মঙ্গলবার, মে ৭, ২০২৪
প্রচ্ছদসারা বিশ্বভারতের পররাষ্ট্রসচিবের পদ থেকে সুজাতা সিংকে বরখাস্ত

ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের পদ থেকে সুজাতা সিংকে বরখাস্ত

ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের পদ থেকে সুজাতা সিংকে বরখাস্ত করেছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। সুজাতা সিংয়ের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর। বৃহস্পতিবার টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, গতকাল বুধবার রাতে সরকারের কাছ থেকে এই অপ্রত্যাশিত ঘোষণাটি আসে। সরকারি ঘোষণায় জানানো হয়, পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিংয়ের মেয়াদ কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হচ্ছে। বাংলাদেশে গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিশেষ ‘দূতিয়ালির’ জন্য সুজাতা সিং আলোচিত। ‘একতরফা’ ওই নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার গঠিত হয়েছে। সুজাতা সিংয়ের ব্যাপারে মোদি সরকারের পদক্ষেপকে অস্বাভাবিক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ স্বাভাবিক অবসরের সাত মাস আগেই তাঁকে বরখাস্ত করা হলো। চলতি বছরের ৩১ আগস্ট তাঁর স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা ছিল।

২৮ বছর আগে ১৯৮৭ সালে পররাষ্ট্র সচিবের পদ থেকে এপি ভেঙ্কটেশ্বরণকে আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই অপসারণ করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। ওই ঘটনার পর এই প্রথম আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া আরেক পররাষ্ট্রসচিবকে অপসারণ করল মোদির সরকার। টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনের ভাষ্য, সুজাতা সিংয়ের ওপর অসন্তুষ্ট ছিলেন মোদি। বিগত সময়ে প্রধানমন্ত্রীর এ অসন্তুষ্টি ঢাকা থাকেনি। যেকোনো সময় পররাষ্ট্রসচিবের পদে পরিবর্তনের একটা আলোচনা আগেই ছিল। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ চাইছিলেন সুজাতা সিং শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করুন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভারত সফর শেষ হওয়ার এক দিন পরই পররাষ্ট্রসচিবের বিষয়ে মোদি সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিল। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার প্রতিবেদনে জানানো হয়, দুই বছরের মেয়াদকাল শেষ হওয়ার আগেই সুজাতা সিংকে বরখাস্ত করা হলো। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার নিয়োগ কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের পদে সুজাতা ছিলেন তৃতীয় কোনো নারী। মন্ত্রিসভার নিয়োগ কমিটির সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়, সুজাতা সিংয়ের স্থলে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সুজাতার বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা টিভি রাজেশ্বর রাজীব গান্ধীর আমলে গোয়েন্দা সংস্থার (ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো) পরিচালক ছিলেন। উত্তর প্রদেশের সাবেক এই গভর্নর কংগ্রেসের অনুগত বলে পরিচিত। ২০১৩ সালের আগস্টে পররাষ্ট্রসচিব পদে নিয়োগ পান সুজাতা। তাঁর নিয়োগ নিয়ে তৎকালীন সরকারের মধ্যে বিভক্তি ছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের পছন্দে ছিলেন জয়শঙ্কর। অন্যরা ছিলেন সুজাতার পক্ষে। শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেননি মনমোহন। কারণ সুজাতাকে নিয়োগের পক্ষে সিদ্ধান্তটা আসে খোদ কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর কাছ থেকে।  ভারতের পররাষ্ট্র বিভাগের চাকরিতে ১৯৭৬ ব্যাচের কর্মকর্তা ছিলেন সুজাতা সিং। তাঁর এক ব্যাচ কনিষ্ঠ জয়শঙ্কর। তিনি ১৯৭৭ ব্যাচের কর্মকর্তা। অবসরে যাওয়ার মাত্র তিন দিন আগে পররাষ্ট্রসচিব পদে নিয়োগ পেলেন তিনি। ৩১ জানুয়ারি তাঁর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। জয়শঙ্কর এখন দিল্লিতে অবস্থান করছেন। নিয়োগের পর নতুন পররাষ্ট্রসচিব আজ থেকে তাঁর কাজ শুরু করবেন। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দ্য হিন্দুর খবরে জানানো হয়, জয়শঙ্করের ওপর, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সন্তুষ্ট ও আস্থাশীল। গত বছরের সেপ্টেম্বরে মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে এই আস্থা সৃষ্টি হয়। তাঁকে পররাষ্ট্র বিভাগে রাখার ব্যাপারে উৎসাহিত হন প্রধানমন্ত্রী।

ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানি খোবরাগাড়েকে নিয়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের অবনতি হয়। ওই সম্পর্ক পুনর্গঠনে জয়শঙ্কর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। এ ছাড়া ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বেসামরিক পরমাণু চুক্তি সইয়ের ব্যাপারেও তাঁর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। পররাষ্ট্রসচিব পদে তাঁর নিয়োগের ক্ষেত্রে এসব বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের আগে চীন, সিঙ্গাপুর ও চেক রিপাবলিকে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন জয়শঙ্কর। বিশেষ করে বেইজিংয়ে দীর্ঘ সময় ছিলেন এই পেশাদার কূটনীতিক। এই সময়ে পররাষ্ট্রসচিব পদে তাঁর নিয়োগকে ভারত-চীন সম্পর্কের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। জয়শঙ্করের বাবা কে সুব্রামানিয়াম একজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা। তিনি কৌশলগত বিষয়াবলির একজন খ্যাতিমান বিশ্লেষক।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ