বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনহাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের দাবিতে আন্দোলনে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের আইনজীবীরা

হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের দাবিতে আন্দোলনে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের আইনজীবীরা

হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের দাবিতে আন্দোলনে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের আইনজীবীরা। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদ এবং সুপ্রিম কোর্টকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়েছেন তারা। শনিবার হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ বাস্তবায়ন পরিষদ, চট্টগ্রাম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আন্দোলনের বিষয়ে জানানো হয়েছে। চট্টগ্রামে আইন পেশার সঙ্গে জড়িতরাই এ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। জেলা পিপি অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম সংগঠনটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের আহ্বায়ক আবুল হাশেম বলেন, সারা বাংলাদেশে ২৮ লক্ষ মামলা বিচারাধীন আছে। চট্টগ্রামে আছে এক লক্ষ ৭৫ হাজার মামলা। সরকার চায় মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য চট্টগ্রামে সার্কিট বেঞ্চের কোন বিকল্প নেই।

সংগঠনের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শংকর প্রসাদ দে বলেন, সামান্য চুরির মামলা, ছিনতাইয়ের মামলার জন্য ঢাকায় দৌঁড়াতে হয়। এ ধরনের মামলার জন্য আসামি কিংবা বাদিকে ২০ হাজার, ৫০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। বড় কোন আইনজীবী ধরলে আরো বেশি টাকা খরচ করতে হয়। আমরা চট্টগ্রামের মানুষ সীমাহীন এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি চাই। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য অ্যাডভোকেট কবির চৌধুরী।

এতে বলা হয়, ১৯৮২ সালের ১১ মে চট্টগ্রামে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৬ সালের ১৭ জুন সামরিক ফরমানবলে স্থায়ী বেঞ্চগুলোকে সার্কিট বেঞ্চের মর্যাদা দেয়া হয়। সংবিধান পুনরুজ্জীবীত হবার পর অষ্টম সংশোধনীর ২ (ক) অনুচ্ছেদবলে চট্টগ্রামসহ দেশের ৬টি সার্কিট বেঞ্চ আবারও স্থায়ী বেঞ্চের মর্যাদা লাভ করে।  কিন্তু ১৯৮৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠ সিদ্ধান্তে অষ্টম সংশোধনীর ২ (ক) অনুচ্ছেদ বাতিল হয়। এর ফলে হাইকোর্টের বেঞ্চগুলো ঢাকায় ফিরিয়ে নেয়া হয়। এরপর চট্টগ্রামের আইনজীবীরা বারবার সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন।

অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম বলেন, অষ্টম সংশোধনীর ২ (ক) বাতিল হওয়ায় স্থায়ী বেঞ্চ চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠার সুযোগ নেই। কিন্তু সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনে কোন বাধা নেই। কিন্তু চট্টগ্রাম বিদ্বেষী একটি মহলের বিরোধিতার কারণে এ দাবি বাস্তবায়িত হচ্ছেনা। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, চট্টগ্রামের আইনজীবীদের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে চট্টগ্রামে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন সংক্রান্ত একটি আগ্রহ পত্র প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে প্রেরিত হয়। এজন্য সিআরবিতে (রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান কার্যালয়) জায়গাও নির্ধারণ করা হয়।

২০১১ সালের ৩ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ পত্রটি এক নম্বর এজেন্ডা হিসেবে উত্থাপিত হয়। ওই সভায় চট্টগ্রামে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের বিষয়টি মূলতবি করা হয়েছে বলে তারা গণমাধ্যমের খবরে দেখতে পান। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, একমাত্র সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামে থাকলেও হাইকোর্ট মর্যাদায় এডমিরালিটি কোর্ট আছে ঢাকায়। অথচ পৃথিবীর প্রত্যেক দেশেই এডমিরালিটি কোর্টের জন্ম হয়েছে জাহাজ ও সমুদ্রবন্দর সংক্রান্ত মামলার জন্য।

লিখিত বক্তব্যে যেসব আন্দোলন কর্মসূচীর বিষয়ে বলা হয়েছে সেগুলো হল, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি বরাবরে স্মারকলিপি পেশ, আইনজীবীদের স্মাক্ষর সংগ্রহ, আইনজীবীদের মানববন্ধন, চিটাগং চেম্বারের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময়, চট্টগ্রামের পেশাজীবী সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় ও গোলটেবিল আলোচনা এবং মানববন্ধন।

অ্যাডভোকেট শংকর প্রসাদ দে বলেন, প্রধানমন্ত্রী একবার আমাদের প্রতি দৃষ্টি দিয়েছেন। এবার আমরা সুদৃষ্টি কামনা করছি। প্রধান বিচারপতির দপ্তরে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের বিষয়টি ঝুলে আছে। প্রধান বিচারপতি যদি সদয় হন তাহলে রাষ্ট্রপতি দ্বিমত করবেন না। আমরা সবাইকে নিয়ে আমাদের এ দাবি আদায় করতে চাই। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন মির্জা, সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মো.কাশেম কামাল।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ