বৃহস্পতিবার, মে ৯, ২০২৪
প্রচ্ছদচট্রগ্রাম প্রতিদিনফের স্থগিতাদেশ, নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাটারিচালিত রিকশা

ফের স্থগিতাদেশ, নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাটারিচালিত রিকশা

চট্টগ্রাম অফিস (বিডি সময় ২৪ ডটকম)

স্থগিতাদেশের পর স্থগিতাদেশের কারণে নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশার দৌরাত্ম্য থামানো যাচ্ছে না। আবারও ছয় মাসের জন্য হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ মিলেছে নগরীতে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত রিকশা উপর। এই সুবাদে এক বছরের ব্যবধানে যান্ত্রিক এই বিপজ্জনক যানের সংখ্যা অর্ধলক্ষাধিক ছাড়িয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা গ্যারেজগুলোতে বৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল রাতারাতি  নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

খবর নিয়ে জানা গেছে, এক বছরের ব্যবধানে নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অর্ধলক্ষাধিক। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ রিকশাই রাস্তায় নেমেছে আদালতে স্থগিতাদেশ নেয়ার পর।

এদিকে, যান্ত্রিক যান হওয়ায় বিআরটিএ থেকে অনুমোদন নেয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল ব্যাটারিচালিত রিকশার। কিন্তু সেখান থেকে অনুমোদন না পাওয়ায় ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিকেরা সিটি কর্পোরেশনের কাছে রাস্তায় নামার অনুমতি প্রার্থনা করে। কিন্তু যান্ত্রিক যানের অনুমোদন দেয়ার বিধান না থাকায় কর্পোরেশন এ ব্যাপারে অপারগতা জানায়। এই অবস্থায় চট্টগ্রাম ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা সমিতির সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসমাল সাজু গত বছরের ১৪ মার্চ রিকশার বিরুদ্ধে হয়রানি না করতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ পায়। মুলত এর সুযোগ নিয়েই শুরু হয় ব্যাপকভাবে ব্যাটারিচালিত রিকশা তৈরি ও চলাচল। খবর নিয়ে যানা যায়, এরপর থেকে এ পর্যন্ত তিন দফা স্থগিতাদেশ নেয় বিভিন্ন পক্ষ। সর্বশেষ চলতি বছরের গত ১২ জানুয়ারি পুনরায় হাইকোর্ট থেকে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোর ৪ থেকে ৫টি সমিতি রয়েছে। প্রতিটি সমিতিতে প্রায় সাড়ে ৮ থেকে ১০ হাজার রিকশা রয়েছে। এসব রিকশা চলাচলের জন্য সিটি কর্পোরেশন বা সংশ্লিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠান থেকে রুট পারমিট বা অনুমতি নেই। এছাড়া সমিতির অন্তর্ভূক্ত ছাড়াও অনেক রিকশা রয়েছে যেগুলোরও কোন লাইসেন্স নেই।

জানতে চাইলে সিটি কর্পোরেশনের পরিবহন শাখার প্রধান পরিদর্শক হাসান ওসমান গণি বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশাকে কর্পোরেশন থেকে কোন লাইসেন্স দেয়া হয়নি। এগুলো হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ নিয়ে চলাচল করছে। সিটি কর্পোরেশন শুধু অযান্ত্রিক রিকশার লাইসেন্স দিতে পারে। যান্ত্রিক যানের লাইসেন্সের ব্যাপারে করণীয় জানতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। যান্ত্রিক পরিবহনের লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, তারাও এ রিকশাগুলোকে কোন অনুমোদন দেয়নি।

এদিকে এক হিসেবে দেখা গেছে, নগরীতে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো দৈনিক ৮০ মেগাওয়াট থেকে ১শ মেগাওয়াটের মত বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে রিকশার ব্যাটারির চার্জ দেওয়া হয়। হাতেগোণা যেসব গ্যারেজে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়া হয়েছে, সেগুলোও আবাসিক গ্রাহক দেখিয়ে সংযোগ নিয়েছে। গণপরিবহণের সংকটের সুযোগ নিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রাতারাতি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ইতিমধ্যে শতাধিক রিকশার গ্যারেজ গড়ে ওঠেছে। এরমধ্যে পিডিবি’র আগ্রাবাদ বিক্রয় ও বিতরণ এলাকার আওতাধীনেই ছোট বড় মিলিয়ে ৪০টির মতো গ্যারেজ রয়েছে।

নগরীর হাজীপাড়া ও গোসাইলডাঙ্গা এলাকার একাধিক রিকশার গ্যারেজের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বলেন, রিকশা চার্জ দেওয়ার জন্য মূল বিদ্যুৎ লাইন থেকে হুক দিয়ে লাইন নিয়েছি। এটি দিয়ে রাতে রিকশা চার্জ করা হয়। অপর এক গ্যারেজ মালিক জানান, পিডিবি’র লোকেরা মাসিক ভিত্তিতে টাকা নিয়ে যান। সমস্যা হলে তারা আগাম জানিয়ে দেন। আমরা সাথে সাথেই লাইন খুলে ফেলি।

খবর নিয়ে জানা যায়, ব্যাটারিচালিত রিকশায় অবৈধ বিদ্যুত ব্যবহারের খবর বের হলে বিদ্যুৎ বিভাগ দু’একটি লোকদেখানো অভিযান চালান। তারপর আবার ঘুমিয়ে যান। বিদ্যুৎ বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা- কর্মচারিরাই অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারে গ্যারেজ মালিকদের প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে যেহেতু ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিভাগ এ ব্যাপারে বিকল্প ভূমিকা রাখতে পারে। ব্যাখ্যা করে তারা বলেন, রিকশার গ্যারেজসমূহে বিদ্যুৎ ব্যবহারের উৎস ও বৈধতা খতিয়ে দেখতে বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করে পিডিবি যদি অভিযান অব্যাহত রাখে তাহলে ব্যাটারিচালিত রিকশার দৌরাত্ম্য বন্ধ হতে বাধ্য। কারণ, ব্যাটারি চার্জ দিতে হলে বিদ্যুতের সেই সংযোগ বাণিজ্যিক বিল হিসেবে গণ্য হবে। অর্থাৎ বৈধ সংযোগ নিয়ে ব্যাটারি চার্জ দিলে মালিককে বাণিজ্যিক বিল পরিশোধ করতে হবে। আবাসিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি এই বাণিজ্যিক বিল পরিশোধ করে রিকশা মালিকেরা পোষাতে পারবেন না। তারা এমনিতেই ব্যবসা থেকে সরে যেতে বাধ্য হবেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ