বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়নিজাম হাজারীর আসন কেন শূন্য ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে...

নিজাম হাজারীর আসন কেন শূন্য ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট

ফেনী- ২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর আসন কেন শূন্য ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। অস্ত্র মামলায় সাজা কম খাটার অভিযোগ এনে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খোরশেদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

এছাড়াও নিজাম হাজারীর সাজা কম খাটার বিষয়ে প্রায়োজনীয় নথিপত্র এক মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে কোন কর্তৃত্ববলে নিজাম হাজারী এমপি পদে রয়েছেন তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।

চার সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, আইন সচিব, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, নিজাম উদ্দিন হাজারী, আইজি (প্রিজন) ও সিনিয়র জেল সুপারকে (চট্টগ্রাম) রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সরকার।

পরে মনজিল মোরসেদ জানান, সম্প্রতি প্রথম আলো পত্রিকায় এসেছে, নিজাম উদ্দিন হাজারী একটি অস্ত্র মামলায় সাজা কম খেটেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন।

এছাড়াও সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদে রয়েছে, ‘কোন ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, তিনি যদি নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাঁহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে’।

আর নিজাম হাজারীর ২০০০ সালের ১৬ আগস্ট অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ধারায় ১০ বছর এবং ১৯(চ) ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ড হয়। চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং থানায় হওয়া মামলায় চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল তাকে এ সাজা দিয়েছিলেন। উভয় দণ্ড একসঙ্গে চলবে বলে রায়ে বলা হয়। অর্থাৎ ১০ বছর সাজা ভোগ করবেন নিজাম হাজারী।

সে হিসেবে তিনি ২০১৫ সালের আগে সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য নন। অথচ তিনি সাজাও কম খাটেন আবার সংবিধানও মানেননি। তাই তার এমপি পদ অবৈধ। আদালতে আবেদনটি করেন ফেনীর যুবলীগ নেতা শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া।

ওই পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দুই বছর ১০ মাস কম সাজা খেটেই কারাগার থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ফেনী-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী। অস্ত্র আইনের একটি মামলায় তার ১০ বছর সাজা হয়েছিল’।

২০০০ সালের ১৬ আগস্ট অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ধারায় ১০ বছর এবং ১৯(চ) ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ড হয় নিজাম হাজারীর। চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং থানায় হওয়া মামলায় চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল তাকে এই সাজা দিয়েছিলেন। উভয় দণ্ড একসঙ্গে চলবে বলে রায়ে বলা হয়। অর্থাৎ ১০ বছর সাজা ভোগ করবেন নিজাম হাজারী।

এ আদেশের বিরুদ্ধে নিজাম হাজারী হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। উচ্চ আদালত তার সাজা বহাল রাখেন। সর্বশেষ তিনি রিভিউ আবেদন করলে আদালত তা খারিজ করে দেন।

চট্টগ্রাম কারাগার সূত্র জানায়, নিজাম হাজারী ১৯৯২ সালের ২২ মার্চ কারাগারে যান। কারাগারে যাওয়ার দুই দিন পর (২৪ মার্চ ১৯৯২) তাকে আটকাদেশ (ডিটেনশন) দেওয়া হয়। ওই বছরের ২৮ জুলাই তিনি জামিন পান। কিন্তু তার আটকাদেশ বাতিল হয় ওই বছরের ১৫ আগস্ট এবং ওই দিনই তিনি কারাগার থেকে ছাড়া পান। এ হিসাবে, নিজাম হাজারী কারাগারে ছিলেন ১৯৯২ সালের ২২ মার্চ থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত মোট চার মাস ২৪ দিন।

কোনো মামলায় সাজার আদেশ হওয়ার আগে কারাগারে থাকা সময়কে হাজতবাস এবং সাজা ঘোষণার পরের সময়কে কয়েদ খাটা বলা হয়। নথিপত্রে দেখা গেছে, পলাতক থাকা অবস্থায়ই ২০০০ সালের ১৬ আগস্ট ওই মামলায় নিজাম হাজারীকে সাজা দেন ট্রাইব্যুনাল। ২০০০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এবং তাকে ওই দিনই কারাগারে পাঠানো হয়। তার কয়েদি নম্বর ছিল ৪১১৪/এ। ২০০৫ সালের ১ ডিসেম্বর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। অর্থাৎ, কয়েদি হিসেবে তিনি কারাভোগ করেন পাঁচ বছর দুই মাস ১৭ দিন।

এ হিসাবে হাজতবাস ও কয়েদ খাটা—দু’য়ে মিলে নিজাম হাজারী সাজা ভোগ করেছেন পাঁচ বছর সাত মাস ২১ দিন। তাকে সাজা রেয়াত (মাফ) দেওয়া হয়েছে এক বছর ছয় মাস ১৭ দিন। কারাগারে সর্বনিম্ন নয় মাসে বছর ধরা হয়। তবে কতো মাসে বছর হবে, তা নির্ধারিত হয় কয়েদির আচরণের ওপর ভিত্তি করে।

কারাগারে ঢোকা ও মুক্তি পাওয়ার সময় ধরে নিজাম হাজারী চার মাস ২৪ দিন কারাবাস করেছেন। কিন্তু তার কয়েদি রেজিস্ট্রারের তথ্য হলো, তিনি তিন বছর দুই মাস ২৫ দিন হাজত খেটেছেন।

সূত্র জানায়, নিজাম হাজারীর হাজতি রেজিস্ট্রারের তথ্য কয়েদি রেজিস্ট্রারে স্থানান্তরের সময় তার হাজতবাসের সময় বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। কারাগারের হিসাব বলছে, নিজাম হাজারী দুই বছর ১০ মাস এক দিন কম কারাভোগ করে বেরিয়ে গেছেন।

আদালত সূত্র জানায়, মামলাটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন অবস্থায় আসামি নিজাম হাজারী নানাভাবে কালক্ষেপণের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। বিষয়টি আদালতের নজরে আসে। হাইকোর্টের আপিল আদেশেও বিচারপতি এ কে বদরুল হক ও বিচারপতি এ এফ এম মেছবাউদ্দিন বিষয়টি তুলে ধরেন। ২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল এ দুই বিচারপতির বেঞ্চে নিজাম হাজারীর আপিল শুনানি শুরু হয় (ফৌজদারি আপিল ২৩৬৯/২০০০)। একই বছরের ২ মে তারা ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সাজা বহাল রেখে রায় দেন।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে নিজাম হাজারী সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন (নম্বর ১০৭/২০০১)। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরীর নেতৃত্বে বিচারপতি মো. রুহুল আমিন ও বিচারপতি এফ এম হাসান আপিল নাকচ করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। পরে নিজাম হাজারী সুপ্রিম কোর্টে রায় বিবেচনার জন্য রিভিউ আবেদন করেন (নম্বর ১৮/২০০২)।

তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছের হোসেনের নেতৃত্বে বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম ও বিচারপতি আমীরুল কবির চৌধুরী আবেদন খারিজ করে দেন। ফলে নিজাম হাজারীর ১০ বছরের দণ্ড বহাল থেকে যায়।

হলফনামায় ভিন্ন তথ্য
নিজাম হাজারী ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারি ফেনী পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি যে হলফনামা দাখিল করেন, তাতে তিনি এ মামলায় সাজার তথ্য গোপন করেন। তার হলফনামায় মামলা-মোকদ্দমার ঘরে লেখা হয় ‘খালাসপ্রাপ্ত’। ২০০৬ সালের ১৯ আগস্ট তিনি খালাস পান বলে এতে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু তিনি সাজা খেটে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন ২০০৫ সালের ১ ডিসেম্বর।

পৌরসভার মেয়র পদ থেকে ইস্তফা না দিয়ে গত ৫ জানুয়ারি নিজাম হাজারী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন। এবার হলফনামায় তিনি মামলা-মোকদ্দমার ঘরে লেখেন ‘মামলা নিষ্পত্তি ও মুক্তি’।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ