শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
প্রচ্ছদঅর্থ ও বানিজ্য সময়রমজানে নিম্ন-মধ্যবিত্তদের ভরসা টিসিবি’র পণ্যই

রমজানে নিম্ন-মধ্যবিত্তদের ভরসা টিসিবি’র পণ্যই

রমজান এলেই ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে নিত্যপণ্যের দাম। বাজারে গিয়ে চাহিদার বিপরীতে পণ্য কিনতে হিমশিম খেতে হয় নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত ক্রেতাদের। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন নিম্ন আয়ের লোকজন। ফলে পাইকারী ও খুচরা বাজার ছেড়ে ক্রেতারা ভরসা করেন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যে। রমজান মাসে মধ্য ও নিম্ন আয়ের ক্রেতাদের সুবিধার্থে সরকার স্বল্প মূল্যে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি চালু করে। এতে ক্রেতাদের মাঝেও ব্যাপক সাড়া মেলে। দামের দিক থেকে টিসিবি’র পণ্য সাধ্যের মধ্যে হলেও পণ্যের অপ্রতুলতা এবং দু’একটি পণ্যের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন ক্রেতারা। এরপরও বাজারের নিত্য পণ্যের দাম বাড়তে থাকায় টিসিবি’র পণ্যই শেষ ভরসা হিসেবে দেখছেন তারা।

বৃহস্পতিবার নগরীর বিভিন্ন স্থানের পণ্য বিক্রির ট্রাকে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। নগরীর বন্দর বাজারস্থ নগর ভবনের সামনের রাস্তায়, সুবহানীঘাট পয়েন্ট, আম্বরখানা পয়েন্ট, টিলাগড় পয়েন্ট, কালিঘাট এলাকায় প্রত্যেক ডিলার নিজস্ব ট্রাকে লাল ব্যানারে মূল্য সম্বলিত টিসিবির বরাদ্দকৃত পণ্য সামগ্রীর বিক্রি করছেন। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত টিসিবির প্রতিনিধির উপস্থিতিতে নির্ধারিত স্থানে সর্বসাধারণের নিকট এ পণ্যসামগ্রী বিক্রি করা হয়ে থাকে। কোনো ডিলার দিনে উত্তোলিত পণ্যের ৫০ শতাংশের কম বিক্রয় করলে তাকে পরবর্তী দিনের জন্য পণ্য বরাদ্দ দেয়া হয়না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

টিসিবির বিক্রিত পণ্যগুলো হচ্ছে- সয়াবিন তেল, চিনি, ছোলা এবং মসুর ডাল (তুরস্ক-কানাডা)। এর মধ্যে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতিলিটার ১০৭ টাকা, চিনি  প্রতিকেজি ৪০ টাকা, মসুর ডাল (তুরস্ক-কানাডা) প্রতিকেজি ৬৫ টাকা এবং ছোলা প্রতিকেজি ৪৪ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। মাথাপিছু একজন ক্রেতা ৫কেজি চিনি, ৫ লিটার সয়াবিন তেল, ৩ কেজি মসুর ডাল এবং ৩ কেজি ছোলা কিনতে পারবেন। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ বিক্রয় কার্যক্রম চলে।

নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের লোকজনের দাবি- পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে অধিক মুনাফার লোভে সকল নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। এর বিপরীতে সরকার টিসিবি’র  পণ্য সীমাবদ্ধ না রেখে আরো বাড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন ছিলো। তখন সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের এই সিন্ডিকেটে ফাটল ধরানো সম্ভব হতো বলেও জানান তারা।

ক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, টিসিবিতে ডাল বাজার থেকে কেজিপ্রতি ৫৫ টাকা কমে বিক্রি করা হচ্ছে। বর্তমানে বাজারে প্রতিকেজি ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। ছোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। আর টিসিবিতে বিক্রি করছে ৪৪ টাকায়। তবে টিসিবি’র এসব ছোলা বাজারের ছোলার থেকে নিম্নমানের বলে দাবি ক্রেতাদের।

এছাড়া চিনির প্রতিকেজি বাজারে ৪৫টাকা বিক্রি হলেও টিসিবিতে তা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়,  বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বাজারে ১২০ থেকে ১৩০টাকায় বিক্রি হলেও টিসিবিতে এর দাম রাখা হচ্ছে ১০৭টাকা। তবে তালিকায় খেজুর কেজিপ্রতি ৭০টাকা উল্লেখ থাকলেও টিসিবিতে তা পাচ্ছেন না ক্রেতারা।

বাজার থেকে অনেকটা কম মূল্যে পাওয়ায় টিসিবি’র পণ্য কিনতে আসা নগরীর কাজিটুলা এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন জানান- বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে টিসিবিতেও সব ভোগ্য পণ্য রাখা হলে আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতারা সাশ্রয়ী মূল্যে এসব পণ্য কিনতে পারতেন।

টিসিবির পণ্য বিক্রির সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়ে বেসরকারী কোম্পানীতে কর্মরত সোহেল আহমদ  বলেন- চাকরিজীবীদের সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অফিসে থাকতে হয়, তাহলে তারা কীভাবে কিনবেন? এজন্য বিক্রির সময় রাত ৮টা পর্যন্ত বাড়ানো হলে সবার জন্য সুবিধা হতো বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সিলেটের আঞ্চলিক কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন আহমদ বলেন, সিলেট সদর উপজেলাসহ নগরীতে ৪৩জন এবং অন্যান্য উপজেলা পর্যায়ে ২ থেকে ৫জন করে মোট ১শ’৫জন পরিবেশকের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।

নিম্নমানের ছোলা বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, টিসিবির বিক্রিত ছোলা তানজেনিয়া থেকে আমদানিকৃত। এটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কোনো কারণ নেই। তালিকায় থাকলেও খেজুর বিক্রি না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খেজুর মজুদের সংখ্যা পরিমানে কম। ফলে কম সংখ্যক খেজুর আনলে পরিবহন ভাড়া মাত্রাতিরিক্ত বেশি পড়ে যায়। এ কারণে খেজুর বিক্রি বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ছোলার মজুদ প্রায় শেষ হওয়ার পর্যায়ে। আগামী ১২/১৩ জুলাই থেকে ছোলা বিক্রিও বন্ধ হয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ