বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪
প্রচ্ছদইন্টারভিউযুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথিতেও ‘রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব’

যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথিতেও ‘রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব’

ষ্টাফ  রিপোর্টার  (বিডিসময়২৪ডটকম)

ঘটনাক্রমে হলেও বাংলাদেশের জন্য সময়োপযোগী কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত ৩১ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর প্রকাশ করেছে এক গাদা গোপনীয় রাষ্ট্রীয় নথি (ক্লাসিফায়েড ডকুমেন্টস)। এসব নথিতে ‘শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

১৯৬৯-এর তদানীন্তন পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশের ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত সময়ের তথ্য রয়েছে এই নথিতে। ‘ভল্যুম আপডেট’ নাম দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক যাবতীয় কার্যক্রমের গোপনীয় দলিল-দস্তাবেজ প্রকাশ করেছে এতে।

ওই সময়ে যেসব তথ্য গোপনে সংগ্রহ বা আদান-প্রদান করা হতো সে-সবই প্রকাশিত হয়েছে এসব নথিতে। এর মধ্যে বিশেষ করে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়সহ সে-সময়কার বিশ্বের যাবতীয় কূটনৈতিক বিষয়সহ সিআইএ’র বিভিন্ন নথিও প্রকাশ পেয়েছে।

বাংলাদেশ বিষয়ে সে-সময়ে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারসহ ‘ওয়াশিংটন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের প্রতিটি বৈঠক ও প্রতিদিনের ঘটনাপঞ্জি, টেলিফোন কথোপকথন, টেলিগ্রাম বার্তার হুবহু বর্ণনা রয়েছে এসব নথিপত্রে। পররাষ্ট্র দফতরের প্রকাশিত এই গোপনীয় দলিলগুলোর অন্তত একটিতে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উল্লেখ রয়েছে।

৭৭ নং নথিতে দেখা গেছে ২২ জুন ১৯৭১ তারিখে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে একটি টেলিগ্রাম-বার্তা পাঠায়। ১১০৯৭৮ নম্বরের এই বার্তাটির বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয় ‘বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া বিষয়ক যোগাযোগ’ (‘’subject: Communication concerning recognition of Bangladesh’’) কথাটি।

টেলিগ্রাম বার্তাটিতে বলা হয়, “মুজিবনগর” ২৪ এপ্রিল ১৯৭১, ডেটলাইনে প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো একটি নথি পররাষ্ট্র দফতর হাতে পেয়েছে। এই নথিতে “সার্বভৌম স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ”-কে অনতিবিলম্বে স্বীকৃতি দেওয়ার এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের অনুরোধ রয়েছে। নথিটি স্বাক্ষর করেছেন ‘অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি’ সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী’ খন্দকার মোশতাক আহমেদ।

টেলিগ্রামে আরও উল্লেখ করা হয়, এই নথিতে ১০ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে ‘স্বাধীনতা ঘোষণা’র একটি ঘোষণাপত্রও সংযুক্ত করা হয়েছে। যাতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বলেছেন- পূর্ব-পাকিস্তানের জন্য গৃহীত আইনগুলো দিয়েই “বাংলাদেশ” এবং “প্রেসিডেন্ট” শেখ মুজিবুর রহমানসহ বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা পরিচালিত হবে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ১৯৭১ সালের ২৬ মে তারিখের ডাকসিল সম্বলিত এই নথিগুলো পশ্চিম বার্লিন থেকে সাধারণ এয়ারমেল যোগে পাঠানো। নথিগুলোকে প্রকৃত মনে না করার কোনো কারণ নেই এমন মন্তব্য রেখে টেলিগ্রামে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ আন্দোলনের কর্মকর্তাদের তরফ থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের স্বীকৃতি চেয়ে এটিই প্রথম কোনো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ। এবং এর খুবই স্পর্শকাতর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা (ইমপ্লিকেশন) রয়েছে।

সেকারণে, যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই পূর্ব পাকিস্তানকে আমাদের কাছে স্বীকৃত পাকিস্তানের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে যাবে এবং পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখে বিদ্যমান সঙ্কটের রাজনৈতিক সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাবে। তবে নথিপত্রগুলোর কারণে আমাদের পক্ষে একথা অব্যাহতভাবে প্রকাশ্যে বলে যাওয়া কঠিন হবে যে, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের পক্ষে স্বীকৃতি চেয়ে কোনো অনুরোধ আমাদের হাতে আসেনি।

সেদিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি তো দূরের কথা এমন একটি অনুরোধ প্রাপ্তির কথাই স্বীকার করতে চায়নি। এ বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে পররাষ্ট্র দফতর থেকে সদ্য  প্রকাশিত গোপনীয় নথিপত্রে। পাকিস্তান দূতাবাসে পাঠানো টেলিগ্রামে সে-কথাটিরও উল্লেখ ছিলো। ডকুমেন্টটি  রেকর্ড সার্ভিসেস ডিভিশনে নথিভুক্ত করার আনুষ্ঠানিক নির্দেশনাও দিয়েছিলো পররাষ্ট্র দফতর।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ