বৃহস্পতিবার, মে ১৬, ২০২৪
প্রচ্ছদঅর্থ ও বানিজ্য সময়ব্যাংকিং খাতে আমানতের ও ঋণের সুদহারের ব্যবধান আবারো বেড়ে যাচ্ছে

ব্যাংকিং খাতে আমানতের ও ঋণের সুদহারের ব্যবধান আবারো বেড়ে যাচ্ছে

ব্যাংকিং খাতে আমানতের ও ঋণের সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) আবারো বেড়ে যাচ্ছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার কমালেও ঋণের ক্ষেত্রে একইহারে না কমানোর ফলে এমন হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব মতে, বর্তমানে সবগুলো ব্যাংকের গড় স্প্রেড রয়েছে পাঁচ দশমিক ১২ শতাংশীয় পয়েন্টে। অথচ কয়েকমাস আগেও ব্যাংকগুলোর গড় স্প্রেড পাঁচ শতাংশীয় পয়েন্টের নিচে ছিল। এদিকে স্প্রেড পাঁচ শতাংশীয় পয়েন্টের নিচে রাখার জন্য ব্যাংকগুলোর প্রতি যে নির্দেশনা রয়েছে তা মানেনি ২৭ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আগস্ট শেষে ঋণ ও আমানত উভয় ক্ষেত্রেই কিছুটা সুদহার কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। ফলে দেশের ৫৭টি ব্যাংকের ঋণের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যা জুলাই শেষে ছিল ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এ সময় আমানতে গড় সুদহার কিছুটা কমে  ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা জুলাই শেষে ছিল ৭ দশমিক ৭১ শতাংশ। এতে ব্যাংকিং খাতের গড় স্প্রেড দাঁড়িয়েছে পাঁচ দশমিক ১২ শতাংশীয় পয়েন্ট, যা জুলাই শেষে ছিল ৫ দশমিক ১৩ শতাংশীয় পয়েন্ট।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে বিশেষায়িত খাতের বেসিক ব্যাংকের স্প্রেড বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ১৩ শতাংশীয় পয়েন্ট। যা এর আগের মাস জুলাইয়ে ছিল ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশীয় পয়েন্ট। এছাড়া, বেসরকারি ও বিদেশি মালিকানার আরো ২৬টি ব্যাংকের ঋণ-আমানতের ব্যবধান পাঁচ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপরে রয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণের গড় সুদহার ১৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ রয়েছে। যদিও এসব ব্যাংকের আমানতে আরো এক দফা সুদহার কমানো হয়েছে। আমানতের গড় সুদহার ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। যা আগে ছিল ৮  দশমিক চার শতাংশ। এতে তাদের স্প্রেডের ব্যবধান ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশীয় পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

ঋন-আমানতের সুদের ব্যবধান (স্প্রেড) সংক্রান্ত নীতিমালা লঙ্ঘনকারী বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে সবার শীর্ষে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। এ ব্যাংকের ঋণ-আমানতের ব্যবধান ১০ দশমিক ৭৪ শতাংশীয় পয়েন্ট। যা এর আগের মাসে ছিল ১০ দশমিক ৩২ শতাংশীয় পয়েন্ট। এর পরে ডাচ বাংলার ৭ দশমিক ৫১ শতাংশ ও ওয়ান ব্যাংকের ঋণ-আমানতের ব্যবধান ৭ দশমিক ৩৪ শতাংশীয় পয়েন্ট। এছাড়া বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংকের ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ, দি সিটি ব্যাংকের ৬ দশমিক ৩২, আইএফআইসি ব্যাংকের ৬ দশমিক ৪৭, পূবালীর ৫ দশমিক ৩৭, উত্তরা ব্যাংকের ৬ দশমিক ১০, ইস্টার্ন ব্যাংকের ৫ দশমিক ৫৬, প্রাইম ব্যাংকের পাঁচ দশমিক ৭৪, সাউথ ইস্ট ব্যাংকের ৫ দশমিক ৪৪, ঢাকা ব্যাংকের ৫ দশমিক ১৯, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের  ৫  দশমিক ১০, এক্সিম ব্যাংকের ৫ দশমিক ২৪, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৫ দশমিক ৭৮, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৬ দশমিক ১৬, ফার্স্ট

সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ব্যাংক এশিয়ায় ৫ দশমিক ২২ ও যমুনা ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের ব্যবধান ৫ দশমিক ২১ শতাংশীয় পয়েন্ট।এদিকে, বিদেশি মালিকানার ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানতের ব্যবধান সবচেয়ে বেশি। এসব ব্যাংকের গড় স্প্রেড ৮ দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা আগের মাসে ছিল ৭ দশমিক ৯৮ শতাংশীয় পয়েন্ট। এ ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদহার কমে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ঋণের সুদহার কিছুটা কমে ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ রয়েছে। এর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের স্প্রেড ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ, হাবিব ব্যাংকের ৫ দশমিক ১০, সিটি ব্যাংক এনএ’র ৮ দশমিক ৩৭, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন’র ৭ দশমিক ২৪, উরি ব্যাংকের ৬ দশমিক ৫২, এইচএসবিসি ব্যাংকের স্প্রেড ৬ দশমিক ৮৫, ব্যাংক আল-ফালাহ্’র স্প্রেড ৫ দশমিক ১৪ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপরে রয়েছে।

অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানার চার ব্যাংকের ঋণে গড় সুদ হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশে। আমানতে সুদ হার সাত দশমিক ২০ শতাংশ। এতে তাদের স্প্রেডের ব্যবধান তিন দশমিক ৫২ শতাংশীয় পয়েন্ট। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো গড়ে ১২ দশমিক ২৩ শতাংশ সুদে ঋণ দিয়েছে। আমানতে সুদ দিয়েছে মাত্র ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। এতে তাদের স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৯৬ শতাংশীয় পয়েন্ট।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আমানতের সুদের থেকে ঋণের সুদের হারের পার্থক্য পাঁচ (অর্থাত্ পাঁচ শতাংশীয় পয়েন্ট)-এর মধ্যে থাকতে হবে। যদিও মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ব্যাংকগুলো নিজস্ব নীতিমালার আলোকে ঋণ ও আমানতে সুদহার নির্ধারণ করতে পারে। তবে নৈতিক চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে ঋণের সুদহার কমানোর লক্ষ্যেই ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এ নির্দেশনা দেয়।

  • বিষয়:
  • top
আরও পড়ুন

সর্বশেষ