শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪
প্রচ্ছদটপজরায়ু ক্যান্সার : আগে-পরে যা করণীয়

জরায়ু ক্যান্সার : আগে-পরে যা করণীয়

জরায়ুর মুখের ক্যান্সার cervix তথা জরায়ু মুখের কোষ থেকেই শুরু হয়। জরায়ু মুখের স্কোয়ামাস সেল থেকেই বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া adenocarcinoma ও হতে পারে। পবৎারী হচ্ছে জরায়ু (uterus) এর নিচে সংযুক্ত অংশ এবং যোনির উপরের অংশ। স্তনের ক্যান্সার নিয়ে মানুষের আলোচনার শেষ নেই অথচ জরায়ু মুখ ক্যান্সার সম্পর্কে জানাও অত্যন্ত জরুরি। আপনি কি জানেন, বিশ্বে নারীদের কমন ক্যান্সারের মধ্যে এটি দ্বিতীয় এবং ক্যান্সার জনিত মৃত্যুতে এটি পঞ্চম। বিশ্বে প্রতি দুই মিনিটে এক জন নারী এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। অথচ এর প্রতিরোধ করা সম্ভব একটু সচেতন হলেই।

প্রথমেই জেনে নিন এর কারণ। হিউম্যান পেপিলমা ভাইরাসের কারণে ৯% ক্ষেত্রে মানুষ এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। তাই এটিই প্রধান কারণ। এই ভাইরাসের মধ্যে হাই রিস্ক কিছু স্ট্রেইন আছে যার প্রতিরোধক ভ্যাক্সিন আছে। বাকিগুলোর জন্যে ভ্যাক্সিন নেই। তাই রেগুলার চেক আপে থাকা উচিত, বিশেষ করে চল্লিশ-ঊর্ধ্ব মহিলাদের। কিছু রিস্ক ফ্যাক্টরও এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন- অল্প বয়সে বিয়ে করা, অল্প বয়সে বাচ্চা নেয়া, কোন ব্যক্তির পূর্বের স্ত্রীর এই রোগ হয়ে থাকলে, তার সাথে যৌন মিলন করা, একাধিক ব্যক্তির সাথে যৌন মিলন করা, ঘন ঘন বা অধিক বাচ্চা নেওয়া, ইনফেকশন – এইচআইভি, হিউম্যান পেপিলমা, ক্লামাইডিয়া ভাইরাসে ইনফেকশন, খাবার বড়ি ব্যবহার করা ইত্যাদি।

এই ফ্যাক্টরগুলো একজন নারীর শরীরে ক্যান্সার দানা বাধায় সহায়ক। সঠিকভাবে এই ব্যাপার গুলো এড়িয়ে গেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটা কমে যাবে। নিম্ন বিত্তদের মধ্যে শিক্ষার অভাব থাকে। কিন’ যারা মোটামুটি পড়াশোনা করেছেন এবং স্বাস’্য সচেতন তাদেরকে এসব ব্যাপারে সচেতন হতে হবে এবং আশেপাশের ব্যক্তি এমনকি কাজের মেয়েদেরও সচেতন করতে হবে। একটি জীবন জীবনই এবং তা অনেক মূল্যবান।

প্রতিরোধ

১০ বছরের পর থেকেই এই টিকা নেওয়া যায়। একবার ক্যান্সার হয়ে গেলে ভ্যাক্সিন কোনও কাজে আসে না। তিনটি ডোজ আছে। প্রথমটির এক মাস পরে দ্বিতীয় টিকা এবং তারও পাঁচ অর্থাৎ প্রথমটির ছয় মাস পরে তৃতীয় ডোজের টিকাটি নিতে হবে। ভ্যাক্সিন যে এই ক্যান্সারকে ১০০% ঠেকিয়ে রাখতে পারে না, তা ইতোমধ্যে বলেছি। কিন’ রেগুলার চেক-আপ আসলে কি, ( এই ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ) তা নিশ্চয়ই ভাবনায় ফেলেছে । pap smear নামে একটি টেস্ট আছে যার মাধ্যমে আপনার জরায়ু মুখে ক্যান্সারজনিত কোন পরিবর্তন হলে ডিটেক্ট করা সম্ভব।
এটি একটি স্ক্রিনিং টেস্ট। প্রতি ৩-৫ বছরে একবার করানো ভালো। ২১ বছরের পর থেকেই করা যায়। ৪০ বছরের পর থেকে নিয়মিত করা উচিত, ৫০ এর পর থেকে বছরে একবার করালে আরও ভালো। ভ্যাক্সিন দেয়া থাকলেও টেস্ট করাতে হবে। উন্নত বিশ্বে এর ব্যবহার অনেক বেশি। আগেই কোষে ক্যান্সার হবার মত পরিবর্তন ধরা পরে গেলে লেজার এব্লেশন, ক্রায়ো থেরাপি সহ আরও চিকিৎসার মাধ্যমে এটি প্রতিকার করা যায় আর ক্যান্সার হলে কী করতে হবে আলাদা ভাবে নিচে উল্লেখ করা আছে।

লক্ষণ সমূহ

প্রাথমিক পর্যায়ে কোন লক্ষণ সাধারণত থাকেই না। এই রোগের উল্লেখযোগ্য লক্ষণগুলো হচ্ছে-
১. যোনিপথে রক্তপাত, সহবাসের সময় রক্তপাত বা কন্টাক্ট -এ অর্থাৎ কোন কিছুর স্পর্শে রক্তপাত। ২. যোনিপথে দুর্গন্ধ যুক্ত নিঃসরণ। রোগটি মেটাস্টেসিসের মাধ্যমে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে। Advanced stage- এ পেট, ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়ে এর লক্ষণ আরও বেশি প্রকাশ পায়। ৩. ওজন কমে যাওয়া, ক্ষুধা মন্দা, শরীর অবসন্ন লাগা। ৪. পিঠে ব্যথা , তলপেটে ব্যথা, পায়ে ব্যথা ও পা ফুলে যাওয়া। ৫. কাশি, কাশিতে রক্ত আসা। ৬. ডায়রিয়া, পায়খানার সাথে রক্ত আসা , প্রস্রাবে জ্বালা পোড়া , ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া। ৭. রক্ত শূন্যতায় ভোগা।

জরায়ু মুখ ক্যান্সার ও বাংলাদেশ

২০১০ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর জরায়ু মুখ ক্যান্সারে নতুন করে আক্রান্ত হন ১৩০০০ নারী এবং মারা যান ৬৬০০ জন। সংখ্যাটি নেহায়েত কম নয়। আর দিনের হিসাবে সংখ্যাটিও চমকে দেয়ার মত, গড়ে ১৮ জন। সরকার ভ্যাক্সিন প্রয়োগের জন্য সমাজ সচেতনতা মূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। আশা করা যায় ২০২০ এর মধ্যে জরায়ু মুখ ক্যান্সারে মৃত্যুর হার কমে আসবে।

চিকিৎসা

স্টেজের ওপর ভিত্তি করে একেক স্টেজে একেক চিকিৎসা দেয়া হয়। সার্জারি, রেডিও এবং কেমোথেরাপি এই তিন ধরনের চিকিৎসা দেয়া হয়। সাধারণ কিছু চিকিৎসা মূল চিকিৎসার পাশাপাশি দেয়া হয়। লক্ষণের উপর নির্ভর করে ব্যথানাশক ,এন্টিবায়োটিক , ব্লাড ট্রান্সফিউশন ইত্যাদি। সার্জারির মধ্যে wertheim’s radical hysterectomy, pelvic exenteration উল্লেখযোগ্য। First এবংsecond stage -এ সার্জারি করা হয়। Advanced হয়ে গেলে সার্জারি করে লাভ হয়না কারণ ক্যান্সারের বীজ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। সব স্টেজেই রেডিও থেরাপি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সার্জারি করার অনেক আগেই রেডিওথেরাপি দিয়ে এর সাইজ কমিয়ে আনা হয়। কেমোথেরাপি ডাক্তার প্রয়োজন বুঝে দিয়ে থাকেন। অপারেশনের পরে নিয়মিত ফলোআপ জরুরি। ৩ মাস অন্তর প্রথম ১ বছর , ছয় মাস অন্তর পরের ১ বছর ও এরপর এক বছর অন্তর অন্তর।
আশা করি কিছুটা হলেও বোঝাতে পেরেছি। কেউই আজীবন বেঁচে থাকে না। কিন’ ক্যান্সারের মত করুণ পরিণতি কারও যেন না হয়, তার জন্যেই এই ছোট্ট প্রয়াস। একজনও উপকৃত হলেও ভালো লাগবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ