সাদ আল আলম, বিশেষ প্রতিনিধি, লন্ডন (বিডিসময়২৪ডটকম)
রোববার লন্ডনে হয়ে গেলো বাঙালির প্রাণের উৎসব বৈশাখি মেলা। এদিন পূর্ব লন্ডনের ভিক্টোরিয়া পার্কে সৃষ্টি হয়েছিলো প্রবাসী বাঙালিদের বাঁধভাঙ্গা জোয়ার। ব্রিটেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার প্রবাসী বাঙালি অংশ নেন এ মেলায়। আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও বাংলাদেশ থেকেও এসেছিলেন অনেকে। এ যেন শেকড়ের টানে একই মোহনায় সবার সামিল হওয়া। তারুণ্যের উচ্ছাসের সাথে সব প্রজন্মের একাকার হওয়ার চেষ্টা মেলায় সৃষ্টি করেছিলো এক ভিন্ন মাত্রা।
ঢাক-ঢোল, হরেক রকমের বাদ্যি-বাজনা আর রঙ-বেরঙের সাজপোশাক নিয়ে দিনব্যাপী জমজমাট ছিল বিশ্ব-বাঙালির এই মিলনমেলা। দীর্ঘদিন পর পরিচিত বন্ধুবান্ধব একে-অপরের সাক্ষাৎ পান মেলায়। সৃষ্টি হয় এক আবেগ আর আনন্দঘন পরিবেশ। মেলা যেন পরিণত হয় পশ্চিমা ধারায় বেড়ে ওঠা প্রজন্মের শেকড়মুখী হওয়ার একটি উপলক্ষ্য। মেলা প্রাঙ্গণে বসেছিলো বই, পেইন্টিং, বাঙালি পোশাক-আশাক,বাচ্চাদের খেলনা ইত্যাদি হরেক রকম পণ্যের স্টল। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য সংগঠনও নিজেদের স্টল নিয়ে বসেছিল মেলায়। রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের তৈরি পণ্য নিয়েও বসেছিলো একটি স্টল।
সকাল ১১টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা দিয়ে শুরু হয় বৈশাখি মেলার আনুষ্ঠানিকতা। রঙ-বেরঙের সাজে সজ্জিত হাজারও মানুষ বিভিন্ন রঙের ব্যানার, ফেস্টুন ও প্রতিকৃতি নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ অনেক তরুণ তরুণীকেও শাড়ি ও লুঙ্গি পড়ে শোভাযাত্রায় অংশ নিতে দেখা গেছে। বাংলা বর্ণমালা খচিত বড় বড় ব্যানার ফেস্টুন ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার উপস্থিতি বৈশাখি মেলার শোভাযাত্রাকে করে তোলে আরও বর্ণময়, আরও আকর্ষণীয়।
মেলা চলাকালীন পূরো সময়ই ভিক্টোরিয়া পার্কের মূল মঞ্চে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে কিংবদন্তী সঙ্গীত শিল্পী কুমার শানুসহ খ্যতিমান শিল্পীরা অংশ নেন। গানের ফাঁকে মেলায় আগত প্রবাসী বাঙ্গালিদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন ব্রিটেনের শ্যাডো এডুকেশন মিনিস্টার ও বাঙালি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রোশনারা আলী।
তিনি বলেন, বাঙালির সংস্কৃতি সমৃদ্ধ বলেই আজ এটি ব্রিটিশ মূলধারায় স্থান করে নিয়েছে। বাঙালির বৈশাখি মেলা আমাদের কমিউনিটি ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করেছে। শুধু টাওয়ার হ্যামলেটসই নয়, এই মেলা আজ ব্রিটিশ মূলধারার কাছেও একটি সার্বজনীন উৎসবের পরিচিতি পাচ্ছে।
এদিকে, বিশাল জনসমাগমকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশি রাজনীতি প্রচারের চেষ্টাও লক্ষ্য করা গেছে মেলায়। র্যাব বিলুপ্তির দাবিতে বিএনপি’র যুক্তরাজ্য শাখা মেলায় আগতদের মধ্যে স্বাক্ষর ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে। র্যাব বিরোধী এই ক্যাম্পেইন আনুষ্ঠানিকভাবে এর আগে শুরু করেছিলেন বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
মেলার এই আনন্দঘন মূহূর্তে রাজনৈতিক ক্যাম্পেইন সম্পর্কে বিএনপি নেতা আবুল হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের সাংগঠনিক কর্মসূচির অংশ হিসেবেই আমরা এই স্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশের মানুষ আজ একটি অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারি শাসনে নিষ্পেষিত হচ্ছে। বর্তমান অবৈধ সরকারের ছত্রছায়ায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী র্যাব আজ জড়িয়ে পড়েছে খুন, গুম ও হত্যার মতো জঘন্য অপরাধে। আমরা এই বিতর্কিত বাহিনীর বিলুপ্তি চাই।এর পক্ষেই আমরা জনমত সংগ্রহে ক্যাম্পেইন চালাচ্ছি মেলায়। মৌলবাদীরাও প্রচার প্রপাগান্ডা চালিয়েছে মেলায় আগতদের মধ্যে। মেলা হারাম, এটি ইসলাম বিরোধী এমন সব লিফলেটও বিলি করতে দেখা গেছে তাদের।
উল্লেখ্য, এপ্রিলের মধ্যভাগে বাংলা নববর্ষ হলেও সুন্দর আবহাওয়ার আশায় লন্ডনে প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে বৈশাখি মেলা উদযাপিত হয়ে আসছিলো। এবার এই মেলা অনুষ্ঠিত হলো জুন মাসে। মেলার মূল খরচ বহন করে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল। ব্রিটেনে যে কয়টি উৎসবকে মূলধারায় স্বীকৃতি দেওয়া হয় বৈশাখি মেলা তারই একটি।