এদিকে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সভায় প্রধানমন্ত্রী বিলটির ব্যাপারে নানা মহলের সমালোচনা প্রসঙ্গে বলেন, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলামসহ যারা বিরোধিতা করছেন, তারা তো ৭২-এর সংবিধানে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদকেই দিয়েছিলেন, বিধানটি রেখেছিলেন। উনারা ১৯৭২ সালে বিধানটি রাখতে পারলে আমরা ২০১৪ সালে এসে তা পুনর্বহাল করতে পারবো না কেনো? আসলে তারা বিরোধিতা করছেন এ জন্য যে, তারা ওই সময় করেছেন, আমরা এখন যেন করতে না পারি। বাস্তবে অনেকেই আছে যাদের আওয়ামী লীগ ও সরকারের কোনো শুভ এবং ভাল কাজ পছন্দ হয় না। সবকিছুতেই বিরোধিতা করাই যেন অনেকের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ খণ্ডন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জনগণের ম্যান্ডেট (রায়) নিয়ে আমরা ক্ষমতায় এসেছি। তাই সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা আমাদের রয়েছে। অনেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বিএনপি নির্বাচনে আসেনি বলেই অনেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কে নির্বাচনে এলো, কে এলো না সেটা বিষয় নয়, জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে। জণগণের রায় নিয়েই আমরা ক্ষমতায় এসেছি। তাই রাতের টকশ’সহ অনেক জায়গায় অনেকেই বিরোধিতা ও নানান কথা বলবে। তবে, আমাদের সবাইকে জনগণের সামনে সঠিক সত্য তুলে ধরতে হবে। জনগণকে এদের ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক করতে হবে। যাতে দেশবাসী বিভ্রান্ত না হয়। আর বিলটি পাস হলে গণতন্ত্রই বিকশিত হবে।
সূত্র আরো জানায়, বৈঠকে প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু বলেন, কে কি বললো, বা কে বিরোধিতা করলো- সেটা দেখে লাভ নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পরিচালনা করতে হলে বাহাত্তরের সংবিধানের কোন বিকল্প নেই। তাই বাহাত্তরের সংবিধানে যেটি ছিল, সেটিই ফেরত আনা হচ্ছে। তাই বিলটি পাস করা নিয়ে অযথা বিলম্ব করার কোন প্রয়োজন নেই। দ্রুতই বিলটি পাস করার দাবি জানালে বৈঠকে উপস্থিত প্রায় সব সংসদ সদস্যই তার দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান।
বিলে বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন নেই মন্তব্য করে আমির হোসেন আমু আরো বলেন, যাদের ডেকে আমরা মতামত নেবো, তারা মতামত নিলেও সমালোচনা করবে, না নিলেও সমালোচনা করবে। তাদের মতামত নেওয়ার কোনো দরকার নেই। বৈঠকে আলোচনা অংশ নিয়ে সিনিয়র নেতারা বলেছেন, এখানে বিচারপতিদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। কারো প্রতি আক্রোশ থেকে নয়, বরং গণতন্ত্রকে সুবিন্যাস্ত ও সুসংহত করতেই এ বিলটি আনা হয়েছে। এটা নতুন কোনো বিষয় নয়, বাহাত্তরের সংবিধানের মূল চেতনা প্রতিস্থাপন হয়েছে।
জিয়াউর রহমনের শাসনামলে প্রধান বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেনকে আদালত থেকে নেমে বাড়ি যেতে হয়েছিল। এ প্রক্রিয়া বিচারপতিদের সম্মান আরো সুসংহত হবে। কেবল কমনওয়েলথভুক্ত দেশ বলে নয়, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংদের হাতে রয়েছে। সংসদ যেখানে সকল ক্ষমতার উৎস, সেখানে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতাও সংসদের হাতে থাকা দরকার। বৈঠকে তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আলী আশরাফ, উপাধ্যাক্ষ আব্দুস শহীদসহ অন্যান্য নেতারা বক্তব্য রাখেন।