মঙ্গলবার, মে ৭, ২০২৪
প্রচ্ছদখেলার সময়সেজারের বীরত্বে চিলিকে হারিয়ে শেষ আটে স্বাগতিকরা

সেজারের বীরত্বে চিলিকে হারিয়ে শেষ আটে স্বাগতিকরা

শ্বাসরুদ্ধকর একটি ম্যাচ জিতে ব্রাজিল টিকিয়ে রাখলো ষষ্ঠ শিরোপা জয়ের স্বপ্ন। গোলরক্ষক জুলিও সেজারের অসামান্য বীরত্বে চিলিকে টাইব্রেকার ৩-২ গোলে হারিয়ে শেষ আটে উঠেছে স্বাগতিকরা। ১-১ গোলে সমতায় থাকা ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ানোর পর মুরিসিও পিনিইয়া ও আলেক্সিস সানচেসের প্রথম দুটি শট ঠেকিয়ে দেন সেজার। গনসালো হারার শেষ শট বারে লেগে ফিরলে শেষ আট নিশ্চিত হয়ে যায় ব্রাজিলের। পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের পক্ষে লক্ষ্যভেদ করেন দাভিদ লুইস, মার্সেলো ও নেইমার। বাইরে মারেন উইলিয়ান। আর হাল্কের শট ঠেকিয়ে খেলায় নখ কামড়ানো উত্তেজনা এনে দেন চিলির ক্লদিও ব্রাভো।

এর আগে দাভিদ লুইসের গোলে ১৮তম মিনিটে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। ৩২তম মিনিটে সানচেসের গোলে সমতা ফেরায় চিলি। এরপর অতিরিক্ত সময়সহ আরো প্রায় নব্বই মিনিট গোলের দেখা পায়নি কোনো দল। অবশ্য অতিরিক্ত সময়েরও শেষ দিকে চিলির পিনিইয়ার শট ক্রসবারে লাগায় বেঁচে যায় ব্রাজিল। শনিবার বেলো হরিজন্তের স্তাদিও মিনেইরাওয়ে শুরু থেকেই ব্রাজিলের সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দেয় চিলি। তবে প্রথম পনের মিনিট পরিষ্কার কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি কোনো দলই। ম্যাচের ১৮তম মিনিটে নেইমারের কর্নার থেকে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। বাঁ দিক থেকে বার্সেলোনা তারকার কর্নার থেকে চিয়াগো সিলভার হেড খুঁজে পেয়েছিল দাভিদ লুইসকে। তার হাঁটুতে লেগে বল জালে জড়ালে উল্লাসে ফেটে পড়ে গ্যালারি।

৩২তম মিনিটে হাল্কের ভুলে আলেক্সিস সানচেস সমতা ফেরান। নিজেদের রক্ষণ সীমায় মার্সেলো থ্রো দিয়েছিলেন হাল্ককে। কিন্তু তিনি ঠিকমতো বল ফিরিয়ে দিতে পারেননি। বল পেয়ে যান এদুয়ার্দো বার্গাস। অরক্ষিত সানচেসকে খুঁজে পান তিনি। ডি বক্সের ভেতর থেকে জুলিও সেজারকে পরাস্ত করতে কোনো সমস্যা হয়নি বার্সেলোনা স্ট্রাইকারের। ৩৬তম মিনিটেই আবার এগিয়ে যেতে পারতো ব্রাজিল। অস্কারের ক্রসে নেইমারের হেড চিলির ফ্রান্সিসকো সিলভার মাথায় লেগে অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

৩৯তম মিনিটে আবার সুযোগ আসে ব্রাজিলের সামনে। ডি বক্সের ভেতরে একটি ক্রস বুক দিয়ে নামিয়েছিলেন নেইমার। তবে সঙ্গে থাকা ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিতে পারেননি তিনি। বিপদ দেখে এগিয়ে এসেছিলেন গোলরক্ষক ব্রাভোও। এক ডিফেন্ডার বল বিপদমুক্ত করতে গেলে বল পেয়ে যান ফ্রেদ। কিন্তু ফাঁকা জালেও বল পাঠাতে পারেননি তিনি। তবে সুযোগ বেশি তৈরি করে ব্রাজিলই। অবশ্য রক্ষণভাগে গিয়ে সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল নেইমার, হাল্কদের। ৬৪তম মিনিটে অনুজ্জ্বল ফ্রেদকে তুলে নেন লুইস ফেলিপে স্কলারি। তার বদলি নেমে তেমন কিছু করতে পারেননি জো। ৪২তম মিনিটে আলভেসের দূরপাল্লার শট এক হাতে ফিস্ট করে চিলির ত্রাতা ক্লদিও ব্রাভো।

দ্বিতীয়ার্ধে সানচেসদের সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে চিয়াগো সিলভা, দাভিদ লুইসদের। নির্ধারিত নব্বই মিনিটের শেষ দিকে ব্রাজিলের রক্ষণভাগের ওপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি করেছিল হোর্হে সামপাওলির শিষ্যরা। কিন্তু চিয়াগো সিলভা, দাভিদ লুইসদের রক্ষণ ভাঙতে পারেনি তারা। ৫৪তম মিনিটে হ্যান্ডবলের জন্য বাতিল হয়ে যায় হাল্কের গোল। ডি বক্সে মার্সেলোর ক্রস বুক দিয়ে নামিয়ে বাঁ পায়ের শটে জালে জড়ান হাল্ক। গোল উদযাপন করতে থাকা হাল্ক দেখেন হলুদ কার্ড। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে হ্যান্ড বল ছিল না, বুক দিয়ে বল নামিয়েছিলেন তিনি। দশ মিনিট পর গোলরক্ষকের দক্ষতায় বেঁচে যায় ব্রাজিল। মাওরেসিও ইসলার পাসে খুব কাছ থেকে আরানগেসের শট ফিরিয়ে দেন সেজার। ৭৪তম মিনিটে সুযোগ এসেছিল জোর সামনে। হাল্কের ক্রসে পা ছোঁয়াতে পারলেই গোল পেতে পারতেন এই স্ট্রাইকার। সাত মিনিট পর নেইমারকে হতাশ করেন ব্রাভো। দানি আলভেসের ক্রস থেকে নেইমারের হেড ফিরিয়ে দেন তিনি।

দুই মিনিট পর আবার সুযোগ পেয়েছিল ব্রাজিল। এবারো ত্রাতা সদ্য বার্সেলোনায় যোগ দেয়া ব্রাভো। একজনকে কাটিয়ে ডি বক্স থেকে ডান পায়ের জোরালো শট নিয়েছিলেন হাল্ক। কিন্তু পরাস্ত করতে পারেননি চিলির গোলরকক্ষককে। তাই দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম ম্যাচটিই গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ে ১০৩তম মিনিটে ভালো একটি সুযোগ এসেছিল হাল্কের সামনে। জেনিত সেন্ট পিটার্সবার্গ স্ট্রাইকারের শট কোনোমতে ঠেকিয়ে দেন ব্রাভো। শেষ দিকে আক্রমণের চেষ্টা না করে নিজেদের রক্ষণ সামলাতেই মনোযোগ দেয় চিলি। তাদের সব খেলোয়াড়ই নিজেদের অর্ধে ছিল। একের পর এক আক্রমণ গড়লেও প্রতিপক্ষের রক্ষণ সীমায় গিয়ে আর পেরে উঠেনি পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা।

তবে শেষ মিনিটে সানচেসের পাস থেকে মুরিসিও পিনিইয়ার শট ক্রসবারে লেগে ফিরলে বেঁচে যায় ব্রাজিল। টাইব্রেকারে প্রথম শট নেন ব্রাজিলের লুইস, গোল করেন তিনি। চিলির পিনিইয়ার শট ঠেকিয়ে দেন সেজার। পরের শটটি বাইরে মারেন অতিরিক্ত সময়ের বদলি উইলিয়ান। সঙ্গে সঙ্গে পিন পতন নীরবতা নেমে আসে পুরো স্টেডিয়ামে। তবে সানচেসের পরের শটটিও ঠেকিয়ে দেন সেজার। ব্রাজিলের মার্সেলোর গোলের পর চিলির চার্লস আরানগেস লক্ষ্যভেদ করলে চিলির আশা বেঁচে থাকে। হাল্কের পরের শটটি ঠেকিয়ে দেন চিলির ব্রাভো। মার্সেলো দিয়াজের শট সেজার ফেরাতে না পারায় টাইব্রেকারে ২-২ সমতা হয়ে যায়। পরের শটে লক্ষ্যভেদ করেন নেইমার। টাইব্রেকারে গনসালো হারার শট বারে লেগে ফিরলে বিদায় কান্নাভেজা বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায় চিলির।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ