বুধবার, ডিসেম্বর ১১, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিননাসিমন ভবনেই আটকে আছে নগর বিএনপি!

নাসিমন ভবনেই আটকে আছে নগর বিএনপি!

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কার্যক্রম এখন শুধুই দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনকেন্দ্রিক। কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপি সরকারবিরোধী নানা কর্মসূচি দিলেও চট্টগ্রামে নাসিমন ভবন ঘিরেই তা পালন হয়ে থাকে। হরতালের মতো কর্মসূচি পালনেও দলীয় কার্যালয়ের বৃত্ত থেকে বের হতে পারে না নেতাকর্মীরা। শুধু বিএনপি নয়, অঙ্গ সংগঠনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।
শুধু দলীয় সভা-সমাবেশ নয়, সরকারবিরোধী সমস্ত আন্দোলন সংগ্রামও হচ্ছে ওই এলাকা ঘিরে। নাসিমন ভবন থেকে বেরিয়ে বিএনপি সর্বোচ্চ কাজীর দেউড়ি মোড় থেকে লাভ লেইনের মুখ পর্যন্ত কর্মসূচি সম্প্রসারণ করে। সেখানেও তেমন জমে না সরকারবিরোধী কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম। জমায়েতও তেমন হয় না। হাতেগোনা কিছু নেতাকর্মীই নিয়মিত হাজিরা দেন সেখানে। তাদের অধিকাংশই আবার দেখা যায় কেবল খোশগল্প করেই সময় পার করেন।
এছাড়া নগরর বিএনপির বিভিন্ন মিছিল হয়ে থাকে থকে নাসিমন ভবন দলীয় কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে কাজীর দেউড়ি, এস এস খালেদ সড়ক হয়ে প্রেসক্লাব পর্যন্ত। অন্যদিকে জুবিলি রোড দিয়ে এনায়েত বাজার হয়ে বিআরটিসি পর্যন্ত গিয়েও শেষ হয়। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের মিছিলগুলো সাধারণত এসব এলাকার বাইরে হয় না।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীরা যেভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করছে তা প্রকৃত অর্থে আন্দোলন নয়। অবসর সময় কাটানো ও খোশগল্প করেই সময় পার করা হয়। হরতাল হলেও তা নাসিমন ভবনকেন্দ্রিক। নগরীর কোথাও হরতাল পালনের রেশ থাকে না। অথচ হরতালসহ সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে হলে পুরো শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্পটে নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতির মাধ্যমে সভা-সমাবেশ করা দরকার। আন্দোলন সংগ্রাম করতে হবে নগরজুড়ে। তা না হলে আন্দোলন কখনো বেগবান হবে না।’
এ প্রসঙ্গে কথা বলতে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিএনপির অন্যতম নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান এবং নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম বিএনপির অন্যতম নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন সুপ্রভাত বাংলাদেশকে বলেন, ‘প্রকৃত অর্থে এখন যেভাবে আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার সেভাবে আন্দোলন করা যাচ্ছে না। কি কারণে হচ্ছে না তা নিয়ে ভাবা দরকার। এ জন্য দরকার তৃণমূলে শক্তিশালী নেতৃত্ব গড়ে তোলা। তৃণমূলে জোরালো আন্দোলন গড়ে না উঠলে সে আন্দোলন কখনো শক্তিশালী হয় না।’ চট্টগ্রামে সরকারবিরোধী আন্দোলন জমে না উঠার কারণ কী? প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এখন দল হয়ে পড়েছে দলীয় কার্যালয়কেন্দ্রিক। কার্যালয় ঘিরেই পালন হয়ে থাকে সব কার্যক্রম। ফলে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা নেতাদের চেহারা দেখানোর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন বেশি।’
তবে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন সুপ্রভাত বাংলাদেশকে বলেন, হরতালের সময় পুরো নগরের আমাদের কর্মসূচি পরিচালিত হয়ে থাকে। এসব কর্মসূচি তদারক করি আমি নিজেই।
হরতালের মতো কর্মসূচির মধ্যে অধিকাংশ নেতাদের তৎপর দেখা যায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিষয়টি কিভাবে অস্বীকার করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হরতালের দিন সকালে নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হলেও আটটা পর্যন্ত সেখানে থাকেন। পরবর্তীতে নগরের বিভিন্ন জায়গায় হরতালের পক্ষে সভা সমাবেশ করা হয়ে থাকে। বিকেলে নেতাকর্মীরা আবার জড়ো হয় দলীয় কার্যালয়ের সামনে।’ হরতালে নগরে কোন কোন এলাকায় আপনাদের তৎপরতা বেশি থাকে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নগরের ওয়াসা, বন্দর, ইপিজেড, বাকলিয়া, কালামিয়া বাজার, বহদ্দারহাট, অলংকার মোড়, একে খান গেট, মুরাদপুর, কর্ণফুলী সেতুসহ বিভিন্ন এলাকায় আমাদের নেতাকর্মীরা হরতালের সমর্থনে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকে।’
অপরদিকে দলীয় কার্যালয় ছাড়া নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় বিএনপি কিছুটা তৎপরতা দেখা যায়। সেখানে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে তৎপর থাকেন চান্দগাঁও ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাহবুবুল আলম। তার নেতৃত্বে ওই এলাকায় সভা সমাবেশ ও মিছিল হয়ে থাকে নিয়মিত।
নগর যুবদল সভাপতি কাজী বেলাল উদ্দিন বলেন, নগরের প্রতিটি এলাকায় আমাদের সমান তৎপরতা রয়েছে। হরতালের সময় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মিছিল ও সভা হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে আপনাদের আন্দোলন সংগ্রাম দলীয় কার্যালয় কেন্দ্রিক কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনার (প্রতিবেদক) দৃষ্টিতে হয়তো এমন মনে হচ্ছে। কিন্তু ভালো করে খোঁজ নেয়া হলে তা মনে হবে না।’
নগর ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল বলেন, নগর জুড়ে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে না উঠার পেছনে দলে সমন্বিত উদ্যোগের অভাব রয়েছে। মূলত সব নেতারা বসলে তা নিরসন হতো। বিষয়টি আসলে ভাবা দরকার সিনিয়রদের। আমি ছোট হিসেবে এ ব্যাপারে কিছু বলা বেয়াদবি হবে।
হরতালসহ দলের বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে কাজীর দেউরি পর্যন্ত সড়কের দুই পাশ বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে ওই এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে সড়কের বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে থাকে। যানবাহন চলাচল করলে ভাংচুর করে। ইদানীং আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে বিএনপি হরতালের কর্মসূচি দিলেই আগের দিন সন্ধ্যায় নসিমন ভবন এলাকায় কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে আতংক সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। পরদিন দলীয় কার্যালয়ে জড়ো হয়ে সমাবেশ করে। এর মধ্যে কার্যক্রম সীমাবদ্ধ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ