বুধবার, ডিসেম্বর ১১, ২০২৪
প্রচ্ছদফিচারফাতেমা বেগম রেড ক্রিসেন্ট রক্ত কেন্দ্র ঃ মানবতার কল্যাণে এক যুগ

ফাতেমা বেগম রেড ক্রিসেন্ট রক্ত কেন্দ্র ঃ মানবতার কল্যাণে এক যুগ

মানুষ মানুষের জন্য। মানুষের বিপদে মানুষ এগিয়ে আসবে এটাই স্বাভাবিক। মানুষের কল্যাণে কাজ করার লক্ষে এগিয়ে আসার মানুষের একটি অনন্য ধারণা থেকেই ফাতেমা বেগম রেড ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংক এর সৃষ্টি। আর এই অনন্য প্রতিষ্টানের সৃষ্টা হচ্ছেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের একটান প্রায় দশ বছরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব খলিলুর রহমান। তার আরো একটি পরিচয় রয়েছে তিনি চট্টগ্রাম মোট্টেপলিটন চেম্বার সভাপতি ও কে.ডি.এস গ্রুপের কর্ণধার। তিনি অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের পৃষ্টপোষক। তিনি বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রসারের লক্ষে।  তার সরাসরি তত্ববোধানে এবং নের্তৃত্বে তার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বরাবরেই ভাল ফলাফল করে আসছেন। তার ঐকান্তিক ইচ্ছায় প্রতিষ্ঠিত হয় ফাতেমা বেগম রেড ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংক। যাহা কেউ কখনো চিন্তাই করেনি, তার সুপ্ত প্রতিভা ও মানব কল্যাণের প্রেরণা থেকে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন এই ব্লাড ব্যাংক। এই রক্ত কেন্দ্রের মাধ্যমে অসহায়, দুস্থ, হতদরিদ্র মানুষের পাশাপাশি সমাজের বৃত্তবানরাও প্রযোজনীয় রক্ত সংগ্রহ করে যাচ্ছে বিগত ১২ বছর ধরে। কারণ রক্ত কোন ফ্যাক্টরীতে উৎপাদন হয় না কেবলমাত্র একজন মানুষের প্রয়োজনে আরেক জন মানুষই পারে রক্ত দিতে ।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট পরিচালিত ফাতেমা বেগম রেড ক্রিসেন্ট রক্ত কেন্দ্রের ১২ বছরে তথা এক যুগ সফলভাবে সমাপ্ত করে ১৩ বছরে পর্দাপন করেছেন। ২০০০ সালে ৭ জুন থেকে এর কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জাতীয় সদর দপ্তরের সহয়োগিতায় এবং চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও কেডিএস গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যান আলহাজ্ব খলিলুর রহমানের একান্ত চেষ্টায় চালু হয় রেড ক্রিসেন্ট রক্তদান কেন্দ্র। আলহাজ্ব খলিলুর রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও আর্থিক অনুদানের ফলে এই ব্লাড ব্যাংকটি চালু করা সম্ভব হয়। তার এই গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বকৃতি স্বরূপ জেলা ইউনিটের কার্যকরী পর্ষদের সর্বসম্মতি সিদ্ধান্তক্রমে আলহাজ্ব খলিলুর রহমানের মায়ের নামে এই রক্ত কেন্দ্রের নাম রাখা হয় “ফাতেমা বেগম রেড ক্রিসেন্ট রক্ত কেন্দ্র”।
রক্ত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠাতা প্রসংগে জানতে চাইল কে.ডি.এস গ্রুপের কর্ণধার ও তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব খলিলুর রহমান বলেন, রক্তের চাহিদা, সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা চিন্তা করে এবং সেবার মনমানসিকতা থেকে এই রক্ত কেন্দ্র চালু করেছিলাম। আমার ইচ্ছে ছিল রক্ত কেন্দ্রের সামনে একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা কিন্তু বিভিন্ন পারির্পাশিক কারণে তা আর হয়ে উঠে নাই। আমি আমার ব্যাক্তিগত অর্থ দিয়ে হাসপাতালের অনেক উন্নয়নের কাজ করেছিলাম। আমি ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার পরে হাসপাতালে ডাক্তার সহ অন্যন্য কর্মকর্তা কর্মচারী সংখ্যা বাড়েয়েছি ফলে হাসপাতালের সেবা মান অনেক গুন বেড়ে গিয়েছিল ফলে হাসপাতালটি সাধারণ মানুষের আশা আঙ্খাকার কেন্দ্র বিন্দ্রতে পরিনিত হয়েছিল।
প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে আজ অব্দি সাধারণ  মানুষের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন “ফাতেমা বেগম রেড ক্রিসেন্ট রক্ত কেন্দ্র”। অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে “ফাতেমা বেগম রেড ক্রিসেন্ট রক্ত কেন্দ্র” আজ পরিপূর্ণ। আছে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন মেশিনসহ নানা যন্ত্রাংশ। ফলে অত্যান্ত কম খরছে উন্নত সেবা পাচ্ছে চট্টগ্রামবাসী তথা চট্টলার সাধারণ জনসাধারণ। চট্টগ্রামে যে পরিমাণ রক্তের চাহিদা তার সিংহভাগ যোগান দিচ্ছেন “ফাতেমা বেগম রেড ক্রিসেন্ট রক্ত কেন্দ্র” একাজে সবসময় সহয়োগিতা করে যাচ্ছেন যুব রেড ক্রিসেন্ট চট্টগ্রাম। জনসাধারণে সুবিধার কথা বিবেচনা করে ব্লাড ব্যাংকটি ২৪ঘন্টা খোলা রাখা হয়। এই রেড ক্রিসেন্ট রক্তদান কেন্দ্রের মাধ্যমে রক্তদান করলে রক্তদাতার রক্তের পাঁচটি পরীক্ষা সম্পূর্ণ বিনা খরছে করে দেওয়া হয়। যাহা কোন ডায়গোনেসটি সেন্টারে করলে খরচ লাগবে প্রায় ৩০০০-৩৫০০ (তিন হজার – তিন হাজার পাঁচশত টাকা পর্যন্ত) যেসব পরীক্ষা বিনা মূল্যে করে দেওয়া হয় সেগুলো হল এইচআইবি/এইডস, হেপাটাইটিস বি,  হেপাটাইটিস সি, ম্যালেরিয়া ও সিফিলিস। তাছাড়া রক্তের গ্রুপও নির্ণয় করা হয়।

রোগীদের প্রয়োজনে যেকোন সময় সেবা গ্রহন করা যায় এই রক্ত কেন্দ্র থেকে।  “ফাতেমা বেগম রেড ক্রিসেন্ট রক্ত কেন্দ্র” প্রতিদিন গড়ে ১৫০-২০০ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ ও সরবরাহ করে থাকে। অত্যান্ত কম খরছে রোগীদের চাহিদামত বিভিন্ন ধরনের  (হোল্ড ব্লাড, প্যাটিল্যাট, পেক্সল,) রক্ত সরবরাহ করে যাচ্ছে এই সেবা কেন্দ্রটি। যেহেতু রেড ক্রিসেন্ট একটি আর্ন্তজাতিক সেবা সংগঠন তাই শুধুমাত্র সার্ভিস চার্জই নেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে। কোন ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে এটি পরিচালিত হয় না। শুধুমাত্র সেবার মানসিকতা নিয়ে জনসাধারণের কল্যণের লক্ষে পরিচালিত হয় এই অলাভজনক সেবমূলক প্রতিষ্ঠানটি। এই রক্ত কেন্দ্রেটি বিগত ১২ বছর ধরে চট্টগ্রাম ও এর আশপাশের মানুষের নিরালসভাবে সেবা করে যাচ্ছে। আর একাজে  সবসময় সহযোগিতা করে আসছেন যুব রেড ক্রিসেন্ট চট্টগ্রামের যুব সদস্যরা।
রক্তের সীমাহীন চাহিদা পূরণের জন্য নিজে নিয়মিত সেচ্ছায় রক্তদান করা এবং সেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী গ্রহন একটি কার্যকরী উদ্যেগ হতে পারে। তাছাড়া নাগরিক সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য এ বিষয়ে প্রচার পত্র প্রকাশ করা, উদ্ভোদ্ধকরণ স্টিকার প্রকাশ, পাবলিক প্লেসে লিপলেট বিতরণ, বিভিন্ন সময় সেমিনার করা মতো সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, করপোরেট অফিসে রক্তদান কর্মসূচীর আয়োজন করতে পারে। যাহা যুব রেড ক্রিসেন্ট চট্টগ্রাম নিয়মিত করে আসছে। ফাতেমা বেগম রেড ক্রিসেন্ট রক্তদান কেন্দ্র  চট্টগ্রামসহ  সারা দেশের রক্তের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন সুদীর্ঘ এক যুগ ধরে। যাহা অন্যদের জন্য অনুসরণ ও অনুকরণীয় হতে পারে।

লেখকঃ ফখরুল ইসলাম চৌধুরী পরাগ, যুব উপপ্রধান, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, যুব রেড ক্রিসেন্ট, চট্টগ্রাম। ফোন ০১৮১৯-৬১৫০৩৪blood bank

 

আরও পড়ুন

সর্বশেষ