বিড়ি, সিগারেট, জর্দা ও গুলসহ সব ধরনের তামাক পণ্যের ওপর উচ্চহারে কর বাড়ানোর দাবিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর প্রায় ৪০ জনের মতো সংসদ সদস্য সুপারিশনামা জমা দিয়েছেন।
তাতে তারা বলেন, তামাকের কারণে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। তামাক কোম্পানিগুলোর প্ররোচণায় দেশের চাষীরা খাদ্যজাত পণ্যের পরিবর্তে তামাক উৎপাদন করছেন। তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণ চুল্লিতে ব্যবহারের জন্য লাখ লাখ গাছ কাটা হচ্ছে এবং তামাক ব্যবহারজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বহু মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, অনেকে পঙ্গু হচ্ছেন। এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন।
কর বাড়ানোর মাধ্যমে তামাকজাত পণ্যের মূল্য বাড়ানো তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে একদিকে যেমন রাজস্ব বাড়ে, তেমনি তামাকের ব্যবহার কমে আসে।
বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল ফারুক খান, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবের হোসেন চৌধুরী, অধ্যক্ষ খাদিজা খাতুন শেফালী, পারভীন আক্তার, মোশতাক আহমেদ রুহী, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, নাজমা আক্তার, মনোরঞ্জনশীল গোপাল, এথিন রাখাইন, ফজলে হোসেন বাদশা, ইকবালুর রহিম, মাহবুবা আক্তার গিনি, রুমানা মাহমুদ, নবাব আলী আব্বাস খানসহ প্রায় ৪০ জন সংসদ সদস্য এ সুপারিশনামা দিয়েছেন।
সুপারিশনামায় সাংসদরা বলেন, “এমতাবস্থায় আমি, জনস্বার্থে আগামী বাজেটে বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, গুলসহ সব ধরনের তামাকজাত পণ্যের উপর সম্পূরক শূল্কের হার ৭০ শতাংশ হারে নির্ধারণের সুপারিশ করছি। একই সঙ্গে সিগারেটের মূল্যস্তর বাড়িয়ে সিগারেট কোম্পানিগুলোকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার পরিবর্তে মূল্যস্তর পদ্ধতি তুলে দিয়ে সব রকম বিড়ি, সিগারেট ও অন্যান্য তামাকজাত পণ্যের উপর একই হারে শুল্ক আরোপের সুপারিশ করছি।”
একই সঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাতের প্রতিষ্ঠান হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার (এইচডিআরসি) আসন্ন ২০১৩- ১৪ অর্থবছরের বাজেটে তামাকের উপর উচ্চহারে কর বাড়ানোর জন্য সাতটি সুপারিশ করেছেন।
ড. আবুল বারাকাত এ প্রসঙ্গে বলেন, “সিগারেটের উপর জটিল মূল্যস্তর প্রথা তুলে দিতে হবে। সব ধরনের বিড়ি এবং সিগারেটের উপর একই হারে একক সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হলে সিগারেটের মূল্য বাড়বে এবং ধূমপান কমবে। তামাকের কর ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে, আরোপিত করের প্রয়োগ আরও শক্তিশালী করতে হবে, কর ফাঁকি রোধে তামাক পণ্যের শুল্কমুক্ত বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং তামাক থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের একটি অংশ জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও তামাক নিয়ন্ত্রণে ব্যয় করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই উচ্চহারের করের ফলে প্রায় ৭০ লাখ ধূমপায়ী সিগারেট এবং ৩৪ লাখ ধূমপায়ী বিড়ি সেবন ছেড়ে দেবেন। প্রায় ৬০ লাখ সিগারেট ধূমপায়ীর এবং প্রায় ২৪ লাখ বিড়ি ধূমপায়ীর মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে। সরকার সিগারেট থেকে অতিরিক্ত ১৫০০ কোটি টাকা এবং বিড়ি থেকে ৭২০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করবে।”
ড. আবুল বারকাত আরও বলেন, “পৃথিবীতে সর্বোচ্চ তামাক সেবনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ দেশে ৪ কোটি ৬০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ সিগারেট, বিড়ি এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করে। পৃথিবীতে বাংলাদেশেই সিগারেটের মূল্য সবচেয়ে কম। বিড়ি আরও কম মূল্যে পাওয়া যায়।”
তাই আসছে বাজেটে সব ধরনের তামাকজাত পণ্যের উপর উচ্চহারে কর আরোপের দাবি জানান এই অর্থনীতিবিদ।