শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪
প্রচ্ছদআরো খবর......পরাজয়ের দশ কারণে

পরাজয়ের দশ কারণে

ষ্টাফরিপোর্টার (বিডিসময়২৪ডটকম)

আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এডভোকেট আজমতউল্লাহ খানের বিপুল ভোটের ব্যবধানে পিছিয়ে থাকার পিছনে কমপক্ষে দশটি বিষয় কাজ করেছে। জাতীয় রাজনীতির ধারা যে সরকারের অনুকূলে বইছে না গত চার সিটি কর্পোরেশন ও সর্বশেষ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তারই প্রতিফলন ঘটেছে। টঙ্গীর অভ্যন্তরীণ গোলযোগ মিটাতে ব্যর্থতায় এখানে আজমতউল্লা তার নিজ এলাকাতেই প্রত্যাশিত ভোট পাননি। টঙ্গীর এমপি জাহিদ আহসান রাসেল এবং আজমতউল্লার অপ্রকাশিত দ্বন্দ্বের বিষয় স্থানীয় নেতা-কর্মীদের কাছে গোপন ছিল না। আজমতউল্লা মেয়র নির্বাচিত হলে টঙ্গী-গাজীপুরের একচ্ছত্র নেতা হবেন তিনি। যা টঙ্গীর সরকার দলীয় সংসদ সদস্যসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার এমপির কাঙিক্ষত ছিল না। টঙ্গী এলাকার আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা আরো মনে করেন, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে এমপি রাসেল সিটি নির্বাচনে আজমতের পক্ষে কাজ করলেও কর্মী পর্যায়ে বিরোধ অনিষ্পন্ন ছিল। এমপির পরিবারের অনেক সদস্যও আজমত উল্লাহর বিপক্ষে কাজ করেছেন। এমপি তাদের নিবৃত রাখেননি, রাখতে পারেননি। এই দ্বন্দ্ব-বিরোধ মিটাতে এমপিসহ নেতৃবৃন্দ জোরালো ভূমিকা নেননি। টঙ্গী আওয়ামী লীগের ভেতরের এই দ্বন্দ্বের কারণে নিজ এলাকা টঙ্গীর বিভিন্ন কেন্দ্রে আজমতউল্লাহ অনেক কম ভোট পেয়েছেন। এরশাদনগরসহ টঙ্গী এলাকায় জাতীয় পার্টিরও অনেক ভোটার রয়েছেন। এরশাদের শেষ মুহূর্তের ঘোষণা তাদের প্রভাবিত করেনি। বিএনপি নেতা হাসান সরকারের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যাপক প্রভাব রয়েছে টঙ্গীতে। টঙ্গী থেকে অধিক সংখ্যক ভোট টানার জন্য বিএনপি, জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে হাসান সরকার সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়েছেন।
আজমত উল্লাহ মেয়র নির্বাচিত হলে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকার এমপি ও মেয়র দু’জনই হবেন টঙ্গীর। গাজীপুরের বিশাল এলাকার মানুষের মধ্যে আঞ্চলিক এ বিষয়টিও বড় হয়ে কাজ করেছে। আ. ক. ম মোজাম্মেল জনমনের এই সংশয় কাটাতে চেষ্টা করেছেন। আজমত ৩ মেয়াদে এবং মোজাম্মেল ৪ মেয়াদে মেয়র। মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের মানসিকতাও কাজ করেছে। টঙ্গী এলাকায় গাজীপুরের তুলনায় ভোট অনেক কম। নিজস্ব এলাকায়ই ভোট প্রত্যাশিত হারে না পাওয়ায় আজমত উল্লাহ অনেক পিছিয়ে পড়েন। জাহাঙ্গীর আলম শেষের দিকে আজমত উল্লাহর পক্ষে নামলেও তা সর্বাত্মক ছিল না। তার কর্মী সমর্থকদের সকলেও সক্রিয় ছিলেন না। ভৌগলিক অবস্থানগতভাবে তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলেন এমএ মান্নান। গাজীপুর এলাকায় নেতৃত্ব রাখার আকাঙ্খা বাসন, গাছা, কাউলতিয়া, কোনাবাড়ি, কাশিমপুর ও গাজীপুর এলাকার মানুষের। জাতীয় পার্টির টঙ্গী, গাজীপুরের নেতা-কর্মীরা ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে আগেই মাঠে নেমেছিলেন। এরশাদের শেষ মুহূর্তের নাটকীয় ঘোষণা তাদের ফিরাতে পারেনি। এরশাদনগরসহ টঙ্গী-গাজীপুরের ভোটারের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া ফেলেনি। এরশাদের ঘোষণার আগেই তার দলীয় কর্মী ও ভোটাররা মনস্থির করে ফেলেন। চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনও প্রভাব ফেলেছে গাজীপুরে। পদ্মা সেতু, শেয়ার বাজার, হলমার্ক, ডেসটিনি কেলেঙ্কারি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে সরকারের অনড় অবস্থানসহ বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে সরকার বিরোধী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর সুযোগের ব্যবহার করেছে গাজীপুরের মানুষ।
জামায়াত-হেফাজতের কর্মীদের মোকাবিলা করতে আজমত ব্যর্থ হয়েছেন। নিজ এলাকার মসজিদের ইমামকে সার্বক্ষণিক সঙ্গী করাসহ কিছুসংখ্যক হুজুরকে পাশে পেলেও হেফাজত-জামায়াতের প্রচারণা মোকাবিলা করতে পারেননি তিনি।
এমএম মান্নানের বিরুদ্ধে শেষ পর্যায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক সরকারের প্রচারণাও সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীর বিপক্ষে টেনে নিয়েছে জনমত। সাধারণ মানুষের মধ্যে এ প্রশ্ন প্রবলভাবে ছিল যে, মান্নান দায়ী হলে এনবিআর আগে কেন ব্যবস্থা নিল না। এছাড়া তার ব্যাঙ্ক একাউন্ট জব্দের বিষয়টিও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে নির্বাচনে। জিএসপি সুবিধা স্থগিতের বিষয়ও প্রভাব ফেলেছে নির্বাচনের ফলাফলে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ