. আবদুল্লাহ, নিজামীর ভাতিজা শহীদুল হক, আব্দুর রহিম, আশরাফুল ইসলাম, মো. আজম, মো. রওশন, চাচাতো ভাই বাচ্চু খান ছাড়াও স্বজন ও দলীয় নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নিজামীকে ১০ মে দিনগত রাত ১২টা ১০ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির জানান, রাত ১২টা ১ মিনিটেই মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসির মঞ্চে তুলে গলায় ফাঁস পরানো হয়। প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া শেষ করে ১২টা ১০ মিনিটে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। ফাঁসি কার্যকরের কিছুক্ষণ পরই ৠাব-পুলিশের কড়া প্রহরায় নিজামীর মরদেহবাহী গাড়িবহর রওয়ানা হয় তার গ্রামের বাড়ি মনমথপুরের উদ্দেশ্যে। রাজধানীর শাহাবাগ, মহাখালী, উত্তরা, গাজীপুরের চন্দ্রা, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ হয়ে ভোর সাড়ে ছ’টার দিকে গ্রামের বাড়িতে পৌছে নিজামীর মরদেহ।

নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুসারীরা আনন্দ মিছিল করেন। বিপরীতে ১২ এপ্রিল ভোর ৫টা থেকে পরদিন শুক্রবার ভোর ৫টা পর্যন্ত দেশব্যাপী হরতাল ডাকে জামায়াত। নিজামীর রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে এ পর্যন্ত ৫ যুদ্ধাপরাধীকে ফাঁসিতে ঝোলানো হলো।  মানবতাবিরোধী অপরাধে ‍আমির নিজামী ছাড়াও এর আগে পর্যায়ক্রমে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটি মেম্বার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। সর্বশেষ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যা ও ধর্ষণসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব) দায়ে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হলো নিজামীকে। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর সর্বোচ্চ নেতা ছিলেন তিনি।

ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের পর রাত দেড়টায় কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নিজামীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স তার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হয়। জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের (জমিয়তে তালাবা) নিখিল পাকিস্তান সভাপতি (নাজিমে আলা) হিসেবে নিজামী একাত্তরে ছিলেন আলবদর বাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডার। মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বিরোধিতাকারী জামায়াতের হয়ে তার নেতৃত্বেই বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ নৃশংসতম নারকীয় যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করে এই বাহিনী। ফাঁসি হওয়ার পর্যন্ত তিনি ছিলেন জামায়াতের আমির। বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রীও ছিলেন তিনি।

নিজামীকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যা ও ধর্ষণসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) প্রমাণিত ৮টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে ৪টিতে ফাঁসি ও ৪টিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ৩টিতে ফাঁসি ও ২টিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। অন্য তিনটিতে চূড়ান্ত রায়ে দণ্ড থেকে খালাস পেয়েছেন নিজামী, যার মধ্যে একটিতে ফাঁসি ও দু’টিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ ছিল ট্রাইব্যুনালের রায়ে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ