তিনি বলেন, আমরা বিদেশি কোনো সংস্থার কথা কানে নিই নি। আমরা দেশের প্রয়োজনে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আর কৃষকদের সহযোগিতা করাটা আমাদের জাতীয় কর্তব্য মনে করেছি। তাই আমরা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। কৃষকদের ফসলি জমিতে কীটনাশক ব্যবহার কমানোরও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আপনারা জমিতে অধিক পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহার করবেন না। অধিক পরিমাণে এই কীটনাশক ব্যবহারের প্রবণতা কমাতে হবে। এতে জমির উর্বরতা কমে যায়। কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে সমন্বিত বালাই নাশক পদ্ধতিতে পোকামাকড় দমনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, পোকামাকড়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে আলোর ফাঁদ ব্যবহার করতে পারেন, জমিতে পাখি বসার জন্য গাছের ডাল পুঁতে দেন।
জমিতে সেচ প্রদানকালে বিদ্যুৎ ও পানির অপচয় রোধে সচেতন হওয়ারও পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। বিদ্যুতের অপচয় রোধের পাশাপাশি সেচ প্রদানকালে পানির অপচয় রোধেও সচেতন হতে হবে। ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করতে কৃষকদের সুষম সার ব্যবহার একান্ত প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার বাড়ানোরও পরামর্শ দেন। জৈব সার মাটির গুণাগুণ ঠিক রাখে, যোগ করেন তিনি। দেশে কোনো জমি অনাবাদী না রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কারও কাছে হাত পেতে নয়, বাংলাদেশের জনগণ নিজেরাই মাথা উঁচু করে চলতে চায়।
শিক্ষিতদের কৃষি কাজে আগ্রহী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা মানে এই নয় যে শিক্ষিত হয়ে গেলে মাঠে যাওয়া যাবে না, জমিতে চাষ করা যাবে না বা কৃষক পিতাকে পরিচয় দেওয়া যাবে না। শিক্ষিত হলে বরং এই কৃষক পিতা যে কষ্ট করে লেখাপড়া শিখিয়েছে, নিজে জমিতে গায়ে খেটে এই কথাটা প্রত্যেকের মনে রাখতে হবে। পাশাপাশি নিজের জমি নিজে চাষ করা কোনো লজ্জার বিষয় নয়, গর্বের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বরিশাল এক সময় দেশের খাদ্যভাণ্ডার বলে পরিচিত থাকলেও এখন উত্তরবঙ্গে খাদ্যশস্য বেশি উৎপাদন হচ্ছে। সেচ নির্ভর বোরো উৎপাদন কমিয়ে অন্যান্য শস্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। পুরো দেশের কৃষকদেরই খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের প্রচুর পরিমাণ তেল আমদানি করতে হয়। তেল জাতীয় শস্য উৎপাদন করা গেলে আমদানি নির্ভরতা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। এতো উর্বর মাটি হওয়া সত্ত্বেও তেমন তেল জাতীয় শস্য উৎপাদন হচ্ছে না। দক্ষিণাঞ্চলবাসীকেও খাদ্যশস্যের উৎপাদন আগের চেয়ে বাড়াতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে উৎপাদনের ধরন পরিবর্তন করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আলু সংরক্ষণে দেশীয় পদ্ধতি ব্যবহার করলে অনেক দিন নষ্ট হবে না। বিক্রিও করা যাবে ভালো দামে। সরকার এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। এতে অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। উৎপাদিত পণ্যে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অনেক জমি সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এজন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি অনেক জমি পাওয়া যাবে। ভাসমান চরে চাষবাসের ব্যবস্থা করা যাবে। উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের প্রণোদনা দিয়ে আর্থিক সহায়তা করা হচ্ছে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে গ্রামের প্রতিটি বাড়ির নারী সম্পৃক্ত। গ্রাম ও কৃষিকে অর্থনীতির মূল কেন্দ্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে দারিদ্র্যের হার ক্রমেই কমছে। আমরা দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ৪ শতাংশে নামাতে সক্ষম হয়েছি। আগামীতে দারিদ্র্যের হার আরও ১০ শতাংশ কমে আসবে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে উঠবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।