মঙ্গলবার, মে ১৪, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়নৌবাহিনীর ক্রমাগত অগ্রযাত্রার আরেকটি ধাপ উন্মোচিত হলো

নৌবাহিনীর ক্রমাগত অগ্রযাত্রার আরেকটি ধাপ উন্মোচিত হলো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী চিন্তা বাস্তবায়নের ফলে সেদিনের সেই ছোট্ট নৌবাহিনী আজ একটি মর্যাদাশীল ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর মাত্র দুটি পেট্রোল ক্রাফট দিয়ে শুরু করলেও বঙ্গবন্ধুর চিন্তায় নৌবাহিনী আজ ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত হতে যাচ্ছে। রোববার সকালে নবনির্মিত দুটি এলসিটি নৌবাহিনীতে যুক্ত করা উপলক্ষে বাগেরহাটের মংলার নেভাল বার্থ, দ্বিগরাজে তিনি এ সব কথা বলেন। এদিন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে বানৌজা কে জে আলী, বানৌজা সন্দীপ ও বানৌজা হাতিয়ার কমিশনিং, নবনির্মিত এলসিটি-১০৩ ও এলসিটি-১০৫  নৌবাহিনীতে সংযুক্তি করা হয়। এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানে বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন,  আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আজ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ক্রমাগত অগ্রযাত্রার আরেকটি ধাপ উন্মোচিত হলো। দিনটি শুধু বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্যই নয়, সমগ্র দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত গৌরবের। তিনি বলেন, আজ দেশের শিপইয়ার্ডে দেশিয় ও বৈদেশিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে নির্মিত দেশের সর্বপ্রথম ফ্লিট ট্যাংকার নৌবাহিনীতে সংযোজিত হলো। দেশের জাহাজ তৈরি শিল্পের ইতিহাসে এটি এক বিশাল মাইলফলক।

তিনি  বলেন, দেশিয় শিপইয়ার্ডগুলোর এ অগ্রযাত্রা ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে একটি জাহাজ নির্মাণকারী দেশ হিসেবে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছে। অদূর ভবিষ্যতে আমরা এদেশেই আরো উন্নতমানের যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ করতে সক্ষম হবো, ইনশাল্লাহ। দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজ আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যার ডাকে সাড়া দিয়ে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সশস্ত্র বাহিনীসহ দেশের আপামর জনসাধারণ।

তিনি বলেন, স্মরণ করছি, সেসব অকুতভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যাদের সুমহান ত্যাগ ও জীবনের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের মহান স্বাধীনতা। একই সঙ্গে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনসহ সব নৌসদস্যদের, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় সম্পদের প্রাচুর্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের বিশাল সামুদ্রিক এলাকায় সমুদ্রপথে বাণিজ্য পরিচালনা ছাড়াও আছে মৎস্য, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও অন্যান্য খনিজ পদার্থসহ মূল্যবান সম্পদ। ভৌগলিক অবস্থান এবং কৌশলগত কারণে বাংলাদেশের এই জলসীমা ও তার সম্পদ রক্ষায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। সমুদ্রসীমার সম্পদ এবং সমুদ্র এলাকার সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমাদের একটি শক্তিশালী ও আধুনিক নৌবাহিনীর বিকল্প নেই, এ সত্যটি স্বাধীনতার আগেই জাতির জনক উপলব্ধি করেছিলেন। তার ছয় দফা আন্দোলনে তৎকালীন পাকিস্তান নৌবাহিনীর সদর দফতর পূর্বপাকিস্তানে প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর পরই বঙ্গবন্ধু আমাদের সমুদ্রসীমা রক্ষার্থে একটি দক্ষ ও শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তুলতে দৃঢ় পদক্ষেপ নেন। নৌবাহিনী মাত্র দুটি পেট্রোল ক্রাফট দিয়ে শুরু করলেও বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী চিন্তা বাস্তবায়নের ফলে সেদিনের সেই ছোট্ট নৌবাহিনী আজ একটি মর্যাদাশীল ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত হতে যাচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনসহ আন্তর্জাতিক মহলে বিভিন্ন অবদানের জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনী সারাবিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে।

আধুনিক নৌবাহিনী গঠনে আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অগ্রযাত্রা বেগবান হয়। সে সময়ে অত্যাধুনিক মিসাইল ফ্রিগেট বানৌজা বঙ্গবন্ধু, লার্জ পেট্রোল ক্রাফট মধুমতি, পেট্রোল ক্রাফট বরকত, তিতাস, কুশিয়ারা, ট্যাংকার ইমাম গাজ্জালী নৌবাহিনীতে কমিশন করা হয়। বানৌজা শৈবালকে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ জাহাজ হিসেবে রূপান্তরিত করা হয়।

তিনি বলেন, একই সঙ্গে নৌবাহিনীতে অত্যাধুনিক Simulator যুক্ত স্কুল অব মেরিটাইম ওয়ারফেয়ার অ্যান্ড ট্যাকটিকস্, হাইড্রোগ্রাফিক অ্যান্ড ওশেনোগ্রাফিক সেন্টার এবং নৌহাসপাতাল উপশম সংযোজন করা হয়। এছাড়া রুগ্ন খুলনা শিপইয়ার্ডকে নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর ছিল আমাদের সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। শান্তিরক্ষা মিশনে নৌবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০১০ সাল থেকে লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বানৌজা ওসমান ও মধুমতি মোতায়েন হয়েছিল।

বর্তমানে সেখানে বানৌজা আলী হায়দার ও বানৌজা নির্মূল মোতায়েন রয়েছে। একই ভাবে মালি ও সম্প্রতি দক্ষিণ সুদানে পূর্ণাঙ্গ নৌকন্টিনজেন্টগুলো শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি জেনে খুশি হয়েছি যে, তারা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষতার সঙ্গে গত এক বছর যাবত দায়িত্ব পালন করে দেশের জন্য সুনাম বৃদ্ধি ও ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করছে। নৌবাহিনীর প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের পেশায় যেমন চ্যালেঞ্জ আছে, তেমনি আছে বিশালতার আহ্বান। আমি বিশ্বাস করি, সাগরের মতো বিশাল আপনাদের দেশপ্রেম। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমুদ্র সম্পদের বিরাট ভূমিকা কাজে লাগানোর গুরুদায়িত্ব আপনাদের। এই নতুন জাহাজগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে এই বিশাল দায়িত্ব যেন আপনারা সফল ও নিরাপদভাবে পালন করতে পারেন, আমি মহান আল্লাহ তা’য়ালার কাছে সেই দোয়া করছি।

তিনি বলেন, সদ্য সংযোজিত ফ্লিট ট্যাংকার ও অন্যান্য জাহাজগুলি নৌবাহিনীতে সুদীর্ঘকাল বলিষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালন করবে বলে আমার বিশ্বাস। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। আপনাদের সবার ব্যক্তিগত, পেশাগত এবং সামগ্রিক জীবন আনন্দময় ও কল্যাণকর হোক, এটাই আমার কামনা।

  • বিষয়:
  • top
আরও পড়ুন

সর্বশেষ