মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৪
প্রচ্ছদরাজনীতিভৈরব সেতু দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি

ভৈরব সেতু দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি

ভৈরব সেতু দুর্নীতির মামলায় বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো: সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ জানে না। এটা কেউ জানে না। আমি গণমাধ্যমের কাছে বলতে চাই, আমরা ভৈরব সেতুর মামলা থেকে খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি দিয়েছি। এখন তিনি কেন বলেন না, দুদক নিরপেক্ষ? কেন বলছেন না, দুদক তাকে অব্যাহতি দিয়েছে।  ০৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে  আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উদ্দেশ্যে দুদকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সমাবেশে হঠাৎ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের বিরুদ্ধে মনগড়া কথা বলা শুরু করেছেন। তিনি (খালেদা জিয়া) দুদককে ব্যঙ্গ করে বলেন, দুদক দুর্নীতি কমিশন এবং দায়মুক্তি কমিশন। দায়মুক্তি শব্দের সঙ্গে দুদক জড়িত নয়। তিনি এসব কথা বলে আমাদেরকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন।

সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, হ্যাঁ, ‘দায়মুক্তি’ শব্দটি আপনার জানা থাকতে পারে। তবে ‘দায়মুক্তি’ শব্দটি দুদকের অভিধানে নেই। বাংলাদেশে একটি মাত্র দায়মুক্তি হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। সেই খুনিদেরকে খুনি মোশতাক দায়মুক্তি দিয়েছেন। এটাই একমাত্র দায়মুক্তির ঘটনা। তাই আপনারা যারা দায়মুক্তি বলেন, আমি বলতে পারি, দায়মুক্তি আপনারা সেখান থেকে গ্রহণ করেছেন? খালেদার সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, নিজের আয়নায় চেহারা দেখলেন না। আপনাদের আমলে কি হয়েছে? ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সেসময়ে আপনারা কোনো মন্ত্রী, এমপি আমলাকে দুদকে দাঁড় করাতে পারেননি।

খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন কর্তাব্যক্তি হিসেবে আমার এসব কথা বলার অধিকার আছে। কারণ, আপনি আমাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। জবাবদিহিতার মুখোমুখি করেছেন। সে হিসেবে আমি চ্যালেঞ্জ করি, আপনি আমার বক্তব্যকে খণ্ডন করুন।  দুদকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দাবি করেন, আমাদের কাছে কোনো সরকারি দল, বিরোধী দল মূখ্য নয়। আমাদের বিষয় হলো, দুর্নীতি অনুসন্ধান ও তদন্ত করা।  এ অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের সমালোচনার পাশাপাশি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশেরও  (টিআইবি) সমালোচনা করেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।  ‌‌‌‌‌‌সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, সম্প্রতি টিআইবি গ্লোবাল কনসেপ্টে দুর্নীতি বিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। টিআইবি এখান থেকে যা পাঠিয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে তাই প্রকাশিত হয়েছে। হেড কোয়ার্টারে (টিআই) যা পাঠানো হয়েছে, তা প্রকৃত চিত্রের বিপরীত।

তিনি বলেন, আমি নির্দ্বিধায় ও নি:সংকোচে বলতে পারি, এ প্রতিবেদন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একটি বিশেষ গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নে তারা কাজ করছে। সুতরাং, আমরা কি বলতে পারি না, তারা আমাদের ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’?   প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং বর্তমান আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হক বলেন, টিআইবি এমন একটি প্রতিষ্ঠান যারা নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের দাবি করলেও অপরাপর প্রতিষ্ঠানের ওপর ধারণা থেকে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।  তিনি বলেন, আমি যখন প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি, ২০১০ সালের শেষ দিকে টিআইবি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, বিচার বিভাগ সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত।

তিনি বলেন, একজন প্র্যাকটিসিং ল’ ইয়ার এবং প্রধান বিচারপতি হিসেবে আমিও জানতাম, বিচার বিভাগে কিছু কিছু জায়গায় দুর্নীতি হয়। সেজন্য টিআইবি’র প্রতিবেদন ছিল আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি চেয়েছি, ওই প্রতিবেদনের আলোকে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। এজন্য একটি টিমও গঠন করেছিলাম। কিন্তু টিআইবি কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত দিতে ব্যর্থ হয়। তারা বলে, এ প্রতিবেদন ধারণা থেকে তৈরি। এটা হতে পারে না। এটা আশ্চর্যজনক। এটা উচিত না।  নানা মহল থেকে সমালোচনা প্রসঙ্গে সাবেক এ প্রধান বিচারপতি দুদকের উদ্দেশ্যে বলেন, সমালোচনায় ভীত হবেন না। ক্ষুব্ধ হবেন না। প্রয়োজনে যারা সমালোচনা করেন, তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত চেয়ে চিঠি পাঠান। তিনি আরও বলেন, দৃশ্যমান শাস্তির ব্যবস্থা না হলে মানুষ দুদকের প্রতি আস্থা হারাবে।  দুদকের সচিব মাকসুদুল হাসান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) মো নাসির উদ্দিন, মহাপরিচালক (আইন ও বিচার) কামরুল হাসান মোল্লা।  এর আগে সকালে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস উপলক্ষ্যে দুদক র‌্যালি ও মানববন্ধনের আয়োজন করে। র‌্যালিটি কাকরাইল, বিজয়নগর হয়ে প্রেসক্লাবে এসে মানববন্ধন করে। এরপর দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এসে র‌্যালিটি শেষ হয়।  ২০০৩ সালে ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘ এবং ২০০৪ সাল থেকে সারা বিশ্বে প্রতি বছর দিবসটি পালন করে আসছে। বাংলাদেশ ২০০৮ সাল থেকে দিবসটি পালন করছে।

  • বিষয়:
  • top
আরও পড়ুন

সর্বশেষ