রবিবার, মে ৫, ২০২৪
প্রচ্ছদঅর্থ ও বানিজ্য সময়ব্যাংক কোম্পানি আইন পাস

ব্যাংক কোম্পানি আইন পাস

ষ্টাফরিপোর্টার (বিডিসময়২৪ডটকম)

বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের সমালোচনার মুখে ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন পাস করা হয়েছে। রোববার সংসদে বিলের বিরোধিতা করে বিরোধীদলের ১৮ সংসদ সদস্য অভিযোগ করেন, সরকারের শেষ সময়ে এসে সরকার ব্যাংক লুটপাট, গ্রামীণ ব্যাংক ১৯ খণ্ড করা, সোনালী ব্যাংক লুটপাটের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তড়িঘড়ি করে এ বিল পাস করছে।

তারা বিলের সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন, অর্থমন্ত্রী বয়সের ভারে ন্যুব্জ। তিনি অর্থ মন্ত্রণালয় সামলাতে ব্যর্থ হয়ে সমালোচকদের রাবিস, বোগাজ বলে মন্তব্য করেন। এ বিল পাস না করে তারা অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেন ।

এর জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিএনপির চরিত্রই লুটপাট। লুটপাটই তাদের বৈশিষ্ট্য। লুটপাট তাদের অস্থিমজ্জায়।

অর্থমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময় তার দুই পুত্র এবং ভাইসহ পরিবারের সদস্যদের জিরো পার্সেন্ট ইন্টারেস্টে ৯৮০ কোটি টাকা ৩০ বছরের জন্য ঋণ দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, বিএনপি যে অভিযোগ করেছে তা মিথ্যা। তাদের দেওয়া সংশোধনগুলো ময়লার ঝুড়িতে যেতে পারে। তবে একজন সদস্য একটি ভালো প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তার অনুপস্থিতির জন্য তা উত্থাপিত হলো না।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারের আমলেই সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আয় হয়েছে।

ব্যাংক কোম্পানি আইন পাস

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা বাড়িয়ে করা ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন পাশ করা হয়েছে। গত ১২ জুন বিলটির রিপোর্ট চূড়ান্ত করে সংসদীয় কমিটি। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৫৮তম বৈঠকে এটি চূড়ান্ত করা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে  করা ‘ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০১৩’চূড়ান্ত করা হয়।

এর আগে গত ২২ এপ্রিল আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম জাতীয় সংসদে বিলটি উত্থাপন করেন। ওইদিন বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

কমিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাইপূর্বক প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজনের পর সংসদে উত্থাপনের জন্য সংশোধিত আকারে বিলটির রিপোর্ট চূড়ান্ত করে।

১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনটিতে ২০০৩ সালে বড় ধরনের পরিবর্তন করা হয়। এর পর বিদ্যমান এই আইনটি অধিকতর সংশোধন আনার লক্ষ্যে উদ্যোগ নেয় সরকার।

ব্যাংক কোম্পানি সংশোধন আইনে যা আছে:

কেন্দ্রীয় ব্যংকের ক্ষমতা বৃদ্ধি :
সংশোধিত আইনের বিলটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতি ছাড়া ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, একক বা যৌথভাবে কোনো ব্যাংক কোম্পানির উল্লেখযোগ্য শেয়ার ধারণ করতে পারবে না।

পরিচালকের মেয়াদ বৃদ্ধি:
সংশোধিত আইনের এই বিলে পরিচালকের মেয়াদ বৃদ্ধি করে তিন বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিচালক হিসেবে তিন বছর করে পরপর দুই মেয়াদে থাকতে পারবেন। এর বেশি থাকতে হলে মাঝখানে বিরতি দিতে হবে।

বর্তমানে যারা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন তাদেরও এ সুযোগ রয়েছে সংশোধিত এ আইনে। পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অন্য ব্যাংক বা বিভাগে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। তবে সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে কোনো বীমা কোম্পানির পরিচালক থাকতে পারবেন।

শেয়ার সংক্রান্ত বিধান লঙ্ঘন করলে অনধিক সাত বছর কারাদণ্ড ও কমপক্ষে ২ লাখ এবং সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে এ লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলে প্রথম দিনের পর প্রত্যেক দিনের জন্য ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যক্তি বা কোম্পানিকে জরিমানা করতে পারবে।

পরিচালক নিয়োগ:
বিশেষায়িত ব্যাংক ছাড়া অন্য যে কোনো ব্যাংক-কোম্পানি পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রধান নির্বাহী নিয়োগ বা পদায়নের আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। নিযুক্ত কর্মকর্তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া বা বরখাস্ত করা বা অপসারণ করা যাবে না।

ব্যাংক কোম্পানি পরিচালক নিয়োগের শর্ত হিসেবে ১০ বছরের ব্যবস্থাপনা বা ব্যবসায়িক কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

আইন কার্যকর হওয়ার এক বছর হওয়ার পর তিনজন স্বতন্ত্র পরিচালকসহ ২০ জনের বেশি পরিচালক থাকবেন না। পরিচালকের সংখ্যা ২০ জনের কম হলে কমপক্ষে ২ জন স্বতন্ত্র পরিচালক থাকবেন।

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ:
ব্যাংক কোম্পানি বা অন্য কোনো কোম্পানির শেয়ার ধারণের ক্ষেত্রে ধারণকৃত শেয়ার বাজারমূল্যে ওই কোম্পানির আদায় করা মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম ও সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন্ড আর্নিংস’র পরিমাণের ৫ শতাংশ।

আর ওই কোম্পানির আদায় করা মূলধনের ১০ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে।

ঋণখেলাপির ব্যাখ্যা:
এই আইনের বিলে ঋণখেলাপির বিষয়ে বলা হয়েছে, কেউ ঋণ গ্রহণ করে যদি ছয় মাস অনাদায়ী হন, তাহলে তাকে ঋণখেলাপি ধরা হবে।

অর্মন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ব্যাংক কোম্পানি সংশোধন বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী বিলটি ভোটে দিলে সরকার দলীয় সংসদ সদস্যদের কণ্ঠভোটে তা পাশ হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ