মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনপটিয়া ও লোহাগাড়ায় উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন

পটিয়া ও লোহাগাড়ায় উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন

চট্টগ্রাম অফিস (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

দ্বিতীয় দফা উপজেলা নির্বাচনে চট্টগ্রামের পটিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবমুখর পরিবেশে  শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। তবে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিত পাওয়া লোহাগাড়া উপজেলায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতির আশংকা করছে প্রশাসন।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) নাজমুল হাসান  বলেন, আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে লোহাগাড়াকে আমরা বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছি। তবে পটিয়াকেও কম গুরুত্ব দিচ্ছিনা। অনেক সময় দেখা যায়, কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়ও বড় ঘটনা ঘটে গেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভোটগ্রহণের জন্য লোহাগাড়া ও পটিয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তিন হাজার সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে।

পটিয়ায় প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ৫ জন পুলিশ, ১০ জন আনসার, গ্রাম পুলিশ, চৌকিদার ও দফাদার মিলিয়ে ১৮ জন করে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে। লোহাগাড়ায় প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বে থাকবে ২০ জন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য।

এছাড়া সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মূল সড়কে টহল দেবে। জেলা পুলিশ ও এপিবিএন মিলিয়ে দু’প্লাটুন করে রিজার্ভ পুলিশ পটিয়া ও লোহাগাড়া থানায় রাখা হবে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) নাজমুল হাসান বলেন, প্রতি চার কেন্দ্রের জন্য পুলিশের একটি করে মোবাইল টিম নিয়োজিত থাকবে। তবে লোহাগাড়ায় কেন্দ্রভিত্তিক টহল জোরদার থাকবে।

পটিয়া ও লোহাগাড়ায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোট ২৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, এলডিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আদালতের রায়ে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতের প্রার্থীও আছে এ নির্বাচনে।

পটিয়ায় লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি
পটিয়ায় চেয়ারম্যান পদে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে মূল লড়াই হবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী নাছির আহমদ (কাপ-পিরিচ), বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরী টিপু (আনারস) এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী দক্ষিণ জেলা আ’লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান তিমির বরণ চৌধুরীর (মোটর সাইকেল) মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ছনহরা ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন (টেলিফোন) এবং এলডিপি মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আলী (ঘোড়া) থাকলেও তারা ইতোমধ্যে বিএনপির প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী চরলক্ষ্যা ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী (চিংড়ি মাছ) ও অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম এফ আইয়ুব (দোয়াত কলম)।

এদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সেলিম চৌধুরী (টিয়ে পাখি), দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সদস্য আবু ছালেহ মোহাম্মদ শাহরিয়ার (চশমা), বিএনপি মনোনীত প্রার্থী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মোজাম্মেল হক (টিউবওয়েল), হেফাজত ইসলামের ব্যানারে প্রচারণা চালানো প্রার্থী আনোয়ার হোসেন রব্বানী (মাইক), বিএনপি সমর্থিত জাহাঙ্গীর আলম (উড়োজাহাজ), ইসলামী ফ্রন্ট প্রার্থী এয়ার মোহাম্মদ পেয়ারু (বই), পটিয়া নাগরিক কমিটির প্রার্থী (জামায়াত) জামাল উদ্দিন (তালা) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা বেগম শিরু (প্রজাপতি), আওয়ামীলীগ সমর্থিত সাজেদা বেগম (পদ্মফুল), বিএনপি সমর্থিত আফরোজা বেগম জলি (হাঁস) এবং আওয়ামলীগ সমর্থিত বানেজা বেগম (কলসী) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপি সংরক্ষিত আসনে জলিকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা দিলেও আওয়ামীলীগ এ আসনে কোন প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেয়নি।

পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকেয়া পারভিন বলেন, পটিয়ায় ২২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলিয়ে ১৩০টি কেন্দ্রে মোট বুথ আছে প্রায় এক হাজার। মোট ভোটার তিন লক্ষ ৪৬ হাজার ৮’শ ৪৬ জন। ভোটগ্রহণের জন্য অধিকাংশ কেন্দ্রে ইতোমধ্যে নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছে গেছে বলে তিনি জানান।

এছাড়া ১৩০টি কেন্দ্রের জন্য ১৩০ জন প্রিসাইডিং অফিসার, এক হাজার সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন বলে তিনি জানান।

লোহাগাড়ায় জামায়াত ঠেকাতে আ’লীগ-বিএনপি-এলডিপি একাট্টা 

লোহাগাড়া উপজেলায় প্রার্থীর সংখ্যা ১০ জন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান ৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ৪ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ৩ জন। চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা হলেন-বিএনপির সমর্থক মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী শাওন (কাপ-পিরিচ), বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এলডিপির সমর্থক জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল (দোয়াত-কলম) ও জামায়াত সমর্থক এডভোকেট ফরিদ উদ্দীন খান (আনারস)।

এ উপজেলায় আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী নেই। জামায়াত ঠেকাতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাংশ এলডিপি প্রার্থী জিয়াউল হক চৌধুরীকে সমর্থন দিয়েছে।

এছাড়া উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা হলেন- জামায়াতের সমর্থক নুরুল আবছার (তালা), আওয়ামী লীগের সমর্থক নিবাস দাশ সাগর (টিয়া পাখি), বিএনপির সমর্থক এসএম ছলিম উদ্দীন খোকন চৌধুরী (উড়োজাহাজ) ও এলডিপির সমর্থক মামুনুর রশিদ (চশমা)।

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের সমর্থক পারভীন আক্তার (প্রজাপতি), জামায়াতের সমর্থক গুলশান আরা বেগম (কলস) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদা ইয়াছমিন (হাঁস)।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে ৫৯টি কেন্দ্রে বুথের সংখ্যা ৫০০। নির্বাচনে মোট ১৬‘শ কর্মকর্তা-কর্মচারি দায়িত্ব পালন করবেন। এরমধ্যে ৫৯ জন প্রিসাইডিং, ৫০০ জন সহকারী প্রিসাইডিং ও এক হাজার পোলিং অফিসার নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন। লোহাগাড়ায় ৫৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৯টি কেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফিজনুর রহমান  বলেন,সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে প্রিজাইডিং অফিসারদের মাধ্যমে প্রতিটি কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা ইতিমধ্যে মাঠে নেমে গেছেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ