শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
প্রচ্ছদজাতীয়গ্রেপ্তার নিয়ে চলছে নানামুখী তৎপরতা

গ্রেপ্তার নিয়ে চলছে নানামুখী তৎপরতা

তৎপরতা চলছে নানামুখী। পুলিশের পক্ষ থেকে রক্ষা করা হচ্ছে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে সরকারি মহলে। রাতে এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত গ্রেপ্তার হননি র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা। নারায়ণগঞ্জ সেভেন মার্ডারে জড়িত থাকার অভিযোগে রোববার দুপুর ১টার দিকে তাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আইজিপিকে দেয়া হাইকোর্টের ওই নির্দেশনার কপি ওই রাতেই পৌঁছে যায় পুলিশ সদর দপ্তরে। গতকাল সকালে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে আদেশটি নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের কাছে পাঠানো হয়। জেলা পুলিশ কর্মকর্তারা আদেশ পাওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন। তবে আদেশ কখন পালন করা হবে বা সাবেক তিন র‌্যাব কর্মকর্তাকে কখন গ্রেপ্তার করা হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন গতকাল রাতে বলেন, হাইকোর্টের আদেশ আমরা পেয়েছি। আদেশ পালনের জন্য যা যা করণীয় তা আমরা করছি। এর আগে বিকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, অবসরে পাঠানো র‌্যাবের তিন কর্মকর্তাকে ধরতে আইনি প্রক্রিয়া চলছে। তারা নজরদারিতে আছেন, শিগগিরই গ্রেপ্তার হবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনি প্রক্রিয়া চলছে, মানে আমরা কাজ শুরু করেছি। আমাদের কাছে হাইকোর্টের নির্দেশ আছে। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিতের জন্য আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে কিনা জানতে চাইলে অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এম কে রহমান বলেন, এ ব্যাপারে আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এর আগে দিনভর হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে সরকার বা র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তার আবেদন দায়ের নিয়ে আদালত পাড়ায় গুঞ্জন শোনা যায়। সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আইন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, র‌্যাবের সাবেক এ তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশের পর কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করছে জেলা পুলিশ। সকাল থেকে জেলা পুলিশের সব কর্মকর্তারাই গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলেন। সন্ধ্যার পর দুই-এক জনের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হলেও তারা গ্রেপ্তারের বিষয় নিয়ে কোন কথা বলতে চাননি। তবে জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গতকাল দুপুর থেকে সাত খুনের ঘটনায় গঠিত বিশেষ গ্রেপ্তার অভিযান কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান করছেন। তার নেতৃত্বেই র‌্যাবের সাবেক এই তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের অভিযান পরিচালিত হবে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এদিকে অসমর্থিত একটি সূত্র জানায়, সাবেক তিন র‌্যাব কর্মকর্তাদের নিজেদের হেফাজতে নিতে গতকাল দুপুরে সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ। এসময় জানা যায়, সদ্য বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া দুই সেনাকর্মকর্তা লে. কর্নেল তারিক সাঈদ মাহমুদ ও মেজর আরিফ তাদের নিজ নিজ বাড়িতে থাকলেও নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লে. কমান্ডার রানাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এদিকে, রাতে নিহত পাঁচ পরিবারের সদস্যরা গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্বাস দেন এ ঘটনায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। যে কোন মূল্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হবে। গত ২৭শে এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে অপহৃত হন প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাত জন। তিন দিন পর তাদের লাশ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদীতে। এ ঘটনায় র‌্যাবের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর র‌্যাব ১১-এর সাবেক তিন কর্মকর্তা লে. কর্নেল তারিক সাঈদ মাহমুদ, মেজর আরিফ ও লে. কমান্ডার রানাকে অবসরে পাঠানো হয়। রোববার তাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।

র‌্যাবের ৩ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের আদেশ নারায়ণগঞ্জে
স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, নারায়ণগঞ্জে ৭ হত্যা ঘটনায় চাকরিচ্যুত ৩ র‌্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের আদেশ নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের কাছে এসে পৌঁছেছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় হাইকোর্টের দেয়া আদেশ নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এসে পৌঁছায়। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন আদেশ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আদেশের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। এর আগে রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাইকোর্টের আদেশ আইজিপি বরাবর ফ্যাক্সযোগে পাঠানো হয়।

রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সাত হত্যা ঘটনায় তিন র‌্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আইজিপিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। দণ্ডবিধি বা বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাদের বিরুদ্ধে কোন  অভিযোগ পাওয়া না গেলে এদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে বলেন আদালত। যাদের গ্রেপ্তার করতে বলা হয়েছে তারা হলেন- র‌্যাব-১১’র সাবেক সিও লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এম এম রানা।

নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে সাবেক একজন প্রধান বিচারপতি অথবা আপিল বিভাগের বর্তমান একজন বিচারপতির নেতৃত্বে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা রিট আবেদনের শুনানি শেষ হয় রোববার। এরপর এ আদেশ দেন বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশিদ আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ড. কামাল হোসেন। রোববার সকালে রিট আবেদনটি দায়ের করেন নিহত আইনজীবী এডভোকেট চন্দন সরকারের জামাতা ডা. বিজয় কুমার পাল, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও ‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণ ও খুনের ঘটনায় র‌্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অন্যদের জড়িত থাকার অভিযোগসহ সার্বিক বিষয়ে তদন্তে হাইকোর্টের নির্দেশে গত ৭ই মে কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে গত ৫ই মে এ তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। র‌্যাবের সহযোগিতায় সাতজনকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় ৬ কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ ওঠার পর হাইকোর্টের এ নির্দেশ আসে।
উল্লেখ্য, ২৭শে এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, তার  সহযোগী সিরাজুল ইসলাম লিটন, মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, স্বপনের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইব্রাহিম অপহৃত হন। ৩০শে এপ্রিল বিকালে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ৬ জন ও ১লা মে সকালে একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

র‌্যাবের ২০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশের তদন্ত কমিটি
নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে র‌্যাব-১১ এর অবসরে যাওয়া তিন কর্মকর্তাসহ ২০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশের তদন্ত কমিটি। গতকাল  সকালে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সুব্রত হালদার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত তিন কর্মকর্তা হলেনঃ র‌্যাব-১১ এর সাবেক কমান্ডিং অফিসার (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ, মেজর আরিফ হোসেন এবং নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এমএম রানা।

 সুব্রত হালদার বলেন, এই তিন কর্মকর্তাসহ ২০জন  ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে ওই তিনজন ছাড়া আর কতজনকে এবং কবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তা এখনো ঠিক হয়নি। সময় ও স্থান তাদের জানিয়ে দেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার দিন র‌্যাব-১১ এর  কর্মরত সদস্যদের ডিউটি রোস্টার সংগ্রহ করে সে  অনুযায়ী সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশের উদ্যোগে গঠিত তদন্ত কমিটি। এক্ষেত্রে গাড়িরচালক থেকে শুরু করে অন্য র‌্যাব সদস্যরাও রয়েছেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ